Advertisement
Doctor TV

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


হ্যালো, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বলছি...

Main Image

চিকিৎসকদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন নিজেকে হেদায়েতুল্লা বলে পরিচয় দেয়া ব্যক্তি


হ্যালো, আমি হেদায়েতুল্লা বলছি। আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক। আপনার নামে দুদকে মামলা হচ্ছে। ফাইল আমার কাছে আছে। একমাত্র আমি পারি ফাইল আটকে দিতে। আপনি রাজি থাকলে আমি ফাইল আটকে দিতে পারি। আমি তদন্তের কাজে আসছি। আপনি অফিসে থাকেন। এরপরই ফোনের লাইন কেটে যায়।

কিছুক্ষণ পর ফোন করে আবার বলেন, আমি হেদায়েতুল্লাহ। রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়েছে। আমি আসছি। গাড়ি ভাড়ার জন্য এ মোবাইলে বিকাশ করুন। দ্রুত করুন। না হলে তদন্ত রিপোর্ট খারাপ যাবে। আমি আসছি। অপেক্ষা করুন। টাকা বিকাশ করুন।

এভাবে চিকিৎসকদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন নিজেকে হেদায়েতুল্লা বলে পরিচয় দেয়া ব্যক্তি। কখোন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক, কখোন বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্য কোন উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চিকিৎসকদের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে প্রতারণা করে আসছেন। আজ একটা নম্বর, তো কাল আরেক নম্বর দিয়ে ফোন করেন। কিন্তু নামটা ঠিকই বলেন হেদায়েতুল্লাহ।

সাধারণত ছুটির দিনে অথবা অফিস সময়ের পরে ফোন করেন। ডাক্তারদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে করেন প্রতারণা।

দু-একজন নয়, বেশ কয়েকজন চিকিৎসক হেদায়েতুল্লার হয়রানীর শিকার হয়েছেন। বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ অনেক চিকিৎসক। তারা বলছেন, তথ্য-প্রযুক্তির এই সময়ে এমন ঘটনা কোন ভাবেই কাম্য নয়।

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. জয়নাল আবেদীন টিটো বলেন, হেদায়েতুল্লা নামের এক ব্যক্তি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিসে) ফোন করে ডাক্তারদের বিভিন্ন তথ্য চাইছে। এরপর ডাক্তারদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে করছেন বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা।

ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. মঈনুল আহসান বলেন, তাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক পরিচয় দিয়ে ওই হেদায়েতুল্লা বলেন, আপনার নামে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আছে। ফলে আপনার নামে দুদকে মামলা হচ্ছে। আপনার বিষয়টা আমি দেখবো। এখন আমি আপনার অফিসে আসছি। রাস্তায় আমার গাড়ি নষ্ট হয়েগেছে। এখন আপনি দ্রুত আমাকে কিছু টাকা পাঠান আমি সমাধান করে দিচ্ছি।

আমার গাড়ি নষ্ট থাকায় আমি অন্য গাড়ি নিয়ে আসতেছি। তবে তার আগে আপনি আমাকে টাকা পাঠান। আমি তাহলে সমাধান করি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, তিনি একটি জেলা হাসপাতালে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। হেদায়েতুল্লাহ নামে ওই ব্যক্তি তাকে অফিসের নম্বরে মোবাইল করে বলেন, তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক। তার নামে দুদকে মামলা হয়েছে। তার তদন্ত করছেন। তার ফাইল এখন তার কাছে আছে। তিনি তাড়াতাড়ি ফাইনাল প্রতিবেদন দিবেন। নিজেকে বাঁচাতে হলে এ নম্বরে দ্রুত দশ হাজার টাকা বিকাশ করুন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চিকিৎসক বলেন, তিনি এই ফোন পাওয়ার পর ভয়ে কাউকে কিছু না বলে দশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।

এভাবে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে হেদায়েতুল্লাহ নামে ওই ব্যক্তি।

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. জয়নাল আবেদীন টিটো বলেন, হেদায়েতুল্লাহ নামধারী ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। নতুন যারা চাকরিতে জয়েন করেন তারাই বেশি প্রতারণার শিকার হন।

তিনি চিকিৎসকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেউ কখনই এভাবে টাকা চান না। গাড়ি নষ্ট হলেও অধিদপ্তরের কেউ গাড়ি ভাড়া দাবি করেন না। মামলার ভয় দেখালেও নিশ্চিত না হয়ে ভয় পাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন তিনি। টাকা পয়সা লেনদেন কোনভাবেই করা যাবে না বলে চিকিৎসকদের পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক।

এদিকে ডক্টরদের কাছ থেকে পাওয়া হেদায়েতুল্লার ওই নম্বরে একাধিক বার চেষ্টা করলেও, ফোন যায়নি।

আরও পড়ুন