Advertisement
Doctor TV

সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫


১২ দফা দাবি জানাল ফার্মাসিস্টস ফোরাম

Main Image


ফার্মেসি পেশাকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে পেশাগত এবং শিক্ষাগত মান উন্নয়নে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলে ১২ দফা দাবি পেশ করেছে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরাম। সম্প্রতি  রোববার (২৭ এপ্রিল) ফার্মেসি কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভা থেকে এ দাবি পেশ করা হয়।

 

বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরামের সভাপতি মো. আজিবুর রহমান,  সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তানভীর, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক  মো. সাদ্দাম হোসেন, শিক্ষা ও গবেষণাবিষয়ক সহ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রমুখ।

 

বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুল হক বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরামের নেতাদের স্বাগত জানান এবং ফার্মেসি পেশার মান উন্নয়নে ফোরামের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি হসপিটাল ফার্মেসি বাস্তবায়নে পেশাগত এবং শিক্ষাগত মান উন্নয়নে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের কার্যক্রম এবং অগ্রগতি তুলে ধরেন।

 

বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরামের সভাপতি মো. আজিবুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশে সরকারি হাসপাতালে ফার্মেসি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রায় ৭শ সরকারি ফার্মেসি করার উদ্যোগ নিয়েছেন, তা খুবই প্রশংসনীয়। এই উদ্যোগ সঠিকভাবে বাস্তবায়নে আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে।

 

সভা থেকে বলা হয়, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ২২ হাজার রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট রয়েছে। ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী ফার্মেসি অধ্যায়নরত আছেন। সরকারের যে কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল আমাদের রয়েছে। তাই হসপিটাল ফার্মেসি, কমিউনিটি ফার্মেসি, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে এবং সব বিশ্ববিদ্যালয় অতিদ্রুত ফার্ম ডি চালু করে কোর্স কারিকুলামে পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি।  

 

এরপরে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরামের পক্ষ থেকে কাউন্সিলে ১২ দফা দাবি পেশ করা হয়। 

 

দাবিগুলো: 

 

১. হসপিটাল ফার্মেসি, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি এবং কমিউনিটি ফার্মেসির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সফল করতে, ফার্মেসি কাউন্সিল স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ এবং ধারাবাহিকভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ও টেকনিক্যাল সহযোগিতা দিতে হবে। এতে করে সার্ভিস বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী ও কার্যকর হবে।

 

২. গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ফার্মেসি নেটওয়ার্ক গঠনে উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ফার্মেসি কাউন্সিলকে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট তৈরির জন্য দ্রুত ফার্ম ডি প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন এবং পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা দিতে হবে।

 

৩. পর্যায়ক্রমে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি প্রোগ্রামকে বি ফার্ম থেকে ফার্ম ডিতে রূপান্তর করতে হবে। হাসপাতাল ও ক্লিনিক্যাল ফার্মেসির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ফার্মেসি কাউন্সিলের পুরাতন কারিকুলাম বাতিল ঘোষণা করে সকল বি ফার্ম ও ফার্ম ডি প্রোগ্রামে নিম্নলিখিত কোর্সগুলো বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেগুলো হলো— ফার্মাকোথেরাপি, ফার্মাসিউটিক্যাল কেয়ার, পেশেন্ট সেইফটি, ফরেনসিক মেডিসিন, এম বুলেট রি কেয়ার, ইন্টার্নাল মেডিসিন, ফার্মাকোজেনোমিকস, ফার্মাকোএপিডেমিওলজি, নিউক্লিয়ার ফার্মেসি।  

 

৪. হাসপাতাল ফার্মেসি বাস্তবায়ন পরবর্তী ফার্মাসিস্টদের জন্য সুস্পষ্ট ক্যারিয়ার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য, নিম্নোক্ত পদসমূহ বাস্তবায়নের সুযোগ রাখা হোক, যথা—ফার্মাসিস্ট,  ফার্মাসিস্ট (ক্লিনিক্যাল),  সিনিয়র ফার্মাসিস্ট, চিফ ফার্মাসিস্ট, ফার্মেসি ডিরেক্টর।  

 

৫. ফার্মাসিউটিক্যাল সার্ভিসের সুষ্ঠু তদারকির জন্য একজন উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন পরিচালক নিযুক্ত করে আলাদা ফার্মেসি পরিদপ্তর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হোক।

 

৬. ফার্মেসিতে ডিপ্লোমাধারীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগের সব সার্কুলারে ‘ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট’ শব্দটি নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সেজন্য অবশ্যই কাউন্সিলকে তদারকি করতে হবে।

 

৭. ফার্মেসি প্র্যাক্টিস অ্যাক্ট/রেগুলেশনস বাস্তবায়ন ছাড়া শতভাগ ফার্মাসিউটিক্যাল সার্ভিস নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বর্তমানে অনেকস্থানে ফার্মেসি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশনবিহীন ব্যক্তি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও কমিউনিটি পর্যায়ে অবৈধভাবে ফার্মেসি প্র্যাক্টিস করে আসছে, যা অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ফার্মাসিস্ট, ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট ও ফার্মেসি টেকনিশিয়ানের দায়িত্ব ও কাজের পরিধি নির্ধারণে হাসপাতাল ফার্মেসি কমিটি ও ফার্মেসি কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে দ্রুত ফার্মেসি প্র্যাক্টিস অ্যাক্ট/রেগুলেশনস কার্যকর করতে হবে।

 

৮. সরকারি হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ইন্টার্নশিপের সুপরিকল্পিত গাইডলাইন তৈরি করতে হবে যেখানে প্রকৃত হাসপাতাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে ইন্টার্নশিপের সুযোগ থাকতে হবে। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য ফার্মেসি কাউন্সিলকে ডিজি হেলথের সাথে একটি চুক্তি সই এবং উচ্চতর প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ক্রমান্বয়ে ফার্মেসি রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম চালুর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।

 

৯. বি ফার্ম ডিগ্রিধারীদের জন্য বি ফার্ম শেষ করার পরে দুই বছর মেয়াদি ফার্ম ডি করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে ফার্মেসি কাউন্সিলকে দ্রুত উপযুক্ত কোর্স কারিকুলাম প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

 

১০. ঔষধ ও কসমেটিকস আইন, ২০২৩-এর আলোকে, তিন মাস মেয়াদি ফার্মেসি রেজিস্ট্রেশন কোর্সধারীদের ‘ফার্মেসি টেকনিশিয়ান’ হিসেবে পুনঃপরিচিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে ফার্মেসি কাউন্সিলের ওয়েবসাইট থেকে এ, বি, সি গ্রেড বিভাজন বিলুপ্ত করতে হবে। একইসঙ্গে ফার্মেসি টেকনিশিয়ান কোর্সের মেয়াদ বাড়িয়ে ন্যূনতম ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদি করা জরুরি, যাতে প্রশিক্ষণের মান ও দক্ষতা আরও উন্নত হয়।

 

১১. ফার্মেসি কাউন্সিলের কাছে বর্তমানে যে ফার্মেসি আইনের খসড়া রয়েছে, সেটিকে সময়োপযোগীভাবে সংশোধন ও সম্পাদনা করে দ্রুত আইনে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

 

১২. ফার্মেসি কাউন্সিলের অধীনে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের জন্য প্রায়োরিটি সার্ভিস চালু করতে হবে, যাতে দ্রুত নিবন্ধন, সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য পরিষেবা নিশ্চিত হয়।

আরও পড়ুন