Advertisement
Doctor TV

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


কেন সুইসাইড করতে চাও?

Main Image

হতাশাগ্রস্ত যুবক (ইনসেটে ডা. আসিফ উর রহমান)


সুইসাইড করতে চাও .......?

- তোমার নিম্নমধ্যবিত্ত পিতার মুখের দিকে তাকাও, তার জোড়া কর্ণিয়াতে দেখবে তোমাকে নিয়ে সাজানো স্বপ্ন! তাঁর ছেঁড়া জুতো জোড়ার দিকে তাকাও- ঐ জুতোজোড়া তোমাকে ফিসফিসিয়ে বলবে- 'তোর বাপের মতো হাড়কিপটা লোক এই দুনিয়াতে আর একটাও নাই রে ......, কতোবার বলছি আমারে এবার একটু মুক্তি দ্যাও!

উত্তরে খালি বলে - 'আর একটু আর একটু ....... আমার সন্তানটা গ্রাজুয়েশন শেষ করলো বলে! 'তোমার বাবার শার্টের কলারের দিকে তাকাও, বাসে ঝুলে ঝুলে অফিস করা এক চল্লিশোর্ধ্ব কলুর বলদের কথা চিন্তা করো- যে তোমার সেমিস্টার ফি এর টাকাটা আস্তে আস্তে গুছিয়ে রাখে যক্ষের ধনের মতো। বাড়িওয়ালার কটু কথা চুপ করে হজম করে ....... মানসম্মানের ভয়ে চুপ করে থাকে!

সুইসাইড করতে চাও ........?

- তোমার মায়ের শাড়ির আঁচলে লেগে থাকা ঘামের ঘ্রাণ শোঁকো। চোখের পানি আর নাকের পানি ওখানেই মিশে আছে ..... সাথে আছে হলুদ আর মরিচের মিশ্র ঘ্রাণ। তোমার জন্যই কাজের বুয়া হয়ে আছেন তোমারই গর্ভধারিণী। কি দিন কি রাত ........ !!! কি দেবে তুমি তাকে ? তোমার কাছ থেকে অভাগীর প্রত্যাশাও খুবই কম - শুধু তুমি মানুষ হবে ...... গর্ভ স্বার্থক করবে এটুকুই চাওয়া পাওয়া।

সুইসাইড করতে চাও ?

- একদিন পঙ্গু হাসপাতালে এসে ঘুরে যাও ........ দেখো হঠাৎ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর আহাজারি। ঘুরে আসতে পারো মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতাল - যেখানে দেখবে একটু বেঁচে থাকার জন্য মানুষের যুদ্ধ ! কারণ ওরা বুঝে গেছে জীবন কতোটুকু মূল্যবান !

সুইসাইড করতে চাও ?

- একটু আশেপাশে তাকাও ..... দেখো জীবন সংগ্রামে নেমে পড়া তোমার বয়েসী এক তরুণ বা তরুণীর টিকে থাকার সংগ্রাম। তুমি হয়তো কাঁদো প্রেমিকার জন্য , আইফোনের জন্য - সে কাঁদে পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায়। সে সংগ্রাম করে যাচ্ছে অবিরত - আত্মহত্যার চিন্তা করার মতো সময়টুকুও তার নেই।

কি নেই তোমার ..... একজোড়া হাত, পা, মুখশ্রী ...... সবই তো আছে। জন্মান্ধ হয়ে কি জন্মেছো তুমি? বুক ভর্তি হতাশা কেনো তোমার?

আসলে ....... সমস্যাটা হচ্ছে তোমার মানসিকতায়। তুমি জীবনকে দেখছো ফ্যান্টাসীর দৃষ্টিতে। তোমার কাছে জীবন মানেই প্রেম ..... জীবন মানেই গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডের মন জয়ের লড়াই! তাইনা?

একবারও কি চিন্তা করেছো- তোমার জন্মদাতা পিতাকে একজোড়া জুতো কিনে দেয়া উচিত?
একবারও কি ভেবে দেখেছো- মায়ের শাড়িটা পুরোনো হয়ে গেছে!

একবারও কি বলেছো - 'বাবা! আমি সামনের মাসে তোমার থেকে আর হাতখরচ নেবো না ....... টিউশনি করছি, নিজের সেমিস্টার ফি নিজেই জোগাড় করবো। তুমি দুশ্চিন্তা করো না বাবা!' বলেছো?

কেনো বলোনি? বড় হয়েছো না! জন্মদাতার কষ্ট ই যদি না বোঝো ....... কার কষ্ট বুঝবে ?
ফ্যান্টাসীর জগত বাদ দাও ..........
বাজারের ব্যাগ হাতে নাও ............
মায়ের মুখে একটু হাসি ফোঁটাও .......
পড়াশোনা করো ........... দেখবা দুনিয়া বড়ই সুন্দর।

আর যদি সুইসাইডের প্ল্যান করো, তাহলে বলবো তোমার জন্য এই পৃথিবী নাl
দশ লক্ষ শুক্রানুর মধ্যে তুমিই একমাত্র জয়ী হয়ে মায়ের গর্ভে এসেছিলে, পৃথিবীর আলো দেখেছো- আর তুমি কীটনাশক পানে বা গলায় দড়ি লাগিয়ে লটকে থাকবে! বাহ ..... বাহ!
নিজেকে নিজেই একবার বিচার করো তো?

তারপরও যদি সুইসাইড করতে চাও, মরে যাও! তোমার মতো দুই এক পিছ স্বার্থপর বোকা মরে গেলে হতাশাবাদীর সংখ্যা কমবে।

লেখক :

DR. ASIF UR RAHMAN
MRCEM-UK.DA.MCPS.
FIPM- India.
MBBS, BCS (Health).
Consultant- NINS Emergency Medicine,
Intensive Care Medicine Specialist.

আরও পড়ুন