Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


বায়ুমানের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি বিষাক্ত ঢাকার বাতাস

Main Image

বায়ুদূষণ দ্রুত রোধ করা সম্ভব না হলে দীর্ঘ মেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।


দুই কোটি মানুষের ঢাকা শহর ঢেকে গেছে বিষাক্ত বাতাসে। নীল আকাশে চোখ রাখতে গেলে দৃষ্টিসীমা আটকে যায় ধোঁয়াশার মধ্যেই। বিশ্ব বায়ুমান সূচকে খারাপ শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে এখন ঢাকার অবস্থান। কেন দেশের প্রধান শহরের এমন নাজুক অবস্থা?

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসাপতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ঢাকা মহানগরীর চারদিকে থাকা ইটভাটাগুলো, যানবাহনে যে মানের জ্বালানি ব্যবহার করা হয় সেটিও একটি বড় করণ।

তিনি বলেন, ‘আমাদের চারপাশে যে নির্মাণকাজ হচ্ছে সেগুলোতে দূষণরোধী কোনো প্ল্যান দেখা যায় না। এসব এলাকা থেকে ছড়িয়ে পড়া ধুলিকণা দূষণের বড় কারণ। এছাড়া আমাদের গৃহস্থলি বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলে রাখাও একটি কারণ।’

বায়ু দূষণের জন্য বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ- এই দু’টি কারণকে দায়ী করা হয়। বাহ্যিক কারণগুলোর মধ্যে নির্মাণকাজ থেকে নির্গত ধুলিকণা ৩৮ শতাংশ, প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো ২২ শতাংশ, শিল্প প্রক্রিয়াজাতবর্জ্য ১৭ শতাংশ, ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ১০ শতাংশ দায়ী। এছাড়া ঢাকা শহরে চলাচল করা প্রায় ১২ লাখ যানবাহনের ধোঁয়া ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো দায়ী ৮ শতাংশ।

অভ্যন্তরীণ কারণগুলোর মধ্যে রান্নার চুলা থেকে নির্গত ধোঁয়া ৪১ শতাংশ, সিগারেটের ধোঁয়া ২৫ শতাংশ, নর্দমা নিষ্কাশিত গ্যাস ১৫ শতাংশ, রেডন গ্যাস ও অন্যান্য দূষণকারী পদার্থ ১০ শতাংশ দায়ী।

এসব দূষণ দ্রুত রোধ করা সম্ভব না হলে দীর্ঘ মেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

এ বিষয়ে শ্যামলী ২৫০ শয্যার যক্ষ্মা হাসপতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, বায়ুদূষণের ফলে মানুষের হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ-সিওপিডির মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।

তিনি বলেন, ‘শীতকালে স্বাভাবিকভাবেই একটু শ্বাসকষ্টের রোগী বেড়ে যায়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে- এ সময় ঢাকা শহরের বাতাসের মান অনেকটাই খারাপ হয়ে যায়।’

পরিসংখ্যান বলছে, বায়ু দূষণের প্রভাবে শ্বাসযন্ত্রের রোগসহ বিভিন্ন রোগে প্রায় দুই লাখ মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় আগের ৫ বছরে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২৪ গুণ। এসময় মৃত্যু সংখ্যা বেড়েছে ১০ গুণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাতাসে ভেসে বেড়ানো কঠিন ও তরল পদার্থের মিশ্রণ পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম এর সহনীয় মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রগ্রাম। সেখানে ২০২০ সালে বাংলাদেশে পিএম ২.৫ এর গড় ঘনত্ব ছিল ৭৭ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের চেয়ে আরও ১৪ গুণ বেশি বিপজ্জনক।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বায়ুদূষিত এলাকায় বসবাস করার ফলে দেশে শিশুদেরও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এমনকি এর ফলে ফুসফুসের ক্যান্সারের হার বেড়ে যাচ্ছে। দূষিত বায়ু আমাদের শ্রমশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে।

বায়ু দূষণ এখন বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করেছে। তবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে এটি কঠিনভাবে আঘাত করে। এর ক্ষতি কমাতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যেভাবে গণহারে গাছ নিধন করছি এবং যত্রতত্র অপরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে সেগুলো রোধ করা জরুরি। আমাদের শহরে আশঙ্কাজনকভাবে জলাধার কমে যাচ্ছে, ফলে সেটি আমাদের স্বাস্থের ওপর বড় হুমকি তৈরি করছে।’

এ জন্য ইমিউনিটি তৈরির মাধ্যমে আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

 

আরও পড়ুন