Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫


বিএসএমএমইউতে গর্ভের ত্রুটিপূর্ণ ভ্রুণ স্ক্রিনিং চালু

Main Image

ভ্রুণে ক্রোমোজোনাল বা জেনেটিক ত্রুটির মধ্যে ডাউন সিনড্রোম অন্যতম


মাতৃগর্ভের ভ্রুণ ত্রটিপূর্ণ কিনা তা তিন মাসের মধ্যেই নির্ণয়ের সেবা চালু করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। এর ফলে শিশুর ডাউন সিনড্রোম বা মানসিক ও শারীরিক বৈকল্য রোধ করা সম্ভব হবে।

মঙ্গলবার (১৪ জুন) বিএসএমএমইউর শহীদ ডা. মিলন হলে এ পরীক্ষার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। দেশে প্রথমবারের মতো প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ, ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগ, রেডিওলজি ইমেজিং বিভাগ এবং ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের সমন্বয়ে এই পরীক্ষা চালু হলো।

উপাচার্য বলেন, ভ্রুণে ক্রোমোজোনাল বা জেনেটিক ত্রুটির মধ্যে ডাউন সিনড্রোম অন্যতম। বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা না থাকায় দিন দিন দেশে ডাউন শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগ ডাউন শিশুর জন্মগত হার্টের সমস্যা থাকে। এতে অনেক শিশু জন্মের পর মারা যায়, যা নবজাতকের মৃত্যু হার বাড়ায়। আর যারা বেঁচে থাকে তারা মানসিক প্রতিবন্ধী হিসাবে সংসার ও দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, প্রসবজনিত জটিলতায় মাতৃমৃত্যুরোধের বিষয়টি যেভাবে প্রাধান্য পেয়েছে, অনাগত শিশুর ডাউন সিনড্রোমের মতো জেনেটিক বা জন্মগত ত্রুটির বিষয়টি সেভাবে আলোচনায় আসেনি।

ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমেরিকার মতো উন্নত দেশে গর্ভবতী মায়ের সেবা দেওয়ার সময় মাকে ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে ধারণা দেওয়া চিকিৎসকের জন্য বাধ্যতামূলক হলেও আমাদের দেশে তা উপেক্ষিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ১৫টি ডাউন শিশুর জন্ম হয়।

তিনি বলেন, নারী যত বেশি বয়সে মা হবেন, তার সন্তান ডাউন শিশু হবার সম্ভাবনা তত বেশি হবে। যেমন ২৫ বছর বয়সের প্রতি ১২০০ গর্ভবর্তীর মধ্যে একজনের ও ৩০ বছর বয়সের প্রতি ৯০০ মায়ের মধ্যে একজনের ডাউন শিশু হতে পারে। কিন্তু ৩৫ বছর বয়সের পর ঝুঁকি দ্রুত বাড়তে থাকে। ৩৫ বছর বয়সের প্রতি ৩৫০ গর্ভবর্তীর মধ্যে একজনের এবং ৪০ বছর বয়সের প্রতি ১০০ মায়ের একজনের ডাউন শিশু হতে পারে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিএসএমএমইউতে এই সেবা চালুর ফলে দেশেই মায়ের গর্ভে ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহে অর্থাৎ শিশুর আকার যখন দেড় থেকে দুই ইঞ্চি, তখনই মায়ের গর্ভে ভ্রুণ ডাউন সিনড্রোম ও অন্যান্য ক্রোমোজোমাল ত্রুটিতে আক্রান্ত কি না তার ঝুঁকি নির্ণয় করা যাবে। পরীক্ষায় উচ্চ ঝুঁকি পাওয়া গেলে তা আরেকটি পরীক্ষার মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

অনুষ্ঠানে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল দেশে ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের সংখ্যা ও সমাজে তার প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, দেশে প্রায় আড়াই লাখ ডাউন শিশু আছে।

অনুষ্ঠানে ভারতের রোস ডায়াগনস্টিকের বৈজ্ঞানিক ডা. দিপিকা জিনদাল গর্ভাবস্থায় ভ্রুণে জেনেটিক ত্রুটি নির্ণয়ের প্রযুক্তিগত ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত বলেন। তিনি জানান, আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে মায়ের পেটে ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের শিশুর ঘাড়ের পেছনের তরলের মাত্রা, গর্ভবর্তী মায়ের শরীরে ‘প্যাপ এ’, ‘বিটা এইচসিজি’ নামক হরমোনের মাত্রা একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যন্য বক্তারা বলেন, ডাউন সিনড্রোমের কারণ, প্রতিরোধ ও মায়ের গর্ভে ডাউন সিনড্রোম নির্ণয় এবং ডাউন শিশুদের বিশেষ যত্নের ব্যাপারে আমরা সচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করছি। সচেতনতার মাধ্যমে মেধাদীপ্ত শিশুর জন্ম নিশ্চিত করে সুখী পরিবার গড়াই আমাদের লক্ষ্য।

আরও পড়ুন