শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার খিলক্ষেতের নিকুঞ্জর লা মেরিডিয়ানের স্কাই বলরুমে আয়োজিত নবনির্বাচিত বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির অভিষেক অনুষ্ঠান
মেডিকেল কলেজ ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের পদ সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় এন্ডোস্কোপিক যন্ত্রপাতি সরবরাহে ভূমিকা রাখবে নবনির্বাচিত বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির। এর ফলশ্রুতিতে রোগীরা বিশেষায়িত চিকিৎসা পাবে। একইসাথে দেশের অভ্যন্তরে লিভার ও পরিপাকতন্ত্রের সকল রোগের বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে রোগীদের বিদেশমুখী প্রবণতা রোধ করার লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকার তাদের। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার খিলক্ষেতের নিকুঞ্জর লা মেরিডিয়ানের স্কাই বলরুমে আয়োজিত অভিষেক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলা হয়।
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিজনিত বিষয়ক জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের বিদেশমুখীতা কমাতে ও রোগীদের বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে বহুল প্রতীক্ষিত নবনির্বাচিত সোসাইটির অভিষেক অনুষ্ঠানে
প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ডা. এম টি রহমান। অনুষ্ঠানে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম মোহসেন, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোঃ সামসুল আরফিন, সহ-সভাপতি ডা. এএসএম এ রায়হান, মহাসচিব অধ্যাপক দেওয়ান সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রমুখসহ নব নির্বাচিত কমিটির অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ইং তারিখ সোসাইটির সদস্যদের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সোসাইটির প্রতিনিধিদের নিয়ে কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের লিভার ও পরিপাকতন্ত্রের রোগীর সংখ্যা অনেক। প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় ২৫ শতাংশ রোগী লিভার ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে আসেন। আমাদের দেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রায় ২.৬ শতাংশ লোক লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে প্রচুর সংখ্যক লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের (Liver Transplant) জন্য অপেক্ষমান রোগী আছে। উপযুক্ত উদ্যোগের অভাবে তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হয় নাই। বর্তমান নব গঠিত কমিটি বাংলাদেশে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করবে ও সরকারের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
একই সাথে Chronic Pancreatitis রোগের (Endoscopic Shock Wave Lithotripsy (ESWL) চিকিৎসার সুযোগ বাংলাদেশে নাই। বর্তমান সোসাইটি Chronic Pancreatitis রোগীদের উন্নত চিকিৎসা প্রদানের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ করবে। Inflammatory Bowel Disease (IBD) রোগীদের সংখ্যাও বাংলাদেশে অনেক। এই রোগ নির্ণয়ের জন্য কিছু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যেমন MR Enterography বাংলাদেশে থাকলেও তা উপযুক্ত বাহারের জন্য "Gastrointestinal Radiology" তে চিকিৎসকদের উন্নত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। বর্তমান সোসাইটি এই লক্ষ্যে জনচেতনতা বৃদ্ধি, একইসাথে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। আমাদের দেশে প্রায় ৯ শতাংশ রোগী পেটের আলসারজনিত রোগে (PUD) ভুগছেন। এখনও ডায়রিয়াতে প্রতি বছর অনেক প্রাণ অকালে হারিয়ে যায়। বাংলাদেশে ১১.৯ শতাংশ লোক পুষ্টিহীনতায় (Malnutrition) ভুগছেন। জনগণকে পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, এর প্রতিকার ও সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে বর্তমান সোসাইটি কাজ করে যাবে।
ব্যংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির বর্তমান কমিটি পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যে নবীন চিকিৎসকদের যুগোপযোগী উচ্চতর প্রশিক্ষণের বাবস্থা করবে এবং দক্ষ জনবল তৈরীর মাধ্যমে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের অনেক মেডিকেল কলেজ ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ নেই। অনেক জায়গায় বিভাগ থাকলেও পর্যান্ত পদ নেই। যথার্থ সময়ে পদোন্নতির সুনির্দিষ্ট উদ্যোগের অভাবে কিছু পদ দীর্ঘ দিন ধরে খালি পরে আছে। বর্তমান নব গঠিত কমিটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি যথাযথ পদায়ন ও পদোন্নতির জন্য কাজ করবে। তাছাড়া গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সংক্রান্ত রোগসমূহ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে রয়েছে এন্ডোসকপি, কোলনোস্কোপি, এন্টারোস্কোপি, ক্যাপসুল এন্ডোস্কোপি, এন্ডোস্কোপিক আল্ট্রসাউন্ড (EUS), Transient Elastography Machine, pH Monitoring Machine, Manometry Machine ইত্যাদি। দেশের অনেক মেডিকেল কলেজ ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল গুলোতে গ্যাট্রোএন্টারোলজি বিভাগে প্রয়োজনীয় এন্ডোস্কোপিক যন্ত্রপাতি নেই। রোগীরা বিশেষায়ির চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন