ছবিঃ সংগৃহীত
দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার সারাদেশে আরও ৫০০টি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন ও স্থানান্তরের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, জাইকার অর্থায়নে উদ্যোগটি কার্যকর হলে সারাদেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার একটি সুসংহত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। বুধবার (২০ আগস্ট) ঢাকার মহাখালীর বিএমআরসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানান কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে। এরই মধ্যে একটি তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে।
প্রকল্পে অর্থায়ন করবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। তবে নির্দিষ্ট সময় এখনো জানানো হয়নি।
আখতারুজ্জামান আরও বলেন, শহর এলাকাতেও কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, “শহরে জমি পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ।” স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, দেশের ৭২ শতাংশ মানুষ মনে করে, জনস্বাস্থ্যসেবার জন্য আলাদা ফ্যাসিলিটি থাকা দরকার। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকের গুরুত্ব অনেক।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাস্টের মাঠ প্রশাসনের পরিচালক আসিফ মাহমুদ বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট এখন শুধু সেবা দেওয়ার জন্য সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, বরং একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তুলতে চায়। এজন্য আমরা নিজস্ব ভবন নির্মাণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছি। এর ফলে সিএইচসিপি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষণ পাবেন। একইসঙ্গে সারাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পুনঃনির্মাণ ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল রেফারেল সিস্টেম চালু করা হবে, যাতে একজন সেবাগ্রহীতা কোথায়, কী ধরনের চিকিৎসা পেয়েছেন তা সহজে ট্র্যাক করা যায় এবং সঠিক সময়ে সঠিক সেবা নিশ্চিত করা যায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বাড়ানো। বর্তমানে ৫৪ শতাংশ সিএইচসিপি নারী হলেও আমরা সেটিকে ধাপে ধাপে ৮০ শতাংশ বা তারও বেশি পর্যায়ে উন্নীত করতে চাই। শুধু সংখ্যা বাড়ানোই নয়, আমরা তাদের ধাত্রীবিদ্যায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দেব, যাতে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্য সংক্রান্ত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ হয়। এছাড়া বিশেষ অঞ্চল– যেমন হাওর, চর, উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় প্রতি ১৫০০ থেকে ২০০০ জন মানুষের জন্য একটি করে নতুন ক্লিনিক স্থাপন করার লক্ষ্য নিয়েছি।
কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের (সিএইচসিপি) সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মূল কনসেপ্ট হলো প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শমূলক সেবা দেওয়া। এখানে বড় কোনো ওষুধ থাকে না—অ্যান্টিবায়োটিক নেই। সাধারণত প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন বা এন্টারসিড জাতীয় কিছু ওষুধ দিয়েই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের সেবার ব্যবস্থা রয়েছে, আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী সিএইচসিপিরা নিরাপদভাবে স্বাভাবিক ডেলিভারি করাতে পারেন।
শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান, কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা থাকলেও ইতোমধ্যে ইডিসিএল থেকে ১২০ কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই এসব ওষুধ সব কমিউনিটি ক্লিনিকে পৌঁছে যাবে। এছাড়া আরও ২০০ কোটি টাকার ওষুধ দ্রুত কেনার প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় সরকারকেই বহন করা উচিত। জরিপে দেখা গেছে, ৯২ শতাংশ মানুষ এ মত পোষণ করেন এবং ৯৭ শতাংশ মনে করেন, “স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে পাওয়া উচিত।” এই প্রেক্ষাপটেও কমিউনিটি ক্লিনিক বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এছাড়া তিনি জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নতুন করে ১৩ হাজার ৯৮৯ জন জনবল নিয়োগের জন্য রাজস্ব বাজেট থেকে ৪২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ১৪ হাজার ৪৬৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। প্রতিটি ক্লিনিকে একজন সিএইচসিপি ছাড়াও স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী নির্দিষ্ট দিনে সেবা প্রদান করেন। ১৩ থেকে ১৭ সদস্যের কমিউনিটি গ্রুপ প্রতিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকে। দেশে বর্তমানে সিএইচসিপির সংখ্যা ১৩ হাজার ৯২৩।
আরও পড়ুন