Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫


বিবেকবান মানুষ তৈরীর মাধ্যমে ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধ কমানো সম্ভব: অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দীন

Main Image

রোববার (১৬ মার্চ) দুপুরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে "ধর্ষণ: শিশু-কিশোর মনে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ প্রভাব" শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন


বিবেকবান মানুষ তৈরীর মাধ্যমে ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধ কমানো সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ আইকিয়াট্রিস্টস এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. নিজাম উদ্দীন। রোববার (১৬ মার্চ) দুপুরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে "ধর্ষণ: শিশু-কিশোর মনে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ প্রভাব" শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ কথা বলেন। ধর্ষণ ইস্যু নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে 'বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডলসেন্ট মেন্টাল হেলথ'  এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। 

 

অধ্যাপক ডা. মো. নিজাম উদ্দীন বলেন, মানুষের মাঝে অনুকরণের প্রবণতা থাকে। যার ফলশ্রুতিতে দেখা যায় ধর্ষণের ধরণ বা ঘটনার রগরগে বর্ণনাতে সম্ভাব্য অপরাধীরা উৎসাহিত হয়। তাই অপরাধের বর্ণনাকে প্রাধান্য না দিয়ে অপরাধী যেন শাস্তি পায় সে ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব বেশি দিতে বলেন তিনি।

 

তিনি আরও বলেন ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজের ভুমি,কা অবশ্যই আছে। তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব আরও বেশি। রাষ্ট্র যদি পরিবেশ তৈরী  করে তবেই বিবেকবান মানুষ তৈরী হবে এবং ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধ কমানো সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অধ্যাপক ডা. মো. নিজাম উদ্দীন। 

 

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ডা. মো. মাহবুবর রাহমান বলেন, ধর্ষণের খবর গণমাধ্যমে অবশই আসবে। তবে তার উদ্দেশ্য হবে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা ও জনসচেতনতা তৈরি করা। তা কোন মতেই যেন মুখরোচক সংবাদে পরিণত না হয়। সাধারনত দেখা যায় যারা এ ধরনের নিপীড়নের মধ্যে দিয়ে যায় তাদের পরবর্তীতে বিষণ্ণতা, পিটিএসডি, রেপ ট্রমা সিনড্রোম ইত্যাদি মানসিক সমস্যায় ভুগে। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমরা ধর্ষণের শিকার ব্যাক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা প্রদান করে থাকি।

 

বিএমইউর শিশু-কিশোর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোর্শেদ  বলেন, শুধু মেয়েরাই নয়, অনেক ছেলে শিশুরাও তার বন্ধু, শিক্ষক বা আপনজন দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এধরনের ঘটনা আমাদের কাছে আসে না।

 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডলসেন্ট মেন্টাল হেলথ-এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি সাধারনত মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে আসে না, যতদিন না তাদের ধর্ষণ পরবর্তী মানসিক সমস্যার শুরু হয়। সে ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে, তারা তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনাটি একেবারেই প্রকাশ করে না বা শুরুতে প্রকাশ করতে চায় না। পেশাগত দায়িত্ব থেকে আমাদের উচিত জনসচেতনতা তৈরি করা, আর সে কারণেই আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১৮.৩% মানুষ মানসিক রোগী। তাই অপরাধী মানেই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এই মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডলসেন্ট মেন্টাল হেলথ এর সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. রাহানুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের ক্ষেত্রে অপরাধী এবং ভিক্টিমের  মধ্যকার সম্পর্কের চেয়ে সংগঠিত অপরাধের দিকে বেশি গুরুত্ব  দেওয়া উচিত। কারণ কোনভাবে যখন প্রচার মাধ্যমে সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তখন আন্তঃ সম্পর্কগুলোতে তার প্রভাব পড়ে এবং এক্ষেত্রে  অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। গুরুতর মানসিক রোগে আক্রান্ত  ব্যক্তি ছাড়া একজন অপরাধীকে অপরাধের প্রকৃতি  এবং শাস্তির ধরন অনুযায়ী  ফৌজদারি দণ্ডবিধির  সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা যাবে।

 

চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. মাহাবুবা রহমান বলেন, "ধর্ষণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার মূল কারণ হচ্ছে বিচারহীনতা। এজন্য আমাদের আগে সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।" তিনি আরো বলেন, "রেপ কালচার, যেমন ব্যাড টাচ (খারাপ স্পর্শ) ধর্ষণের ঘটনাকে প্ররোচিত করে।"

 

চাইল্ড এন্ড এডলোসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. নুসরাত জাহান তানজিলা বলেন, রেপ ভিক্টিম ধর্ষণ পরবর্তী সময়ে নানা রকম মানসিক সমস্যা যেমন বিষন্নতা, পিটিএসডি, রেপ ট্রমা সিন্ড্রোম সহ নানা রকম মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যায়।যেই ব্যাপারগুলো ভীষণভাবে অবহেলিত ও অগোচরে থেকে যায়। আজকের প্রেস কনফারেন্সের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে জানানো যে, আমরা (মনোরোগবিশেষজ্ঞগণ) তাদের এই মানসিক স্বাস্থ্যের সহায়তা প্রদানে সর্বদা প্রস্তুত।

আরও পড়ুন