উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন একটি দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অবস্থা, যেখানে রক্ত ধমনীতে অতিরিক্ত চাপে প্রবাহিত হয়। এটি অবহেলা করা হলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো গুরুতর এবং প্রাণঘাতী সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে আশার কথা হলো, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন পদ্ধতি, ব্যায়াম এবং ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া পদ্ধতিও রক্তচাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে। নিচে এমন কিছু কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো যার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
- ১. কিউই ফল: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুটি কিউই খেলে সিসটোলিক (উপরের) রক্তচাপ কমতে সাহায্য করে। কিউইতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্তনালিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি তাজা ফল হিসেবে, স্মুদি, ওটমিল বা সালাদে খাওয়া যেতে পারে।
- ২. তরমুজ: তরমুজে থাকা সিট্রুলিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে গিয়ে আর্জিনিনে রূপ নেয়, যা থেকে তৈরি হয় নাইট্রিক অক্সাইড। এটি রক্তনালিকে শিথিল করে এবং রক্তপ্রবাহ ভালো করে, ফলে রক্তচাপ কমে। নিয়মিত তরমুজ বা তরমুজের রস পান করা উপকারী।
- ৩. পাতাযুক্ত সবজি: বিভিন্ন ধরনের শাকসবজিতে থাকে প্রচুর পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম, যা শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও রক্তনালি শিথিল করতে সাহায্য করে। বিশেষত পালং শাকে থাকা নাইট্রেট রক্তপ্রবাহ উন্নত করে। শাকসবজি রান্না করে, সালাদে, ঝোলে কিংবা ভর্তা হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
- ৪. বাদাম ও বীজ: পিস্তাচিও, আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড ও কুমড়োর বীজে থাকে আর্জিনিন ও ফাইবার, যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্তনালিকে শিথিল করে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণ (এক মুঠো) লবণহীন বাদাম খাওয়া যেতে পারে। এগুলো দই, ওটস বা সালাদে ব্যবহার করা ভালো। তবে ক্যালোরি বেশি থাকায় পরিমাণে সচেতন থাকা জরুরি।
- ৫. বিট: বিটে রয়েছে নাইট্রেট, যা শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে পরিণত হয়ে রক্তনালি প্রশস্ত করে এবং রক্তচাপ কমায়। বিট সেদ্ধ করে বা কাঁচা গ্রেট করে সালাদে, অথবা চিনি ছাড়া বিটের রস হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
- ৬. চর্বিযুক্ত মাছ: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ যেমন স্যামন বা ম্যাকারেল রক্তচাপ ও প্রদাহ কমাতে সহায়ক। প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ১০০ গ্রাম পরিমাণ মাছ গ্রিল বা বেক করে খাওয়া ভালো। নিরামিষভোজীরা সীউইড, আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া ও হেম্প সিডস থেকেও ওমেগা-৩ পেতে পারেন।
- ৭. সাইট্রাস ফল: কমলা, লেবু ও জাম্বুরার মতো সাইট্রাস ফলগুলোতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও উদ্ভিজ্জ উপাদান, যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। প্রতিদিন চারটি কমলার সমপরিমাণ সাইট্রাস ফল খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাজা ফল, রস কিংবা পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
তবে যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছেন, বিশেষ করে গ্রেপফ্রুট নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এটি কিছু ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জীবনযাপনে পরিবর্তন
- ৮. হাঁটা ও যোগব্যায়াম: প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটা এবং যোগব্যায়াম রক্তচাপ কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর। খালি পেটে সকালে করা ভালো, তবে সময়ের সাথে নিয়মিত হওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো আপনার ওষুধ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে।
সঠিক খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম ও কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি সহজেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো জটিলতা এড়াতে সক্ষম হবেন।