Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫


সিন্থেটিক জিনোম তৈরিতে গবেষণার নতুন দিগন্ত

Main Image

ছবিঃ সংগৃহীত


যুক্তরাজ্যে এক যুগান্তকারী গবেষণা প্রকল্প শুরু হয়েছে, যেখানে বিজ্ঞানীরা বিশ্বের প্রথম সিন্থেটিক মানব ক্রোমোজোম তৈরির প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছেন।

এই গবেষণা বৃহত্তর একটি বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার অংশ, যার লক্ষ্য হলো বড় পরিসরে জিনোম তৈরি করা যায়। এটি আমাদের মানব স্বাস্থ্য ও জিনতত্ত্ব সম্পর্কে ধারণাকে আমূল বদলে দিতে পারে। এর সম্ভাব্য ফলাফল অসীম কোষভিত্তিক চিকিৎসা, জীবাণুরোধী টিস্যু, এমনকি জলবায়ু সহনশীল ফসল তৈরির পথও খুলে যেতে পারে।

 

২০০৩ সালে হিউম্যান জিনোম প্রকল্প (Human Genome Project) সম্পন্ন হওয়ার পর থেকেই বিজ্ঞানীরা শুধু জিন পড়ে নয়, বরং জিন লিখে মানবজীবনের রহস্য আরও গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রযুক্তিগত অনেক অগ্রগতির ফলে এখন এই স্বপ্ন বাস্তবের পথে এগোচ্ছে। এই উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিতে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা Wellcome নতুন একটি প্রকল্প Synthetic Human Genome Project (SynHG) এ ১ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করছে। আগামী পাঁচ বছরে এই প্রকল্পের প্রথম ধাপ হবে একটি সম্পূর্ণ মানব ক্রোমোজোম কৃত্রিমভাবে তৈরি করা, যা ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ জিনোম সিনথেসিসের ভিত্তি তৈরি করবে।

 

এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং Ellison Institute of Technology-এর প্রফেসর জেসন চিন, যিনি জেনারেটিভ বায়োলজি ইনস্টিটিউটের একজন বিজ্ঞানী। তার সঙ্গে কাজ করছেন কেমব্রিজ, কেন্ট, ম্যানচেস্টার ও ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা।

 

এর গুরুত্ব 

জিন সম্পাদনার (genome editing) চেয়ে জিনোম সিনথেসিস আরও বড় পরিসরে পরিবর্তন আনার সুযোগ দেয়। এতে করে ডিএনএ ও মানব বৈশিষ্ট্যের মধ্যকার কারণগত সম্পর্ক নির্ণয় করা সম্ভব হবে, যা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট নয়।

এর সম্ভাব্য ব্যবহারগুলো:

  • ১। উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তি: যেমন ভাইরাস প্রতিরোধী কোষ, জিননির্ভর থেরাপি, এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপনের নতুন উপায়
  • ২। জলবায়ু সহনশীল ফসল: যা ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে সাহায্য করবে
  • ৩। মানব দেহ ও রোগ সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান বৃদ্ধি

 

সামাজিক সম্পৃক্ততা

এই গবেষণাকে সমাজের জন্য উপযোগী করে তুলতে, SynHG প্রকল্পে শুরু থেকেই একটি জনসম্পৃক্ততা বিষয়ক গবেষণা প্রোগ্রাম সংযুক্ত করা হয়েছে Care-full Synthesis। এটি পরিচালনা করছেন কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জয় ঝ্যাং।

 

এই বৈজ্ঞানিক প্রজেক্ট পৃথিবীর নানা প্রান্ত ইউরোপ, এশিয়া-প্যাসিফিক, আফ্রিকা ও আমেরিকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখবে:

  • ১। বিভিন্ন সমাজ এই গবেষণাকে কীভাবে দেখছে
  • ২। বৈচিত্র্যময় জনমত কীভাবে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়
  • ৩। কীভাবে নতুন জ্ঞান ন্যায্যভাবে ও দায়িত্বের সঙ্গে ভাগ করা যায়
  • ৪। এবং কী ধরণের নীতিমালা প্রয়োজন, যেন গবেষণার ফলাফল সবার উপকারে আসে

 

বর্তমানে জিনতত্ত্ব গবেষণা মূলত ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য এই প্রযুক্তিকে সব মানুষের জন্য সমানভাবে উপকারী করতে হলে, ভিন্ন জাতি ও অঞ্চলভিত্তিক চাহিদা, মতামত ও সামাজিক বাস্তবতা গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করাটা অত্যন্ত জরুরি।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকেরা একত্রে কাজ করবেন, যাতে এই প্রযুক্তিগত সম্ভাবনাগুলো বাস্তব উপকারে পরিণত হয়, এবং তা হয় ন্যায়সংগত, নৈতিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক।

আরও পড়ুন