Advertisement
Doctor TV

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


করোনায় মৃত্যু: রক্ত পরীক্ষায় যে চিত্র পেলেন দেশীয় গবেষকরা

Main Image

করোনায় মৃত্যু: রক্ত পরীক্ষায় যে চিত্র পেলেন দেশীয় গবেষকরা


চট্টগ্রামে আইসিইউয়ে ভর্তি করোনা রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, শ্বেত রক্ত কণিকা, সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন, ফেরিটিন এবং ডি-ডাইমারের মাত্রা করোনার মৃত্যুঝুঁকি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব উপাদানের সংকটপূর্ণ মাত্রা করোনা রোগের স্বাস্থ্য এবং মৃত্যুঝুঁকির আশঙ্কা নির্দেশ করে।

চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউয়ে চিকিৎসাধীন ২৩৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর ওপর জরিপ চালিয়ে এমন চিত্র পেয়েছেন গবেষকরা। ‘মৃত্যুঝুঁকির সম্ভাব্যতা যাচাইকরণ’ শীর্ষক জরিপটি ২০২১ সালের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে চালানো হয়।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের গবেষকরা যৌথভাবে জরিপটি চালিয়েছেন।

বুধবার সিভাসুতে এক সংবাদ সম্মেলনে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন গবেষক দলের নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান।

গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল, তথ্য এবং উপাত্তসমূহ আইসিইউয়ে ভর্তি করোনা রোগীদের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে গবেষকরা মনে করেন।

সংবাদ সম্মেলন বলা হয়েছে, গবেষণায় দেখা যায় আইসিইউয়ে ভর্তি ২৩৪ জন রোগীর মধ্যে ১৫৬ জন (৬৬.৬৭%) মারা যান, আর সুস্থ হন ৭৮ জন (৩৩.৩৩%)। মারা যাওয়াদের মধ্যে ৭৩% রোগীর বয়স ছিল পঞ্চাশোর্ধ্ব।

গবেষণা দলের সদস্য চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বী বলেন, আইসিইউয়ে মারা যাওয়া রোগীদের রক্তের উপাদান পরীক্ষা করে দেখা যায়, ৭৫.৫ শতাংশ রোগীর শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক মাত্রার (৪০০০-১১০০০ ঘন মিলিমিটার) বেশি। এই রোগীদের ক্ষেত্রে শ্বেত রক্তকণিকার সংকটপূর্ণ মাত্রা ছিল ২৬১১০.৬ ঘন মিলিমিটার। অর্থাৎ, করোনা আক্রান্ত রোগীদের শ্বেত রক্তকণিকার মান ২৬১১০.৬ ঘন মিলিমিটারের বেশি হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি হয়।

এছাড়া, মৃত্যুবরণকারী ৫১.৪ শতাংশ রোগীর রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক মাত্রার (১২-১৭ গ্রাম/ডেসিলিটার) চেয়ে কম, যার গড় পরিমাণ ছিল ১০.৬ গ্রাম/ডেসিলিটার। এছাড়াও মৃত্যুবরণকারী ৭২.৯ শতাংশ রোগীর রক্তে অক্সিজেনের চাপ ছিল স্বাভাবিক মাত্রার (৭০-৯০ মিলিমিটার) চাইতে তাৎপর্য পরিমাণে কম যার গড় পরিমান ছিল ৫০.৪ মিলিমিটার।

তিনি বলেন, মারা যাওয়া ৯৮.৪ শতাংশ রোগীর রক্তে সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিনের (সিসআরপি) পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক মাত্রার (৫ মিলিগ্রাম/লিটারের কম) অনেক বেশি, প্রতি লিটারে ১০২.৪ মিলিগ্রাম পর্যন্তও পরিলক্ষিত হয়েছে। সেই সাথে মৃত্যুবরণ করা ৭৫ শতাংশ রোগীর রক্তে ফেরিটিনের স্বাভাবিকের (৯-৩৭০ ন্যানোগ্রাম/ মিলিমিটার) চেয়ে উচ্চ মাত্রা পরিলক্ষিত হয়। যার পরিমাণ ছিল প্রতি মিলিলিটারে ৯০১.৫ ন্যানোগ্রাম। এছাড়াও আইসিইউয়ে মৃত্যুবরণ করা ৬৫.২ শতাংশ রোগীর রক্তে ডি-ডাইমারের পরিমাণ স্বাভাবিকের (০.৫ মাইক্রোগ্রাম/মিলিলিটারের কম) তুলনায় উচ্চ মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়; যা ছিল প্রতি মিলিলিটারে ২.০২ মাইক্রোগ্রাম।

তিনি আরও বলেন, একইভাবে মারা যাওয়া ৭৬.১ শতাংশ রোগীর রক্তে ট্রপোনিনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ছিল।

এ গবেষণার সঙ্গে আরও যুক্ত ছিলেন- চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক বিদ্যুৎ বড়ুয়া, সহকারী অধ্যাপক ইফতেখার আহমেদ, জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. আবদুর রব, জুনিয়র কনসালট্যান্ট রাজদ্বীপ বিশ্বাস, জুনিয়র কনসালট্যান্ট মৌমিতা দাশ, সিভাসুর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ত্রিদীপ দাশ, সিভাসুর মলিকিউলার বায়োলজিস্ট প্রণেশ দত্ত, সিরাজুল ইসলাম ও তানভির আহমেদ নিজামী।

আরও পড়ুন