কম খরচে রোগ নির্ণয় করতে চান নবজাতক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বুধবার (২৩ এপ্রিল) চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে নবজাতক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংগঠন বিএনএফের ৭ম ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে অনুষ্ঠিত পলিসি সেশনে এ সম্ভাবনার কথা বলেন। পলিসি সেশনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘নবজাতকের পায়ের গোড়ালির রক্ত পরীক্ষা করে ভবিষ্যৎ রোগ নির্ধারণে বাংলাদেশের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’।
এ সময় নবজাতক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, জন্মের আগেই নানান ধরনের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সন্তানের রোগ নির্ণয় করা যায়। এগুলো দৃশ্যমান শারীরিক রোগ। জন্মের পর গোড়ালি থেকে রক্ত নিয়েও নির্ণয় করা যায় বেশ কয়েকটি অদৃশ্য রোগ। তবে ব্যয়বহুল ওইসব টেস্ট সবাই করাতে পারেন না। এ কারণে কম খরচে সারাদেশে সবার জন্য সহজ একটি রোগ নির্ণয় পদ্ধতি প্রচলন করতে চান তারা।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরামের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কুমার দে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারওয়ার বারী। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. মনির হোসেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন বিএনফএর সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান।
পলিসি ডায়ালগে বিশেষজ্ঞরা বলেন, জন্মগত কিছু ত্রুটি আসে বাচ্চাদের। যেগুলো ৫/৭/১০ বছর বয়সে গিয়ে দৃশ্যমান হয়। তখন আর কিছু করার থাকে না। অথচ জন্মের সঙ্গে সঙ্গে এসব নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসা সম্ভব। খুব কম খরচে নবজাতকের গোড়ালি থেকে রক্ত নিয়ে এই টেস্ট করা যায়। গত ২৫ বছর ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এটি চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটি ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করলে সারাদেশে টিকা দেওয়ার সময়ই বা জন্মের পরপরই গোড়ালি থেকে এক ফোঁটা রক্ত নিয়ে কাগজে করে পাঠিয়ে দেবে। পরীক্ষা করে আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো।
ফিলিপাইনের প্রতিনিধি তাদের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এ পর্যন্ত আমরা এই পরীক্ষার মাধ্যমে ২৯টি রোগ নির্ণয় করতে পেরেছি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ২৫ বছর আগে অধ্যাপক ডা. ফওজিয়া মুসলেম ও অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার এ পরীক্ষা শুরু করেছেন। এখন সবার জন্য কীভাবে করা যায়, এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা ইপিআই কার্যক্রম বেশ কার্যকর করেছি। সম্প্রতি করোনা ভ্যাকসিনেশনে সফলতা পেয়েছি। একই পথে আমরা এই কাজ করলেও সফলতা পাবো।
বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরামের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কুমার দে বলেন, নবজাতকের পায়ের গোড়ালির রক্ত পরীক্ষা করে ভবিষ্যৎ রোগ নির্ধারণ করার বিষয়টি বাংলাদেশে চালু করা গেলে অনেক রোগ থেকে তাদের মুক্ত রাখা সম্ভব হবে। যা নবজাতকদের জীবন রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য রোগ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি জানা থাকলে সে অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যাবে। যা নবজাতকদের দুর্ভোগ লাঘবসহ পরিবারের আর্থিক দিকও সাশ্রয় হবে।
এর আগে সকালে নবজাতকের ভবিষ্যত রোগ নির্ণয় ও সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরামের (বিএনএফ) ৭ম ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ২০২৫ উদ্বোধন করা হয়। সম্মেলনের আগের দিন ২২ এপ্রিল নবজাতকদের পুষ্টি এবং কীভাবে রিসার্চ পেপার শিখতে হয়- এর ওপর দুটি ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে ৭২১ জন নবজাতক বিশেষজ্ঞ এবং ৪ জন বিদেশি বিশেষজ্ঞ তাদের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক এমকিউ কে তালুকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউনিসেফের ডেপুটি বাংলাদেশ প্রতিনিধি এমা ব্রিগ্রাম ও বিএনএফ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক নাজমুন নাহার। সভাপতিত্ব করেন বিএনএফ সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মনির হোসেন। ফোরামের মহাসচিবের বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কুমার দে। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনএফ সহ-সভাপতি অধ্যাপক সুখময় কংস বনিক।
আরও পড়ুন