
ছবিঃ ডক্টরটিভি
দেশে ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী। এর মাঝে দেশে এক–চতুর্থাংশ নারী গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। এমন পরিস্থিতিতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এর উপর জনসচেতনতা সৃষ্টিতে রবিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
সকালে এক বর্ণাঢ্য র্যালির মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপী কর্মসূচীর। র্যালির উদ্বোধন করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
ফেটো মেটারনাল মেডিসিন ইউনিটের উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. ফিরোজা বেগম।
ইউনিট হেড অধ্যাপক ডা. নাসরিন আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন গাইনি এন্ড অবস ডিপার্টমেন্টের প্রধান অধ্যাপক ডা. রাশিদা খানম, অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মুসাররাত সুলতানা সহ আরো অনেকে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ডায়াবেটিস বিস্তার ও ব্যবস্থাপনার উপর প্রেসেন্টেশন প্রদান করেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আরিফা শামিম মায়া ও কনসালটেন্ট ডা. হাফিজা ফারজানা
ডায়াবেটিসের বিস্তার ও সচেতনতার উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওজিএসবি প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. ফিরোজা বেগম বলেন, “ দেশে এখন ৩৪-৩৭% মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যার ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও আজ রয়েছে ঝুঁকির মাঝে। তাদের জন্য আমাদের ডাক্তারদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সেমিনারে আসলাম শুনলাম এবং ভুলে গেলাম এমন যাতে না হয়।
গর্ভবতী মায়েদের স্ক্রিনিং এর ব্যপারে তিনি বলেন, উচ্চ ঝুঁকি থাকলে মায়েদের স্ক্রিনিং টেস্ট দিতে হবে। উন্নত দেশ গুলোতে এই রকমের টেস্ট গুলো খরচ সরকার বহন করে। তাই কোন মায়ের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকলে সাথে সাথেই তাকে স্ক্রিনিং টেস্টের ভিতর দিয়ে নিতে হবে। আমাদের রোগীদের চিকিৎসায় আরো বেশি সচেতন হতে হবে এবং দেশের জন্য কাজ করে যেতে হবে।“
সন্মানিত অতিথি হিসেবে গাইনি এন্ড অবস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. রাশিদা খানম বলেন, মেডিকেল কলেজ হিসেবে আমাদের গবেষণা নেই এই দিকে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। ডায়াবেটিস শুধু ব্যক্তিগত সমস্যা নয়; এটি পরিবার, সমাজ এবং পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নিয়মিত পরীক্ষা, সময়মতো রোগ নির্ণয়, ডায়েট কাউন্সেলিং, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ফলোআপ—সবই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করলে অনেক জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।“
সবশেষে ইউনিট হেড অধ্যাপক ডা. নাসরিন আখতার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, “আজকের এই বৈজ্ঞানিক সেমিনার আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে—গর্ভকালীন ডায়াবেটিস—সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা। বর্তমানে দেশে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন, এবং গর্ভবতী নারীদের মধ্যে এ রোগের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্বাস্থ্যের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করলে অবশ্যই এ ঝুঁকি কমানো সম্ভব।“
ডা. অনামিকা দেব ও ডা. মাহবুবা আনমনার সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য অতিথিরা গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের ডায়াবেটিসের বিস্তার রোধ ও ডাক্তারদের ভূমিকা সম্পর্কে গুরুত্ব প্রদান করেন। দেশে এক–চতুর্থাংশ নারী গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ভবিষ্যতে মহামারির মতো এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে তাই রোগ নিয়ন্ত্রণে তাই এখন থেকেই সচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন