Advertisement
Doctor TV

মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫


জন্মগত ৩শ' শিশু হৃদরোগী পাচ্ছে ফ্রি চিকিৎসা

Main Image


“লিটল হার্টস ২০২৫” নামের বিশেষ মেডিকেল ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে এবার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আধুনিক চিকিৎসা লাভের সুযোগ পাচ্ছে জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুরা। কাতার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) সরাসরি অংশগ্রহণে এ কর্মসূচির আওতায় ৩০০ শিশুকে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। এদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ১২৫ জনকে উন্নত প্রযুক্তি-নির্ভর কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হবে। 

 

কর্মসূচি শুরু হয়েছে গত ১৯ এপ্রিল (শনিবার) থেকে। কার্যক্রম চলবে আগামী বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) পর্যন্ত।

 

গত রোববার (২০ এপ্রিল) বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কাতার রেড ক্রিসেন্ট এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে “লিটল হার্টস ২০২৫” ক্যাম্পেইন চিকিৎসা কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কাতার থেকে আগত প্রখ্যাত শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ইউনুস বুজমিলিন। তার সঙ্গে রয়েছেন একজন কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, একজন কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন শাখার অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যকর্মী। তারা মিলেই গঠন করেছেন একটি বিশ্বমানের মেডিকেল টিম, যারা প্রতিটি শিশুর চিকিৎসায় সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করছেন।

 

আরও জানানো হয়েছে, এই চিকিৎসা কার্যক্রমের পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণেও। শিশু হৃদরোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত আধুনিক ক্যাথেটারাইজেশন পদ্ধতির ব্যাবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিওলজিস্টদের। এতে দেশের স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘমেয়াদে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি শিশু এ ধরনের উন্নত চিকিৎসা দেশে বসেই গ্রহণ করতে পারবেন।

 

কর্মসূচির তৃতীয় দিন (রোববার) সকালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চলমান কার্যক্রম পরিদর্শনে যান বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম। এ সময় সঙ্গে ছিলেন মহাসচিব ড. কবির এম. আশরাফ আলম, এনডিসি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, এবং কাতার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ মোহাম্মদ থাবেত সাফি। পরিদর্শনকালে তারা শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন, অভিভাবকদের অভিমত নেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে কাতার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এই ধরনের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। গত কয়েক বছরে শতাধিক শিশু এই প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে জটিল হৃদরোগ চিকিৎসা পেয়েছে। চিকিৎসা খরচে অক্ষম অনেক পরিবারের জন্য এই ক্যাম্পেইন হয়ে উঠেছে আশীর্বাদস্বরূপ। এই কার্যক্রম শুধুমাত্র জীবন বাঁচানোর এক নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা নয়, বরং বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি উদাহরণ। দেশীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে বিদেশি বিশেষজ্ঞরা যেভাবে জ্ঞান ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করছেন, তা স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করছে।

 

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে জন্মগত হৃদরোগ একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতি হাজারে প্রায় ১০টি শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্মায়, যা প্রতিবছর প্রায় ২২ হাজার নতুন শিশুর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। বর্তমানে দেশে তিন লাখের বেশি শিশু জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত, যাদের অধিকাংশই চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা, রুবেলা টিকা গ্রহণ না করা, অশিক্ষা, দারিদ্র্য এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এই রোগের প্রধান কারণ। এছাড়া, দেশে শিশু হৃদরোগ চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

আরও পড়ুন