Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


শেবাচিমে চক্ষু বিভাগের ল্যাসিক যন্ত্র ছয় বছর ধরে নষ্ট

Main Image

শেবাচিমে চক্ষু বিভাগের ল্যাসিক যন্ত্র বিকল হয়ে আছে


বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের চক্ষু বিভাগের অত্যাধুনিক ল্যাসিক মেশিনটি দীর্ঘ ছয় বছর ধরে বিকল হয়ে আছে। ফলে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বরিশাল বিভাগসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলার প্রায় দেড় কোটি মানুষ। শুধু ল্যাসিক মেশিনই নয়; এখানে চোখের ছানি অপারেশনের ফ্যাকো মেশিনটিও সাত মাসের অধিক সময় ধরে বিকল অবস্থায় আছে। এসব কারণে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এই হাসপাতালে চোখের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা হতাশ হয়ে ফিরছেন। সূত্রঃ দৈনিক জনকণ্ঠ। 

হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তুত করা লেজার অ্যাসিস্টেড ইন সিটু কেরাটমাইলিউসিস সংক্ষেপে ‘ল্যাসিক’ মেশিনটি বাংলাদেশের সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর ডিপার্টমেন্ট (সিএমএসডি) থেকে ২০১৩ সালের ২৯ জুন শেবাচিম হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে সরবরাহ করা হয়। এসপি ট্রেডিং হাউসের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাবট মেডিক্যাল অপটিক’ এটি সরবরাহ করেছে।
 

সূত্রমতে, দরপত্র অনুযায়ী অ্যাবট মেডিক্যাল দুই দফায় শেবাচিমের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা। এছাড়া প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, জনবল ও বায়োগ্রাফিক প্রকৌশলীও সংযুক্ত রাখার কথা। এসব না করে মাত্র সাতদিনের একটি প্রশিক্ষণ করিয়ে দায় সেরেছেন সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। অথচ মেশিনটি চালু থাকলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ চোখের উন্নত চিকিৎসা পেতেন। বর্তমানে সেই চিকিৎসা থেকে প্রতিনিয়ত রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
 

সূত্রে আরও জানা গেছে, মেশিনটি সরবরাহে ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এটি ওইবছর হাসপাতালে স্থাপন করা হলেও কীভাবে তা চালাতে হয় জানতেন না হাসপাতালের টেকনিশিয়ানরা। পরবর্তীতে একবছর অপেক্ষা করে ২০১৫ সালে উৎপাদনকারী দেশ থেকে পুনরায় টেকনিশিয়ান এনে মেশিনটি চালু করা হয়। এরপর কয়েক মাস ভালো চললেও ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ল্যাসিক মেশিনটি বিকল হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক সিএমএসডি থেকে একটি টেকনিক্যাল টিম এসে মেশিনটি মেরামত করে চালু করেন। তার দুইমাসের মধ্যে ২০১৬ সালের জুলাইয় মাসে আবারও মেশিনটি বিকল হয়ে যায়। এ অবস্থায় পুনরায় মেশিনটি মেরামতের জন্য সিএমএসডিতে চিঠি দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অচল হয়ে থাকে মেশিনটি। পরে অক্টোবর মাসে সিঙ্গাপুর থেকে টেকনিশিয়ান এনে পুনরায় এটি মেরামত করে চালু করা হয়। এরপর বেশ কিছুদিন ভালোভাবে সার্ভিস দেওয়ার পরেও ২০১৯ সালে ফের মেশিনটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে বিকল হয়ে পরে রয়েছে ২৫০টিরও বেশি সফল অপারেশন করা মেশিনটি।
 

চক্ষু বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ল্যাসিক যন্ত্রটি সারাতে কমপক্ষে এক কোটি টাকা ব্যয় হবে। শুধু মেরামত করলেই চলবে না, এটি চালু রেখে চিকিৎসা দিতে হলে প্রিমিক্স গ্যাস ও প্রিপেইড কার্ড সরবরাহ দরকার। এগুলো বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায় না। এই মেশিন সচল রাখতে সবসময় প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধায়নে রাখতে হয় কিন্তু তা আমাদের নেই। আমাদের হাসপাতালে ল্যাসিক মেশিন মেইনটেইন করার জনবল কখনোই ছিলনা।
 

তিনি আরও বলেন, নিকট দৃষ্টি, দীর্ঘ দৃষ্টির সমস্যা ও চোখে ঝাপসা দেখার স্থায়ী সমাধানে ল্যাসিক ট্রিটমেন্ট অত্যন্ত কার্যকর। ল্যাসিক মেশিনের নিক্ষেপিত লেজার দিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কর্নিয়ার আকার পরিবর্তন করা হয়। ল্যাসিক ট্রিটমেন্ট চশমা ও কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের একটি বিকল্প। অনেক শিক্ষার্থী ল্যাসিক ট্রিটমেন্ট নিয়ে এখন সামরিক বাহিনীর উচ্চ পদেও চাকরি করছেন। অথচ ছাত্র অবস্থায় তারা ঠিকভাবে চোখে দেখতে পারতেন না। ল্যাসিক মেশিনের পাশাপাশি চোখের ছানি অপারেশনের ফ্যাকো মেশিনটিও জুলাই মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। মেশিনটি চালু থাকলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ চোখের উন্নত চিকিৎসা পেতেন। সেই চিকিৎসা থেকে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
 

শেবাচিম হাসপাতালে সদ্য যোগদান করা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনির বলেন, শেবাচিম হাসপাতাল অনেক পুরোনো হলেও দেশের অন্যান্য হাসপাতালের চেয়ে এটি অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এখানে জনবল, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সবকিছুই অপ্রতুল। ইতোমধ্যে কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, কোথায় কোথায় আমাদের সমস্যা চিহ্নিত করেছি। এগুলোর ফাইলও রেডি করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে আমি মন্ত্রণালয় ও সিএমএসডিতে যাবো। যতোদ্রুত সম্ভব হাসপাতালের এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে।

আরও পড়ুন