Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


৫৫ শতাংশ চিকিৎসা বর্জ্যকর্মী নিয়োগে অনিয়ম

Main Image

চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিধিমালার পর ১৪ বছর কেটে গেলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি


অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৫৫ শতাংশ চিকিৎসা বর্জ্যকর্মী নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে ৪৬ শতাংশ, প্রভাবশালীর হস্তক্ষেপে ৪২ এবং ঘুষ বা বিধিবহির্ভূত অর্থের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন ১৪ শতাংশ।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) টিআইবির ‘চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

অনলাইন প্লাটফর্মে টিআইবির রির্সাচ ফেলো নেওয়াজুল মওলা এবং গবেষণা সহযোগী সহিদুল ইসলাম ও সাজ্জাদুল করিম প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গবেষণায় চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইনের বিভিন্ন  দুর্বলতা চিহ্নিত হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন বিদ্যমান চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা, গাইডলাইন, সম্পূরক বিধি এবং নির্দেশিকা প্রয়োগ ও প্রতিপালনে ঘাটতির চিত্র উঠে এসেছে। চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ-২০০৮ বিধিমালা গত ১৪ বছরেও বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া, সংশ্লিষ্ট অংশীজনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধান করার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বিধিতে থাকলেও তা হয়নি।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় সাধারণ নিয়োগের সময় চিকিৎসা বর্জ্যকর্মী হিসেবে আলাদাভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় না। তাদের সাধারণ বর্জ্যকর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পরে চিকিৎসা বর্জ্যকর্মী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বর্জ্যকর্মীদের চাকরি স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। যেমন- বিধিবহির্ভূত আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নতুন ও অস্থায়ী কর্মীর শিক্ষানবিশকাল শেষ হওয়ার আগেই দ্রুত চাকরি স্থায়ী করা হয়েছে। বর্জ্যকর্মী নিয়োগে বিধিবহির্ভূত ২ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক লেনদেন হয়।

টিআইবি বলছে, চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিধিমালার পর ১৪ বছর কেটে গেলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের ঘাটতির চিত্র পেয়েছে সংস্থাটি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যতম অংশীজন হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতাল ও সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার কর্মকর্তাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্টজন বিদ্যমান আইনি কাঠামো এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত নন। একইসঙ্গে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট এসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সমন্বয় এবং অংশীজনের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করায় ঘাটতি রয়েছে। অধিকাংশ হাসপাতালে অভ্যন্তরীণ বর্জ্যর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নেই। হাসপাতাল ও বহির্বিভাগীয় ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, বাজেট, আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে।

এতে বলা হয়, চিকিৎসা বর্জ্যকর্মী নিয়োগে বিধিবহির্ভূত আর্থিক লেনদেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে অবহেলা এবং বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি থাকলেও তা প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণে ঘাটতি রয়েছে। ফলে সংক্রমণসহ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এ ক্ষেত্রটিকে যথাযথ প্রাধান্য দেওয়া হয়নি।

টিআইবি বলছে, হাসপাতালে চিকিৎসা বর্জ্য সংরক্ষণে অনিয়ম চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিটি বর্জ্য সংরক্ষণ পাত্রে বর্জ্যর ধরন অনুযায়ী কালার কোড থাকা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও হাসপাতালগুলোতে তা প্রতিপালনে ঘাটতি রয়েছে। সার্বিকভাবে ২৯ শতাংশ হাসপাতালের বর্জ্য সংরক্ষণের পাত্রে কালার কোড নেই এবং ৫১ শতাংশ পাত্রে সাংকেতিক চিহ্ন নেই। তাছাড়া বর্জ্যর ধরন অনুযায়ী ক্ষেত্রবিশেষে হাসপাতালগুলো পাত্রে সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে না। কালার কোড থাকলেও বর্জ্যর ধরন অনুযায়ী সঠিক পাত্রে বর্জ্য সংরক্ষণ না করে সব ধরনের বর্জ্য একই পাত্রে রাখা হয়। এছাড়া রাসায়নিক ও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য আলাদা করা এবং তা সাবধানতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে।

সাধারণ চিকিৎসা বর্জ্য ও কভিড-১৯ এর চিকিৎসা বর্জ্য আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয় না। সার্বিকভাবে ৪২ শতাংশ ক্ষেত্রে কভিড-১৯ এর বর্জ্য ও সাধারণ চিকিৎসা বর্জ্য একত্রে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়।

আরও পড়ুন