Advertisement
Doctor TV

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছেন যেসব নারী বিজ্ঞানী

Main Image

(বাঁ থেকে ঘড়ির কাঁটা অনুসারে): গার্টি কুরি, রোজালিন ইয়ালো, বারবারা ম্যাকলিন্টক, এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন, ফ্রঁসোয়াজ বারে-সিনুসি‌, লিন্ডা বি বাক ও ক্যারল গ্রেইডার‌


চিকিৎসাবিদ্যায় বিশেষ অবদানের জন্য প্রতিবছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ১১১ জন চিকিৎসা বিজ্ঞানী চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার অর্জনের গৌরব লাভ করেছেন। এ পর্যন্ত ৫৪ জন নারী এই পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসাবিজ্ঞানে পেয়েছেন ১২জন নারী। সফল এ চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের নিয়েই এবার ডক্টর টিভির বিশেষ আয়োজন

গার্টি কোরি: পুরো নাম গার্টি থেরিসা কোরি। চেক রিপাবলিকে জন্ম নেওয়া অস্ট্রিয়ান-আমেরিকান বায়োকেমিস্ট। শরীর কিভাবে শক্তিকে ব্যবহার করে তা নিয়ে গবেষণা করেছেন। ‘কোরি সাইকেল’ নামে মেটাবোলিজমের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ আবিষ্কার করেন।

১৯৪৭ সালে প্রথমবারের মতো চিকিৎসায় তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। চিকিৎসা শাস্ত্রে নারীদের মধ্যে প্রথম নোবেল বিজয়ী তিনি।

রোজালিন ইয়ালো: রোজালিন সাসম্যান ইয়ালো ১৯২১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। মার্কিন চিকিৎসা পদার্থবিদ এবং রেডিওইমিউনোঅ্যাসে বা রেডিও প্রতিরোধ পরীক্ষা (আরআইএ) পদ্ধতি উন্নয়নের জন্য যৌথভাবে ১৯৭৭ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান। তার সঙ্গে অন্য বিজয়ীরা হলেন রজার গুলেমিন এবং অ্যান্ড্রু শ্যাচলি।

চিকিৎসায় নোবেল বিজয়ীদের তালিকায় তিনি ছিলেন নারীদের মধ্যে দ্বিতীয়। আর মার্কিন বংশোদ্ভূত প্রথম নারী।

রোজালিন সাসম্যান ইয়ালো জন্মেছিলেন নিউয়র্কের ব্রোনেস্ক শহরে। তিনি বেড়ে উঠেছেন ইহুদী পরিবারে।

মানবদেহে পদার্থ পরিমাপ করে হেপাটাইটিস জাতীয় রোগের জন্য দাতাদের রক্তের স্ক্রিনিং করা সম্ভব হয়েছিল।

জীবাণুর অভ্যন্তরে বা বাইরে তরলের মধ্যে ক্ষুদ্র পরিমাণে পাওয়া যায় এমন প্রচুর পরিমাণ পদার্থ পরিমাপ করতে রেডিওইমিউনোঅ্যাসে (আরআইএ) ব্যবহার করা যেতে পারে (যেমন ভাইরাস, ড্রাগ এবং হরমোন)। বর্তমানে সম্ভাব্য ব্যবহারের তালিকা অসীম, তবে বিশেষত, আরআইএ রক্ত-অনুদানের বিভিন্ন ধরনের হেপাটাইটিসের জন্য স্ক্রিনিং করা যায়। এই কৌশলটি হরমোনজনিত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি শনাক্ত করতেও ব্যবহার করতে সহায়ক।

আরও, কিছু ক্যান্সারসহ অনেক ভিন্ন পদার্থ রক্তে শনাক্ত করতে আরআইএ ব্যবহার সহায়ক। অবশেষে, কৌশলটি অ্যান্টিবায়োটিক এবং ওষুধের মাত্রার কার্যকারিতা পরিমাপ করতেও সহায়তা করে।

বারবারা ম্যাকলিন্টক: ১৯৮৩ সালে চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার জয়লাভ করেন মার্কিন জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক বারবারা ম্যাক্‌লিন্টক। ১৯০২ সালে জন্ম নেওয়া এ বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম অবস্থান পরিবর্তনে সক্ষম বংশগতির উপাদান (Transposable Genetic Element) আবিষ্কার করেন।

তিনি প্রথম ভুট্টা ক্রোমোসোমে এই উপাদান আবিষ্কার করেন। পরবর্তিতে ব্যাক্টেরিয়া, ইস্ট সহ আরও অন্যান্য জীবে ট্রান্সপোজেবল জেনেটিক এলিমেন্ট বা জাম্পিং জিন (লম্ফনকারী জিন) আবিষ্কার হয়।

অধ্যাপক বারবারা ম্যাক্‌লিন্টক সর্বপ্রথম ভুট্টার দানার উপরের বিভিন্ন রঙের দাগ ও ফোঁটার বংশগতির কারণ উম্মেচনে গবেষণা করেন। তখন এর কারণ হিসেবে তিনি একধরনের বংশগতির উপাদান (ক্রোমোসমেরই অংশ) চিহ্নিত করেন যা কিনা একই ও বিভিন্ন ক্রোমোসোমের মধ্যে স্থানান্তর হতে পারে। তিনি এর নাম দেন ট্রান্সপোসেবল জেনেটিক এলিমেন্ট।

১৯৪৮ সালে তিনি প্রথম তার প্রস্তাবনা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে তার আরও বিভিন্ন প্রকাশনা বের হয়, এর মধ্যে ১৯৫১ সালে প্রকাশিত Cold Spring Harbor Symposium on Quantitative Biology এর প্রকাশনাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিভিন্ন কারণে তার প্রস্তাবনা গৃহীত হয়নি।

প্রকাশনার তথ্য অনেক জটিল ছিল, ফলে তার সহকর্মীদের তা বুঝানো কঠিন হয়ে পরে। তাছাড়া বংশগতি উপাদানের স্থানপরিবর্তিন ভুট্টা ছাড়া, অন্য কোনো জীবে দেখা যায়নি। বিধায়, এটা জীব জগতের কোন সাধারণ ঘটনা হিসেবে পরিগণিত হয় নি। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় ষাট ও সত্তরের দশকে।

তখন ব্যাক্টেরিয়া ও ড্রসোফিলাতে ট্রান্সপোসেবল জেনেটিক এলিমেন্ট আবিস্কৃত হয়। তখন বিজ্ঞানীরা ম্যাক্‌লিন্টকের আবিষ্কারের গুরুত্ব বুঝতে পারেন। এই আবিষ্কারের ৩৫ বছর পর ১৯৮৩ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯২ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

রিটা লেভি মন্টালচিনি
টিউমারের চিকিৎসা, ক্ষত সারানোর ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় রিটা লেভি মন্টালচিনি

রিটা লেভি মন্টালচিনি: ১৯৮৬ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল জয় করেন ইতালিয়ান নিউরো বায়োলজিস্ট রিটা লেভি মন্টালচিনি।

‘নার্ভ গ্রোথ ফ্যাক্টর’ নিয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা রয়েছে। টিউমারের চিকিৎসা, ক্ষত সারানোর ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে এই নার্ভ গ্রোথ ফ্যাক্টর।

কিংবদন্তি এ চিকিৎসাবিজ্ঞানীর বিখ্যাত উক্তি-‘কঠিন মুহূর্তগুলোকে ভয় করবেন না। সেরা জিনিস সেগুলো থেকেই আসে।’

গ্রেট্রুর্ড বি এলায়োন: ক্যানসারে দাদার মৃত্যু গ্রেট্রুর্ড বি এলায়োনের জীবনকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। তাই তিনি তার জীবনব্যাপী ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন। জৈব রসায়নে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখে ক্যানসারের ওষুধ উদ্ভাবনে ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৮৮ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ী।

ক্রিশ্চিয়ান ন্যুসলেইন ভোলহার্ড: ১৯৯৫ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান জার্মান জীন বিশারদ ক্রিশ্চিয়ান ন্যুসলেইন ভোলহার্ড। ‘কামিং টু লাইফ’ তার প্রথম প্রকাশিত বই। মাছির জীনগত বিবর্তন নিয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। 

লিন্ডা বি বাক: মার্কিন জীববিজ্ঞানী লিন্ডা ব্রাউন বাক ২০০৪ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ নোবেল পুরস্কার পান।

ব্রাউন ১৯৭৫ সালে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, সিয়াটল থেকে অণুজীববিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮০ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

ফ্রঁসোয়াজ বারে-সিনুসি‌: ২০০৮ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ফরাসি ভাইরাসবিজ্ঞানী ফ্রঁসোয়াজ বারে-সিনুসি‌। তিনি এইচআইভি ভাইরাস আবিষ্কারের জন্য এ পুরস্কার লাভ করেন।

এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন: ২০০৯ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন অস্ট্রেলীয় বংশদ্ভূত মার্কিন গবেষক এলিজাবেথ হেলেন ব্ল্যাকবার্ন।

১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া এ বিজ্ঞানী জীবের ক্রোমজোমের টেলোমারে সম্পর্কিত গবেষণা করেন। তিনি যৌথভাবে টেলোমারেজ এনজাইম আবিস্কারের জন্য তিনি বিশ্বের মর্যাদাবান এ পুরস্কার পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবরসায়নের উপর কাজ করছেন।

এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়াস্থ হোবার্টে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা উভয়েই চিকিৎসক ছিলেন।

ক্যারল গ্রেইডার‌: মার্কিন জীববিজ্ঞানী ক্যারল গ্রেইডার‌ ২০০৯ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬১ সালে জন্ম নেওয়া গ্রেইডার ১৯৭৯ সালে ডেভিস সিনিয়র হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েট হন।

১৯৮৩ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা বারবারা থেকে জীববিজ্ঞানে ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৯৭ সালে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এ শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

ইউ ইউ টু
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে অবিস্মরণীয় অবদান রাখায় নোবেল পুরস্কার জেতেন ইউ ইউ টু

ইউ ইউ টু্: চীনের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতির একজন প্র্যাক্টিশনার তিনি। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে যুগান্তকারী ভূমিকার জন্য এই নারী চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ইউ ইউ টু ২০১৫ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল জয় করেন।

মে ব্রিট মোজার: ২০১৫ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পদক পান নরওয়েজিয়ান মনোবিজ্ঞানী মে ব্রিট মোজার। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য মস্তিষ্কের যে কোষ সংরক্ষণ করে তার পরিচয় সারা দুনিয়ার কাছে তুলে ধরেছেন এ চিকিৎসাবিজ্ঞানী।

আরও পড়ুন