
ডা. রাজিকুল ইসলাম রাজিব
আমরা হরহামেশাই অন্য কাউকে দেখে দুটো মন্তব্য করে ফেলি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার দুর্বল কোন বিষয় তুলে ধরি। আর যার বেশিরভাগ শিকার ছোট বাচ্চারা। তারপরেই সিরিয়ালে আছে মোটা মানুষ, পাতলা মানুষ, কম উচ্চতার মানুষ, একটু কম সুন্দর মানুষ,লেখাপড়ায় একটু দুর্বল ছাত্র, বেকার যুবক, অভাবী মানুষ, অবিবাহিত ছেলে-মেয়ে, বাচ্চা না হওয়া দম্পতি।
কম শিক্ষিত কিংবা বেশি শিক্ষিত সবার মাঝেই অন্যকে সুড়সুড়ি দেওয়ার এই বদ অভ্যাস আছে। এক কথায় বলা যায়, এটি আমাদের জাতিগত সুড়সুড়ি জনিত বদ অভ্যাস। আমরা নিজেকে নিয়ে নয় বরং অন্যকে নিয়ে বেশি চিন্তা করি।
ভাবীরা বা কিছু আত্নীয় এক সাথে হলে একজন অন্যজনকে উদ্দেশ্য করে বলে ফেলেন,"আপনার ছেলের স্বাস্থ্যের একি হাল ! কিছু খায় না নাকি?" কেউ আবার বলেন, " আপনার ছেলে এতটুকু কেন? আপনার ছেলে তো আমার ছেলের থেকে বয়সে বড়।" কেউ বিনা প্রশ্নেই তার বাড়ি, গাড়ি, আসবাবপত্রের হিসাব দিয়ে দেন।
শিক্ষক ক্লাস ভর্তি ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে একজনকে উদ্দেশ্য করে বলে ফেলেন, "তোকে দিয়ে কিছু হবে না। তোর মত বলদ আমি আমার জীবনে আর একটা দেখিনি।" আবার এমনও কেউ আছেন যিনি একজন বেকার যুবককে রাস্তাঘাটে প্রতিনিয়ত জিজ্ঞেস করেন, " কি খবর তোমার? সরকারী চাকুরীর বয়স আর কতদিন আছে?" অবিবাহিত মেয়েকে কেউ বারবার জিজ্ঞেস করে, "তোমার বিয়ে শাদীর কি অবস্থা?" আর একটু মোটা স্বাস্থ্যের ছেলেমেয়েরা ভয়াবহ বুলিং এর শিকার হয়। নিজের পরিবারের লোকদের থেকে বুলিং- এ শিকার হওয়ার ঘটনাও কম নয়।
যাকে উদ্দেশ্য করে নেগেটিভ মন্তব্য করা হয় তার মনে তা দৃঢ় ভাবে গেঁথে যায়। বিশেষ করে শিশুদের মনে। ছোট থেকে বুলিং-এ শিকার হওয়া শিশু বড় হয়েও মানসিক ভাবে পুষ্ট হতে পারে না। কারও আত্মবিশ্বাস কম হয়, কারও সোস্যাল ফোবিয়া জন্ম নেয়। সহজে তারা অন্যের সাথে মিশতে চায় না। যেকোন কাজ শুরুর আগেই সে ভয়ে মুষড়ে পড়ে। অনেক সময় মানসিক অশান্তিতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিপরীতে অনেকে আবার হিংস্র ও নির্দয় হয়ে ওঠে। সে বড় বড় অন্যায় ও অসামাজিক কাজ করে। অন্য মানুষদের কষ্ট দিয়ে সে পাশবিক আনন্দ পায়।
আপনার ছোট্ট শিশুর সামনে তাকে নিয়ে কেউ নেগেটিভ কোন মন্তব্য করলে সরাসরি ভদ্রভাবে বাঁধা দিন। বিনয়ের সাথে বলুন, "দয়া করে এ জাতীয় কথা আমার বাচ্চার সামনে বলবেন না। পারলে পজিটিভ কিছু বলুন, নয়তো চুপ থাকুন।" আপনার চেহারা, আপনার স্বাস্থ্য, আপনার মেধা নিয়েও কাউকে নেগেটিভ কিছু বলতে দিবেন না। ভদ্রোচিত ব্যবহারে এ ধরণের মানুষের মুখকে বন্ধ করে দিন।
স্কুলের assembly-র নিয়মিত সামনে দাঁড়ানো ছোটখাট আকৃতির ছেলেগুলোই আজ তাদের ব্যাচের সবচেয়ে লম্বা ছেলে। বেকারত্বের ঘানি বয়ে বেড়ানো ছেলেটিই আজকে সবচেয়ে ভাল পজিশনে আছে। কালো ছেলেটিই আজকে সবচেয়ে স্মার্ট হয়েছে। মোটা মেয়েটিই আজ সবচেয়ে ভাল স্বামী আর শ্বশুরবাড়ি পেয়েছে। কম মেধার ছাত্রটিই আজকে সমাজের মানুষের সেবা করছে। অভাবী মানুষটিই আজ সৎ উপার্জনে বিত্তবান হয়েছে। সন্তান না হওয়া দম্পতির আজ দুটি ফুটফুটে সন্তান হয়েছে।
নেগেটিভ চিন্তা ও কথার মানুষ থেকে দূরে থাকুন। নেগেটিভ চিন্তার মানুষ আপনার চিন্তার জগতে প্রবেশ করে আপনার মানসিক শক্তিকে দুর্বল করে ফেলবে।
পজিটিভ কথা বলুন, পজিটিভ চিন্তা করুন।
আরও পড়ুন