Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫


ডাক্তার, নার্স, আয়া, ওয়ার্ড বয় এরা মানুষ না…

Main Image

চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা- ডাঃ রতীন্দ্র নাথ মণ্ডল, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, রংপুর স্পেশালাইজড হাসপাতাল


গতকাল আমাদের ২য় সন্তানের পৃথিবীতে আগমন উপলক্ষে রংপুর স্পেশালাইজড হাসপাতালে রাত্রি যাপন করলাম। আমাদের সন্তান সময়ের আগেই হয়েছে ৩৫ সপ্তাহে, ওর ওজনও স্বাভাবিকের চেয়ে কম। জন্মের পর ভালোই ছিল।

রাত ১১ টায় খেয়াল করলাম নার্স এসে ইনজেকশন দিচ্ছেন (ব্যথার), কিছুক্ষণ পর আয়া এসে রুম পরিস্কার করলেন, খোঁজ খবর নিলেন যে প্যাড চেঞ্জ করবেন কিনা? বাবুকে খাওয়াবেন কিনা? কিছুক্ষন পর NICU এর নার্স এবং আয়া এসে বাবুকে খাওয়ানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু বাবু খাচ্ছে না। এরপর অপেক্ষা, ঘণ্টাখানেক পর আবারো খাওয়ানোর চেষ্টা করা হলো, কিন্তু কোন লাভ হলো না। এবার ডিউটি ডাক্তার, নার্স, আয়া সবাই আসলেন খোঁজ খবর নিলেন।

রাত একটার দিকে বাবু বমি করল। NICU এর নার্স এসে বাবুকে NICU তে নিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর এসে বলল ওর ব্লাড সুগার ভালো আছে, তবে বমি করে নাই। একঘণ্টা পর আবার নার্স জানালো বাবু অনেকবার বমি করেছে, দ্রুত স্যালাইন দিতে হবে। আমি অনুমতি দিলাম, NICU গিয়ে দেখলাম, পাশে অন্য একটা বাচ্চা অনেক খারাপ, হেড বক্স দিয়ে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। নার্স অনেক ব্যাস্ত, সাথে ডিউটি ডাক্তার, আয়া। ডিউটি ডাক্তার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকে ফোন দিচ্ছেন, ফোনে স্যার জানালেন যে স্যালাইন শুরু করে দাও, তখন রাত ৩ টা।

আযান হলো নার্স, আয়া এসে বাবুর মায়ের খবর নিচ্ছেন। আমি NICU তে গেলাম গিয়ে দেখি ডাক্তার, নার্স সবাই জেগে আছে, আমার বাবুর পাশের খারাপ রোগীটাকে নিয়ে খুব ব্যাস্ত তারা। আমার বাবু আবারও বমি করেছে, আমি অনেক চিন্তিত হয়ে পড়লাম। ডিউটি ডাক্তার আবার বিশেষজ্ঞ স্যারকে ফোন দিলেন, সব শুনে এবার এন্টিবায়োটিক শুরু করা হলো।

সকাল হলো, সারারাত জেগে থাকা নার্স আবারও রোগীদের সকালের ঔষধ দেয়া শুরু করলেন, আয়া পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করলেন। আমি ভালো করে খেয়াল করলাম, কারো চোখে- মুখে ক্লান্তি নেই।

NICU তে গেলাম আমাদের সন্তান আগের চেয়ে ভালো আছে, আর বমি করেন নাই। NICU এর নার্স রাতে একফোঁটাও ঘুমায় নাই, কিছুটা ক্লান্ত মনে হলো, কিন্তু কাজ করে যাচ্ছে। আমার মনে হলো সারারাত জেগেজেগে যারা আমাদের টেনশন মুক্ত রাখেন, আমাদের স্বস্তি দেন, ক্লান্ত না হয়ে আবার হাসিমুখে কাজ করেন, এসবের জন্য নামমাত্র বেতন আর গালি ছাড়া কিছু পান না, তারা তো আসলেই মানুষ না...

দিন-রাত নিরলস কাজ করে যাওয়া সকল চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

আরও পড়ুন