Ad
Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫


নবজাতকসহ রোগীদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণ উদ্বেগজনক: আইসিডিডিআরবি

Main Image

ছবিঃ সংগৃহীত


বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী জীবাণুর সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এমনই তথ্য উঠে এসেছে আইসিডিডিআরবি পরিচালিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায়। বিশেষত নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ভর্তি শিশুদের মধ্যে এ সংক্রমণের মাত্রা ভয়াবহভাবে উদ্বেগজনক।

 

শনিবার আইসিডিডিআরবি’র মহাখালী ক্যাম্পাসের সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলা: আর্চ স্টাডি থেকে প্রাপ্ত অন্তর্দৃষ্টি’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বিষয়টি জানানো হয়।

 

আইসিডিডিআরবি’র সহযোগী বিজ্ঞানী ও এএমআর গবেষণা ইউনিটের প্রধান ডা. ফাহমিদা চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং টাস্ক ফোর্স ফর গ্লোবাল হেলথ (টিএফজিএইচ)-এর সহায়তায় পরিচালিত বহু-দেশীয় আর্চ স্টাডি-এর ফলাফল উপস্থাপন করেন।

 

বাংলাদেশে এ ধরনের প্রথম গবেষণায় কমিউনিটি ও হাসপাতাল উভয় পরিবেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধী জীবাণুর উপস্থিতি ও বিস্তার পদ্ধতিগতভাবে পরীক্ষা করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, জীবাণু শরীরে বা শরীরের উপর অবস্থান করলেও তাৎক্ষণিকভাবে রোগের লক্ষণ দেখা না দিলেও সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং গুরুতর সংক্রমণ তৈরি করতে সক্ষম।

 

২০১৯ সালের আর্চ ১.০ গবেষণায় দেখা যায়, সুস্থ মানুষ ও হাসপাতালে ভর্তি রোগী উভয়ের মধ্যেই প্রতিরোধী জীবাণুর উপস্থিতি অত্যন্ত বেশি। কমিউনিটিতে ৭৮ শতাংশ এবং হাসপাতালে ৮২ শতাংশ ক্ষেত্রে এক্সটেন্ডেড-স্পেকট্রাম সেফালোস্পোরিন-প্রতিরোধী এন্টারোব্যাকটেরেলস পাওয়া যায়। হাসপাতালের ৩৭ শতাংশ রোগীর শরীরে কার্বাপেনেম-প্রতিরোধী এন্টারোব্যাকটেরেলস ধরা পড়ে, যা কমিউনিটিতে মাত্র ৯ শতাংশ।

 

এছাড়া কমিউনিটির ১১ শতাংশ ও হাসপাতালের ৭ শতাংশ রোগীর মধ্যে কোলিস্টিন-প্রতিরোধী জীবাণু শনাক্ত হয়। একইভাবে, প্রতি পাঁচজন অংশগ্রহণকারীর একজনের শরীরে মেথিসিলিন-প্রতিরোধী স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস পাওয়া গেছে। ২,৬০০-রও বেশি জীবাণুর পুরো জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার জিনগত বৈচিত্র্য ধরা পড়ে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

 

পরবর্তী ধাপের আর্চ ২.০ গবেষণায় সমালোচনামূলক পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি উঠে আসে। এনআইসিইউ-তে ভর্তি নবজাতকদের মধ্যে ৮১ শতাংশ (৪২৩ জনের মধ্যে ৩৪২ জন) কার্বাপেনেম-প্রতিরোধী ক্লেবসিয়েলা নিউমোনি দ্বারা সংক্রমিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে শীর্ষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত রোগজীবাণু হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নবজাতকদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ ভর্তি হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সংক্রমিত হয়, যা উচ্চমাত্রার হাসপাতাল-উৎপন্ন সংক্রমণের প্রমাণ দেয়।

 

প্রাপ্তবয়স্কদের আইসিইউ-তেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সেখানে ৬০ শতাংশ রোগীর শরীরে সিআরই পাওয়া গেছে, যা দীর্ঘায়িত ভর্তি সময় ও জটিল সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত। মা-শিশু জুটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, জন্মের প্রথম বছরের মধ্যেই প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু সিআরই এবং ৯০ শতাংশ শিশু ইএসসিআরই দ্বারা সংক্রমিত হয়। হাসপাতালে ৭২ ঘণ্টার বেশি থাকা শিশুদের মধ্যে এ হার সবচেয়ে বেশি। একইসঙ্গে, এক বছরের মধ্যেই ৮০ শতাংশের বেশি শিশু অন্তত একবার অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেছে যা মাইক্রোবায়োম ক্ষতি ও প্রতিরোধী জীবাণুর বিকাশ নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করছে।

 

গবেষকরা আরও জানান, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ (আইপিসি) ব্যবস্থা যেমন স্বাস্থ্যকর্মীদের হাত ধোয়ার অভ্যাস ও হাসপাতালের পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা জোরদার করা এনআইসিইউ-তে সংক্রমণ ও রক্তে জীবাণুর প্রবেশ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।

 

ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সাইদুর রহমান গবেষণার ফলাফলকে “চরম উদ্বেগজনক হলেও অত্যন্ত মূল্যবান” বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ ফলাফল ভবিষ্যতে এএমআর মোকাবিলায় কৌশল নির্ধারণ ও কার্যকর হস্তক্ষেপের পথ দেখাবে।

 

আইসিডিডিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের আহ্বান জানান। তার মতে, আগে যেমন ঘুমের ওষুধে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছিল, তেমন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তিনি আরও বলেন, “অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ একটি বহুখাতীয় সমস্যা, যা সমাধানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।”

 

যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি’র ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ব্রায়ান হুইলার বলেন, “এএমআর একটি জটিল বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, যা বিজ্ঞানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অর্থনীতি ও নীতিনির্ধারণেও বহুমুখী সমাধান দাবি করে।”

অনুষ্ঠানে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শেখ সাইদুল হক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানি বক্তব্য রাখেন।

সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, হাসপাতাল ব্যবস্থাপক ও উন্নয়ন সহযোগীরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। তারা জীবনরক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে শক্তিশালী নজরদারি, উন্নত হাসপাতাল সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং যৌক্তিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
 

আরও পড়ুন