Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


অবিলম্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাসের দাবি চিকিৎসকদের

Main Image

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের অগ্রগতি ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে চিকিৎসকদের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক সেমিনার


হৃদরোগ, স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার। তামাকব্যবহার জনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ অকালে মারা যায়। তাই মৃত্যু কমানো এবং তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে অবিলম্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি পাস করার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

 

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের অগ্রগতি ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে চিকিৎসকদের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এ দাবি জানান।

 

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে আশঙ্কাজনকভাবে ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব ৩ কেটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন (গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে)। একইসঙ্গে ধূমপান না করেও বিভিন্ন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে প্রতিনিয়ত পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। এসব দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সুরক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের লক্ষ্যে ৯ জন উপদেষ্টা ও তিনজন সচিবের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করেছে। আমাদের দাবি, অধূমপায়ীদের সুরক্ষা ও তামাকের স্বাস্থ্য ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে অতিদ্রুত আইনটি পাস করা হোক।

 

এতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে পরিবারের অর্থনীতি ঠিক থাকে। বাংলাদেশের প্রধান সমস্যার মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে সমাজের কোনো অংশেই অবদান রাখা যায় না। তাই তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এখনই বিদ্যমান তামাক আইন সংশোধনের তাগিদ দেওয়া হয়।

 

সেমিনারের প্রধান অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, তুলনামূলক সহজলভ্য হওয়ায় আমাদের দেশে তামাক সেবনের হার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর চেয়ে বেশি। তামাকজনিত মৃত্যু আমাদের আতঙ্কিত করে তুলছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে দুটি হাতিয়ার একটি আইন, অন্যটি ট্র্যাক্স বৃদ্ধি করা। ট্র্যাক্স বাড়ানো হলে তামাকের ব্যবহার কমে আসে। এজন্যই তামাক কোম্পানি সবসময় আইন তৈরিতে ও ট্র্যাক্স বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। এ অবস্থায় অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় প্রদান এবং নতুন প্রজন্মকে তামাকের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচাতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাস করতে হবে।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। এসিডিজির অভীষ্ট ৩.৪ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগের কারণে অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এটি অর্জনে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন এফসিটিসির আলোকে সংশোধন করা প্রয়োজন।

 

সভাপতির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক বলেন, নিকোটিন শিশু-কিশোর ও তরুণদের মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে; মূলত মস্তিষ্কের সেই অংশে যা মনোযোগ, নতুন কিছু শেখা, মেজাজ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী। তাই আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে এখনই বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে।

 

সেমিনারে আইনটিকে বৈশ্বিক মানদন্ডে উপনীত করতে ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ট্যোবাকো কন্ট্রোল–এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে। সেগুলো হলো– সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রর্দশন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং ট্যোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।

 

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মসূচি পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) শেখ মোমেনা মনি ও মহাপরিচালক মো. আখতারউজ-জামান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, বিসিআইসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের এন্টি-টোব্যাকো অ্যাডভোকেসির মেম্বার সেক্রেটারি ডা. মুহাম্মদ সাখাওয়াত হোসাইনসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন