ডা. ফরহাদ হোসাইন
মেডিকেলে যারা এবার চান্স পেলে তাদের জন্য কিছু পরামর্শ (যেকোন বর্ষের শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে) --
১. একটা ল্যাপটপ অবশ্যই কিনবে Anki তে ফ্ল্যাশকার্ড তৈরী করে পড়ার জন্য। উন্নত দেশের ছাত্ররা ফ্ল্যাশকার্ড দিয়ে পড়াশুনা করে। কারণ Anki দিয়ে Spaced Repitition পদ্ধতি অনুসরণ করে পড়াশুনা করা যায়। এটা সায়েন্টিফিক্যালি ভ্যালিড ও ইফেক্টিভ মেথড।
মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর আমি ল্যাপটপ কিনেছিলাম। কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে Anki সম্পর্কে জানতে পারি ফোর্থ ইয়ারে। তবে আলসেমি করে ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার করিনি তখন৷
অবশ্য এফসিপিএস পার্ট ওয়ানের সময় ফ্ল্যাশকার্ড ছিল আমার মেইন রিভিশন টুল।
২.
ইউটিউবে Anki এর টিউটোরিয়াল দেখে প্রতিদিনের পড়া দিয়ে ফ্ল্যাশকার্ড তৈরী করবা। এখন অনেক ফ্ল্যাশকার্ড ফ্রেন্ডলি স্মার্ট টুল আছে যেমন- OCR, Google লেন্স। ক্লাসের করা কোন ইংরেজি/বাংলা নোট সহজেই স্ক্যান করে টেক্সটে কনভার্ট করা যায়। সেটা পরবর্তীতে ল্যাপটপে মেইল বা ওয়াটসএপের মাধ্যমে নিয়ে ফ্ল্যাশকার্ড তৈরী করা যায়। কোন বইয়ের পিডিএফ না থাকলেও একই পদ্ধতি ব্যবহার করে ফ্ল্যাশকার্ড তৈরী করা যাবে।
৩. যেকোন টাইম রেকডিং এপ ব্যবহার করবে। আমি Focus To Do এপ ব্যবহার করি। ফাইনাল প্রফের সময় Flip নামের এপ ব্যবহার করে ছিলাম।
এই ধরনের এপে Pomodoro Timer সেট করে স্টাডি সেশন ঠিক করতে পারবে। অনেকে বলে যে সে দিনে ৬-৭ ঘন্টা পড়ে। অথচ টাইম রেকডিং করলে দেখা যায় সেটা সর্বোচ্চ ৩-৪ ঘন্টা হয়।
মেডিকেলে প্রতিদিন ৩-৪ ঘন্টা পড়লেই যথেষ্ট (আমি ফাঁকিবাজ ছিলাম, এত পড়তাম না)।
৩-৪ ঘন্টা অনেকের কাছে কম সময় মনে হলেও টাইম রেকডিং এপ ব্যবহার করলে দেখা যায়, এই ৩-৪ ঘন্টা পড়াই অনেক কষ্টসাধ্য বিষয়।
৪. টেক্সটবুক পড়া উচিত অবশ্যই। তবে তার মানে এই না যে,গল্পের বইয়ের মত টেক্সটবুকের A to Z পড়া লাগবে৷ গুরুত্বপূর্ণ টপিকসগুলো বুঝে পড়লেই যথেষ্ট।
মেডিকেলে মুখস্থ বিদ্যা বেশি, তাই মেডিকেল স্টুডেন্টরা মুখস্থ ছাড়া কিছু পারে না-- এটা খুব কমন একটা মিসকনসেপশান।
"Memory is the mother of all wisdom"
একটা জটিল বিষয় বুঝতে গেলে সে বিষয় সম্পর্কিত কিছু টার্ম অবশ্যই মাথায় রাখতে হয়, না হলে বুঝা যায় না। এজন্য যারা কোন কিছুই মুখস্থ করতে চায় না,তার জ্ঞানও অর্জন করতে পারে না।
৫. ইংলিশ রিডিং স্কিল বাড়াতে হবে। মেডিকেলে ভর্তির আগে আমি অনেক বাংলা ভাষার বই পড়েছি৷ এজন্য বাংলা লেখা পড়া বা লেখা তেমন কঠিন মনে হত না৷
কিন্তু মেডিকেলে ভর্তির পর হাতে-গোনা কয়েকটা বাংলা বই পড়েছি। বেশিরভাগই ইংরেজি বই পড়া হয়েছে। এজন্য এখন বাংলা লিখতেও কষ্ট হয়।বাংলা ভোকাবুলারি দুর্বল হয়ে যাওয়ায়, অনেক সময় বাংলা লিখতে গেলে শব্দ খুঁজে পাই না।
ইংলিশ রিডিং স্কিল বাড়াতে হলে এখন থেকেই ইংরেজি ফিকশন/ননফিকশন বই পড়া শুরু করে দাও। পড়তে গিয়ে বার বার ডিজিটাল ডিকশনারি খোলার দরকার নেই।
পড়তে পড়তে দেখবা তোমাদের Contextual Guessing নামের একটা স্কিল ডেভেলপ হয়েছে।পড়ার সময় যখন কোন অপরিচিত শব্দ সামনে আসবে, তখন সে শব্দের আশেপাশে বাক্যের অর্থ ও কন্টেক্সটকে ব্যবহার করে অপরিচিত শব্দের অর্থ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। এটাই হচ্ছে Contextual Guessing।
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্কিল যা ভবিষতে তোমাদের কাজে লাগবে। যেকোন টপিক সম্পর্কে দ্রুত ধারণা পেতে এই স্কিল সাহায্য করবে।
শেষকথা :
মেডিকেল লাইফের জার্নি খুবই কষ্টের মনে হবে যদি মনের মধ্যে শুধুমাত্র টাকা কামাই করার ইচ্ছে থাকে। জ্ঞান অর্জনকে ভালবাসতে পারলে, এই কষ্টের জার্নি অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
লেখক:
ডা. ফরহাদ হোসাইন
এমবিবিএস (এফএমসি), এফ-২৪
এফসিপিএস পার্ট-১ (মেডিসিন)
ই-মেইল: doctorfarhad.sbf@gmail.com
আরও পড়ুন