বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবকে ‘এলার্মিং’ বলে জানালেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। বুধবার (১৮ জুন) বিকেলে আইইডিসিআর মিলনায়তনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় ‘ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার কীটতাত্ত্বিক জরিপ ২০২৪-২৫’ এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, ‘ডেঙ্গু একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি চ্যালেঞ্জ, শুধু স্বাস্থ্য অধিদফতর এককভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ডেঙ্গু মোকাবিলার দায়িত্বটা আসলে মাল্টিডিসিপ্লিনারি। এখানে স্থানীয় সরকার এবং সিটি করপোরেশনও আমাদের অংশীদার। আমরা মূলত কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার বিষয়টা দেখি। এর বাইরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে কাজ করে বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান।’
রাজধানীসহ সারাদেশের তুলনায় বরগুনায় ডেঙ্গু সংক্রমণের হার অনেক বেশি বলে উল্লেখ তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য এলার্মিং।’
তবে সংকট মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদফতর দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরর মহাপরিচালক বলেন, ‘বরগুনায় আমরা সাড়ে ১৩ হাজার স্যালাইন পাঠিয়েছি। হাসপাতালের খাবার-দাবার নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলব, যদি কোনো সংকট থাকে, সেটি মোকাবিলা করব। এতদিন আমাদের স্যালাইনের সংকট ছিল, এই সংকট মোকাবিলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
ডেঙ্গু রোগীদের জটিলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে সব সময়ই জ্বর নিয়ে সচেতন থাকি না। চিকিৎসা নিতে যাই জ্বর হওয়ার কয়েকদিন পর। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীদের জন্য এটি এলার্মিং। অবহেলার করে যথাযথ চিকিৎসা না নেওয়ার কারণেই মূলত ডেঙ্গু রোগীর জটিলতা বাড়ে।’
আইইডিসিআরের জরিপে দেখা যায়—ঢাকার বহুতল ভবনের ৫৮.৮৮ শতাংশে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, যেখানে গত বছর মে মাসে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ। এক বছরে এই হার ১৬ শতাংশ বেড়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০ শতাংশের বেশি পাওয়া গেছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত ঝুঁকির সীমার উপরে।
ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ঝিনাইদহ (৬০%), মাগুরা (৫৫.৫৬%), পিরোজপুর (২০%) ও পটুয়াখালী (১৯.২৬%)। ঝিনাইদহে ২৭০টি বাড়ি পরিদর্শনে ১৬২টি পাত্রে, মাগুরায় ১৫০টি, পিরোজপুরে ৫৪টি এবং পটুয়াখালীতে ৫২টি পজিটিভ কনটেইনার পাওয়া গেছে।
আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন জানান, এসব অঞ্চলে প্লাস্টিক ড্রাম, প্লাস্টিক বাস্কেট ও দইয়ের পাত্রে এডিসের লার্ভা সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। পিরোজপুর ও মাগুরায় শতভাগ ভেক্টর হিসেবে এডিস অ্যালবোপিক্টাস শনাক্ত হয়েছে।
প্রকাশিত জরিপের ফলাফলে বরগুনায় ভয়াবহ সংক্রমণ প্রসঙ্গ না আসার কারণ জানতে চাইলে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, বরগুনায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে আমাদের আশঙ্কায় ছিল না। তবে সংক্রমণ বাড়ায় আমরা আমাদের একটি টিম পাঠিয়েছি, সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আলাদা রিপোর্ট প্রকাশ করব।
স্বাস্থ্য অধিদফতরর রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেও জানানো হয়েছে অনুষ্ঠানে।
আরও পড়ুন