Ad
Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫


বিএমইউর গবেষণায় উদ্বেগ: এক বছরে বিশ্লেষিত ৪৬ হাজার নমুনায় বহু ওষুধ অকার্যকর

Main Image


বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) গত এক বছরে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের উদ্যোগে ৪৬ হাজার ২৭৯টি রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়া গেছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ও অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, সেফট্রিয়াক্সোন, জেন্টামাইসিন, মেরোপেনেম, টিগেসাইক্লিনসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারাচ্ছে। রোগীর দেহে জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা (রেজিস্ট্যান্স) তৈরি হওয়ায় চিকিৎসা জটিল ও দীর্ঘ হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকিও।

 

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিএমইউতে বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স রিপোর্ট ২০২৪–২০২৫’ প্রকাশ করা হয়। “এখনই পদক্ষেপ নিন, আমাদের বর্তমানকে রক্ষা করুন, আমাদের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করুন”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে বিএমইউর মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগ এ সপ্তাহ পালন করে।

 

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) এমন একটি পরিস্থিতি, যেখানে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা পরজীবী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধে আর সাড়া দেয় না। ফলে সংক্রমণ নিরাময় কঠিন হয়ে পড়ে এবং সাধারণ রোগও প্রাণঘাতী রূপ নিতে পারে। ভুল ও অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণেই মূলত এই বিপজ্জনক প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে উঠছে, যা বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।

 

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের মতো সংকট মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই দায়িত্ব নিতে হবে। গবেষণা, কার্যকর গাইডলাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বিএমইউকে নেতৃত্ব দিতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, এএমআরের চ্যালেঞ্জ কঠিন হলেও সমাধান অসম্ভব নয়, বরং সমাধানের পথ দেখানোই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব।

 

ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান সতর্ক করে বলেন, আগামী ১০–১৫ বছরের মধ্যে মানবজাতি আবার এমন সময়ের মুখোমুখি হতে পারে, যখন ওষুধ থাকলেও তা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর হবে না। সে কারণেই বিশ্বব্যাপী এএমআরকে ‘মহাবিপর্যয়’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

 

প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ইতোমধ্যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এবং এ সমস্যা মোকাবিলায় সবার সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্বে থাকা মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার বলেন, অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, নিজ উদ্যোগে ওষুধ সেবন, অসম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ এবং পশুপালনে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণেই জীবাণুগুলো ধীরে ধীরে ওষুধ-প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এর ফলে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে, আইসিইউ ভর্তি ও মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি সবাইকে কেবল চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের আহ্বান জানান এবং হাত ধোয়া, টিকাদান, নিরাপদ খাদ্য ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণকে এএমআর প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে তুলে ধরেন।

 

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা উপস্থিত থেকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

আরও পড়ুন