রাজধানীর জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় কোম্পানি স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস। এরফলে আজও হাসপাতালটিতে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ আছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কিডনি রোগীরা। বকেয়া টাকা আদায়ে সোমবার (২৬ মে) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে নিয়েছে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া বন্ধ করে দেয় ভারতীয় কোম্পানিটি।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি হাসপাতালে সেবা দিচ্ছে স্যানডোর। মোট ডায়ালাইসিসের ১০ শতাংশ করে তারা। ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্যানডোরের দুই সেন্টার মিলে ২০০ মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৭০টি।
স্যানডোর এর কনসালটেন্ট ডা. শামসুন্নাহার বলেন, 'সরকারের কাছে আমাদের সাড়ে ৭ কোটি টাকা বাকি রয়েছে। টাকা না পাওয়ায় তিন মাস ধরে আমাদের বেতন হচ্ছে না। বেতন না পাওয়ায় নার্স টেকনোলজিস্টরা আর কাজ করতে চাচ্ছে না। সামনে ঈদ, কর্মদিবস কম আছে, বেতনের আশ্বাস না পেয়ে কেউ কাজ করছে না।'
তিনি আরো বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের বিল বাকি আছে। এ বিল সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে দিয়ে দেয়া হয়। কোম্পানি বিল থেকে ডায়ালাইসিসের প্রয়েোজনীয় উপকরণ কেনে এবং আমাদের বেতন দেয়।
"কিন্তু, তিন মাস ধরে বেতন বাকি থাকায়— নার্স-টেকনোলজিস্টরা কেউ কাজ করতে চাচ্ছে না। গত ঈদে আমিও বেতন পাইনি। তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোনো আশ্বাস পাইনি।’’
ডা শামসুন্নাহার বলেন, 'রোগীর কষ্ট দেখে, আমরাও কষ্ট পাচ্ছি। যেসব রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ, তাদের আজকে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া যায় কিনা সেজন্য ওদের বোঝাচ্ছি। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন আশ্বাস পাইনি।'
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্যানডোরের দুই সেন্টার মিলে ২০০ কর্মী আছে। ঢাকায় ১৩০ জন কর্মী।
বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, দেশে দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে ভুগছেন। তাদের মধ্যে ৪০ হাজারের মতো মানুষের ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। মাত্র ১০ হাজার মানুষ এই সুযোগ পান।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের নেফ্রোলজিস্টদের সম্প্রতি করা এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী ডায়ালাইসিস করতে পারেন না।
ডায়ালাইসিস শুরু করে ৯০ শতাংশ রোগী অর্থাভাবে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে চিকিৎসা বন্ধ করে দেন। এসব রোগীর প্রায় ৫০ শতাংশ দুই বছরের মধ্যে মারা যান। ডায়ালাইসিস প্রয়োজন এমন রোগীর মাত্র ১ শতাংশ কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ পান।
আরও পড়ুন