ছবিঃ বাসস
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আগামী নভেম্বর মাস থেকে একটি বিশেষ সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে। এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)-এর সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
প্রাথমিক ভাবে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে ধাপে ধাপে এ সেবা প্রদান করা হবে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতোমধ্যে একটি মডিউল চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার ইউজিসি ও ইউনেস্কোর যৌথআয়োজনে কমিশনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত দু’দিনব্যাপী কর্মশালা ‘ট্রেইনিং ম্যাটেরিয়াল অ্যান্ড ম্যানুয়াল ডেভেলপমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর আনোয়ার হোসেন এ তথ্য দেন।
অনুষ্ঠানে ইউজিসি’র ইন্টারন্যাশনাল কোলাবরেশন বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোছা. জেসমিন পারভিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মাছুমা হাবিব।
প্রফেসর আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি বিশেষ মডিউল তৈরি করা হচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার এ মডিউলে শিক্ষার্থীদের কী ধরনের সেবা প্রয়োজন তাঅন্তর্ভুক্ত থাকবে। তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের বিষয়টি সংযুক্ত করা দরকার। এছাড়া, নতুন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক বোঝাপড়া উন্নয়ন জরুরি। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও পেশাদার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।
প্রফেসর মাছুমা হাবিব বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য ইউনেস্কোর সহায়তায় ইউজিসি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের উন্নয়ন এবং সহানুভূতিশীল আচরণের বিকাশ ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ক্লাব প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। এছাড়া, শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে অভিভাবকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
ইউজিসি’র পরিচালক মোছা. জেসমিন পারভিন বলেন, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যসুরক্ষায়ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
ইউনেস্কোর প্রতিনিধি রাজু দাস বলেন, এই মডিউলটি আবেগিক বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক দক্ষতা ও জীবনদক্ষতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের সচেতন অংশগ্রহণ ও সমাজমুখী আচরণে সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, ইউনেস্কোর প্রত্যাশা—মডিউলের বিষয়বস্তু হবে নির্দিষ্ট, ভারসাম্যপূর্ণ, সাংস্কৃতিকভাবে সংযুক্ত ও বিকাশগতভাবে প্রাসঙ্গিক।এটি কেবল শেখার উপকরণনয়, বরং একটি পদ্ধতিগত পরিবর্তনের উদ্যোগ। এই মডিউলের মাধ্যমে সামাজিক-আবেগিক সুস্থতা শিক্ষা নীতিমালা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোরসঙ্গে একীভূত হবে, যা টেকসইউন্নয়ন অভীষ্ট (SDGs) অর্জনে বাস্তব অবদান রাখবে।
কর্মশালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সৈয়দ তানভীর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মো. রাফিউজ্জামান বক্তব্য রাখেন।
কর্মশালায় ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা, কাউন্সিলর, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং ইউজিসি কর্মকর্তারা অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ইউজিসি ও ইউনেস্কো জুলাই–আগস্ট ২০২৪-এর চেতনা বোধকে সামনে রেখে সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও মানসিক চাহিদাসমূহনিরূপণে একটি ট্রেইনিং ম্যানুয়াল তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন