ছবিঃ প্রতীকী
বিকল্প চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ৩৫৪ জন চিকিৎসক ও শিক্ষক দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে বেতন ছাড়াই সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে চলেছেন। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো প্রকার পারিশ্রমিক না পেলেও সরকারি হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ফলে তারা চরম মানবিক ও আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির দাবিতে রোববার, ৭ সেপ্টেম্বর, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনের আয়োজন করেন তারা। সেখানে অংশ নিয়ে চিকিৎসক ও শিক্ষকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সরকারের মৌখিক ও লিখিত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের কথা ছিল। এমনকি স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় তাদের আউটসোর্সিংয়ের আওতায় নেওয়ার সুপারিশ করা হয়, যা তাদের কাছে একদিকে যেমন মর্যাদাহানিকর, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য গভীর অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত বহন করে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০১৪ সাল থেকে তারা স্বাস্থ্যখাতের বিকল্প চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবায় সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সরকারি প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ পাওয়া হলেও আজ পর্যন্ত কোনো স্থায়িত্ব বা নিশ্চয়তা নেই। দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে তারা বিনা বেতনে সেবা দিয়ে চলেছেন, অথচ এখন তাদের চাকরি আউটসোর্সিংয়ের আওতায় নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যা তাদের আত্মমর্যাদা এবং পেশাগত স্বীকৃতির পরিপন্থী।
ফোকাল পার্সন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. মীর্জা লুতফর রহমান লিটন। তিনি বলেন, সরকার আমাদের প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ দিয়েছে, আমরা নিরলসভাবে জনগণের সেবা দিয়ে চলেছি। আমরা কারও কাছে হাত পাতিনি, বরং দায়িত্ববোধ থেকেই কাজ করে গেছি। অথচ এতদিনেও আমরা বেতন পাইনি, বরং এখন আমাদের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ফেলা হচ্ছে। এই অবস্থায় তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যেন দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধ করে তাদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হয় এবং পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ডা. মুস্তাফিজুর রহমান সোহান বলেন, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শুধু দেশে নয়, বিশ্বব্যাপীই একটি স্বীকৃত বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশেও এসব চিকিৎসা সাধারণ মানুষের নিকট জনপ্রিয় এবং কার্যকর। ইতোমধ্যে এই প্রকল্প থেকে অনেক চিকিৎসক রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অথচ এখনো ৩৫৪ জন চিকিৎসক ও শিক্ষককে দীর্ঘদিন ধরে বেতনবিহীন রেখে অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখা হয়েছে, যা একদিকে যেমন মানবিক সংকট তৈরি করেছে, অন্যদিকে চিকিৎসা সেবার ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত করে তুলছে।
তিনি বলেন, অনেক কর্মকর্তা এখন ঋণে জর্জরিত, পরিবারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে, সন্তানদের লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি আর চলতে দেওয়া যায় না। বক্তারা বলেন, যদি এই সংকটের সমাধান না হয়, তাহলে চিকিৎসা সেবায় বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটবে এবং এর প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপরই।
তারা জোর দিয়ে বলেন, এই অবহেলা শুধু একটি পেশাজীবী শ্রেণির প্রতি নয়, বরং জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিকল্প চিকিৎসা খাতের প্রতি অবজ্ঞারই প্রকাশ। সরকার যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে এই সংকট আরও ঘনীভূত হবে এবং জাতীয় স্বার্থই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরও পড়ুন