সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সরকারি মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) কর্মকর্তাদের সাথে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো (কেন্দ্রীয় ঔষধাগার) পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে ঢেলে সাজানোর আশ্বাস দিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সরকারি মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে পরিবর্তনে সহায়তার আহ্বান জানান, যেন ভবিষ্যতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ইডিসিএল নিয়ে নানা অনিয়মের কথা পত্রিকায় এসেছে। এই যে এতগুলো ছেলে জীবন দিল, আত্মত্যাগ করলো, তাদের কথা স্মরণ করে আসুন আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে পরিবর্তন করি। যেন এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে ভবিষ্যতে আর কোনো কথা না উঠে। কাজেই এই প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজাতে হবে।
অনিয়ম সহ্য করা হবে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, কথা যতই সহজ হোক বা কঠিন হোক আমরা যাতে সত্য কথাটা বলি। যেসব অন্যায় অনিয়ম হয়েছে তা আর ভবিষ্যতে সহ্য করা হবে না। আমরা অতীতকে ভুলে সামনে এগুবো। কিন্তু কেউ যদি আগে গুরুতর অন্যায়, অনিয়ম করে থাকেন সেটা আমরা ভুলব না। যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিস্টেম লসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই লস যত কমবে বা শূন্য হবে আপনাদের কাজের ইফিসিয়েন্সি ততোই বাড়বে এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। আমরা প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ-এর কথা স্মরণ করি। কেন করি? কারণ তিনি মানুষের জন্য কিছু সৃষ্টি করে গেছেন। কাজেই আসুন আমরা মানুষের জন্য, মানবতার জন্য কাজ করি এবং মানুষের যাতে উপকার হয় তেমন কিছু সৃষ্টি রেখে যাই। আমরা যদি ব্যক্তিকে অনুভব করতে না পারি, মানুষের কষ্ট এবং দারিদ্র্যকে যদি অনুভব করতে না পারি তাহলে আমরা সামনে এগুতে পারব না।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ইডিসিএলকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে দক্ষ এবং এফিসিয়েন্ট হতে হবে। ইডিসিএল থেকে এনওসি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অন্য জায়গা থেকে ওষুধ কিনে ২২ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। এটা কোনোমতেই সমর্থনযোগ্য না। কারণ বেশি টাকা দিয়ে তারা কেন ইডিসিএল থেকে ওষুধ কিনবে? ইডিসিএল যে দামে ওষুধ বিক্রি করে তার চেয়ে কম দামে মার্কেটে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। আপনাদের কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করতে বলা হচ্ছে না কিন্তু আপনাদেরকে এফিশিয়েন্সি বাড়াতে হবে। আপনারা পুরো প্রসেসটা নিয়ে বসেন এবং কোন জিনিস উপরে যাবে, নিচে আসবে, কোনটা কোন ফেইজে যাবে তা ঠিক করেন। বাংলাদেশ সরকারের সমর্থনে আপনাদের পাঁচটা প্ল্যান্ট আছে। এটা আর অন্য কারোরই নাই। পুরো বিশ্বে ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি সবচেয়ে টপ কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটি। এখানে নিখুঁতভাবে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। আপনারা যদি চান দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থান নিতে পারেন। কাজেই সেই স্বপ্নটিই দেখেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্ল্যান হচ্ছে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া। এটা সরকারের কমিটমেন্ট। এটা গ্লোবাল কমিটমেন্ট। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার প্রধান উপাদান হচ্ছে মেডিসিন কাভারেজ। যা ৬৭ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ আউট অব পকেট ব্যয় হচ্ছে, এর কারণ ওষুধে ব্যয়। এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড ভালোভাবে প্রোডাক্ট তৈরি ও অব্যাহতভাবে ওষুধ সরবরাহ করতে পারলে বাংলাদেশের পুরো মার্কেটের ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এফিশিয়েন্সি বাড়বে।
এছাড়া স্বচ্ছতা এবং অটোমেশনের কোনো বিকল্প নাই জানিয়ে অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, সবকিছু স্বচ্ছ, ইলেকট্রনিক এবং টাইম বাউন্ড হতে হবে। আমরা মোটা দাগে ট্রান্সপারেন্ট সিস্টেম এবং ডাটাবেজ চাই। পুরো দুনিয়ায় এগুলো কমন প্র্যাকটিস। আমরা কমন প্র্যাকটিসের বাইরে যেতে পারবো না। ইডিসিএলের মূল উদ্দেশ্য সাশ্রয়ী দামে কোয়ালিটি ওষুধ সরবরাহের মাধ্যমে জিডিপিতে অবদান রাখা এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে গুণগত মান বজায় রেখে ওষুধ সরবরাহ করা। এটা আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব কারণ দেশের সাধারণ জনগণ আপনাদের ভোক্তা।
মতবিনিময় সভায় ইডিসিএলের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ইডিসিএলের নবনিযুক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. সামাদ মৃধা। সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন খানসহ ইডিসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মতবিনিময় সভা শেষে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম সরজমিনে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো (কেন্দ্রীয় ঔষধাগার) পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন