Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫


বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস আজ, ২০৩৫ মধ্য যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য সরকারের

Main Image

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের বিশেষ প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোঃ ফখরুল আবেদীন জনি


আজ ২৩ মার্চ, রমজানের কারণে একদিন আগেই বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালন করা হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- হ্যাঁ, আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি।

১৮৮২ সালের এই দিনে বিজ্ঞানী রবার্ট কোচ যক্ষ্মার জন্য দায়ী মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস আবিষ্কার করেন।

আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি দিলে, হাঁচি দিলে বা থুতু ফেললে এই জীবানু বাতাসে ছড়িয়ে যায়। একটি আশঙ্কাজনক তথ্য হচ্ছে, বিশ্বের ৪ ভাগের ১ ভাগ মানুষের শরীরে যক্ষ্মা রোগের জীবানু সুপ্ত থাকে। তার মানে হল ওই মানুষগুলো জীবানুতে আক্রান্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা অসুস্থ হননি। এই আক্রান্তদের ৫-১৫ % শতাংশ  সারা জীবন ধরেই রোগের শিকার হবার আশঙ্কা থেকে যায়।

দুই সপ্তাহের বেশি কাশি, ওজন কমে যাওয়া, রাতে ঘাম হওয়া, দুর্বলতা সহ নানা লক্ষণ রয়েছে যক্ষ্মার, এইসব লক্ষণ দেখা মাত্র নিকটতস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র সহ বেসরকারি ব্র্যাক সংস্থা সহ অনেক জায়গায় পরীক্ষা করা হয়, যা সম্পূর্ন বিনামূল্যে করা হয়।

যারা এইচ আইভি আক্রান্ত, অপুষ্টিতে ভোগে, ডায়বেটিস রয়েছে, অথবা যক্ষ্মা রোগীর সংস্পর্শে আসলে,তাদের অসুস্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে বেশি। থুতু নমুনা অণুবীক্ষণ যন্ত্র  দ্বারা যক্ষ্মার জীবানু রয়েছে কিনা, পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া এক্সরে দ্বারা, জিন এক্সপার্ট মেশিন দিয়েও পরীক্ষা করা হয়।

দেশে যক্ষ্মা রোগে প্রায় ৪০ হাজার মৃত্যু হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন ১১০ জন রোগী মারা যায় যক্ষ্মায়।

২০৩৫ মধ্য যক্ষ্মা রোগী এবং এই রোগে মৃত্যুর হার শূণ্যে আনার লক্ষ্যে যক্ষ্মা রোগী সনাক্তকরণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা নিয়েছেন। দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা, উপজেলায় একজন টিবি এক্সপার্ট, ডিস্ট্রিক্ট স্যাভিলেন্স মেডিকেল অফিসারের তত্ত্বাবধানে যক্ষা রোগের কার্যক্রম নজরদারি বৃদ্ধি সহ প্রতিটি সিভিল সার্জন অফিসের তত্ত্বাবধানে  উপজেলায় যক্ষ্মা রোগী সনাক্তকরণে ইউএইচএফপিও, এমওডিসি, টিএলসিত্র, ল্যাব টেকনিশিয়ান, জিন এক্সপার্ট টেকনিশিয়ান সহ বেসরকারি এনজিও সহ বিশাল কর্মকর্তা, কর্মচারী মিলে যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে।

এছাড়া সামাজিক সচেতনতা বৃদ্বির জন্য বিভিন্ন পেশাজীবি নিয়ে গঠিত নাটাব বিভিন্ন জেলা শহরে কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘ ২৪ মাস মেয়াদি ঔষধ সেবন থেকে মাত্র ৯ মাসে স্বল্প মেয়াদি পদ্ধতি আবিস্কার করে যক্ষ্মা রোগ নিমূর্ল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই স্বল্পমেয়াদী ঔষধ সেবন  পদ্ধতি চালু করছে। যক্ষ্মা রোগ নির্মূলে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, শিশুদের যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগ, জনসচেতনা তেরি করা সহ প্রতিটি সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা  নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে যক্ষ্মার উপসর্গ আছে এমন প্রায় ২৯ লাখ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যা গত ১০ বছরে প্রায় ২২ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এতে নতুন করে ২,৬২,৭৩১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭৪ হাজার ৯৪৫ জন। চট্টগ্রামে ৪৮ হাজার ৯৩৮ জন, খুলনায় ২৭ হাজার ১১৭জন, রংপুরে ২৬ হাজার ৮২৮ জন, রাজশাহীতে ২৯ হাজার ৩৩৫ জন, সিলেটে ২২ হাজার ২০৭ জন, বরিশালে ১৬ হাজার ৪৯১ জন এবং ময়মনসিংহে ১৮হাজার ৬৬০ জন। 

এই সংক্রামক ব্যাধি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে। অন্যথায় যক্ষ্মা রোগ নির্মুল কঠিন হবে। প্রতিদিন ১১০ জনের জীবন বাঁচাতে আসুন আমরা সমাজের সব জায়গায় আওয়াজ জানাই, দুই সপ্তাহের বেশি কাশি হলে যক্ষ্মা পরীক্ষা করি। নিজে নিরাপদ থাকি, অন্যকে নিরাপদ রাখতে সহায়তা করি। এভাবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পৃথিবী থেকে যক্ষা রোগ বিদায় করা সম্ভব।

লেখক : ডা. মোঃ ফখরুল আবেদীন জনি
এমবিবিএস, এমপিএইচ
পাবলিক হেলথ স্পেশালিষ্ট
ডিস্ট্রিক্ট স্যার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসার।
সিভিল সার্জন অফিস, কুমিল্লা। 

আরও পড়ুন