ছবিঃ সংগৃহীত
চীনা বিজ্ঞানীরা এমন একদল বাদুড়ের দেহে একাধিক নতুন ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন, যারা মানুষের বসবাসের আশেপাশে বাস করে। এই ভাইরাসগুলোর মধ্যে দুটি আবার মারাত্মক নিপাহ এবং হেন্ড্রা ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় যেগুলো মানবদেহে মারাত্মক মস্তিষ্কের প্রদাহ ও শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
এই গবেষণাটি ২৪ জুন PLOS Pathogens জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে মানুষসংলগ্ন অঞ্চলে বসবাসকারী বাদুড় ও অন্যান্য প্রাণীদের নিয়মিত নজরদারির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি, এই প্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সরাসরি সংস্পর্শ এড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
বাদুড় বহু রোগজীবাণুর প্রাকৃতিক বাহক, যেগুলো মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। কিন্তু তাদের শরীরে থাকা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণুর পুরো চিত্র এখনো পরিষ্কার নয়। পূর্ববর্তী বেশিরভাগ গবেষণাই বাদুড়ের বিষ্ঠা বিশ্লেষণেই সীমাবদ্ধ ছিল, কারণ তা সংগ্রহ করা সহজ। তবে বিষ্ঠার মাধ্যমে শুধু সেই ভাইরাসগুলোর অস্তিত্ব বোঝা যায়, যেগুলো মলত্যাগের সময় দেহ থেকে নির্গত হয়।
এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার জন্য, ইউন ফেং-এর নেতৃত্বে চীনের ইউনান প্রদেশে ১০টি প্রজাতির ১৪২টি বাদুড়ের কিডনি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালানো হয়। জিন বিশ্লেষণের মাধ্যমে ২২টি ভাইরাস শনাক্ত করা হয়, যার মধ্যে ২০টি আগে কখনো দেখা যায়নি। এছাড়া একটি নতুন প্রোটোজোয়া পরজীবী ও দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়াও পাওয়া যায়, যার একটি বিজ্ঞানীদের কাছে একেবারেই নতুন।
গবেষণার সহ-লেখক এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট এডওয়ার্ড হোমস বলেন, কিডনি পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি বলে দিতে পারে কোন ভাইরাসগুলো মূত্রের মাধ্যমে বের হতে পারে। আর মূত্র হতে পারে মানুষের সংক্রমণের একটি পথ। “বাদুড়ের মূত্র খেজুর রসের হাঁড়িতে পড়ে প্রথম নিপাহ ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছিল,” বলেন হোমস। এই গবেষণায় যেসব বাদুড় ছিল, তারা গ্রামাঞ্চলের ফলবাগানের আশেপাশে বাস করছিল, তাই আক্রান্ত ফলের মাধ্যমে এসব ভাইরাস গবাদিপশু বা মানুষের শরীরে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
যদিও এই নতুন ভাইরাস দুটি নিপাহ ও হেন্ড্রা ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ বলে শনাক্ত হয়েছে, তবুও তা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানান হোমস। “এই ভাইরাসগুলো এখনো পর্যন্ত মানুষের শরীরে পাওয়া যায়নি এবং এমন কোনো প্রমাণ নেই যে এগুলো ভবিষ্যতে মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটাবে,” বলেন তিনি। “তাত্ত্বিকভাবে এগুলোর ঝুঁকি থাকতে পারে, কিন্তু যেহেতু কোনো মানব সংক্রমণ দেখা যায়নি, তাই আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।”
তবে এই আবিষ্কার মানুষ-সংলগ্ন অঞ্চলে বসবাসরত বন্য প্রাণীদের ওপর নজরদারির প্রয়োজনীয়তা আবারও প্রমাণ করে। একইসঙ্গে, যারা এসব প্রাণীর সংস্পর্শে আসতে পারে এমন মানুষের ওপরও নজরদারি চালানো দরকার, যাতে কোনো ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢোকার আগেই তা শনাক্ত করা যায়। “এই দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা মানুষ-প্রাণী সীমান্তই মহামারির জন্ম দেয়,” বলেন হোমস। “মহামারি সবসময়ই প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষের হস্তক্ষেপের ফল। উন্নত নজরদারিই একমাত্র উপায় যা আমাদের ভবিষ্যতের বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।”
আরও পড়ুন