Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫


বজ্রপাত থেকে বাঁচতে জেনে নিন করণীয়

Main Image

বাংলাদেশে মোট বজ্রপাতের ৭০ শতাংশ হয় এপ্রিল থেকে জুনে।


সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতে মানুষ মৃত্যুর হার বেড়েছে। এর মানে এই না আগের তুলনায় বজ্রপাত বেড়েছে। আমরা ভূ-উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছি, বজ্রপাত আগের চেয়ে বাড়েনি। বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা কমাতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা।

বজ্রপাত কত ধরণের?

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫–২০২০ সালে বাংলাদেশে তিন ধরনের বজ্রপাত সংঘটিত হয়েছে। এক মেঘ থেকে আরেকটি মেঘে বা আন্তমেঘ, একই মেঘের এক স্থান থেকে আরেক স্থান বা অন্তমেঘ এবং মেঘ থেকে ভূমিতে। এ বছরগুলোতে বজ্রপাতের মোট পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৫০ লাখ। দেশে ২০১৫-২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেঘ থেকে ভূমিতে সংঘটিত বজ্রপাতের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ২৭ লাখ ৮ হাজার ৩০৬টি। এর মধ্যে মে মাসে সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ, জুনে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ, আর সেপ্টেম্বরে ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ বজ্রপাত হয়েছিল।

বজ্রপাত কখন হয়?

দৈনিক ও ঋতুভিত্তিক সংঘটনে বজ্রপাতের ভিন্নতা দেখা যায়। ২৪ ঘণ্টা হিসাবে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় রাত ৮-১০টার মধ্যে। বাংলাদেশের মোট বজ্রপাতের ৫৯ শতাংশই হয় মার্চ থেকে মে মাসে। এছাড়া জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হয় ৩৬। তবে মোট বজ্রপাতের প্রায় ৭০ শতাংশ হয় এপ্রিল থেকে জুনে।

মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে আসার আগের দুই মাসে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বজ্রপাতের প্রকোপ অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি হয়।বর্ষাকালে রাঙামাটি, সুনামগঞ্জ ও চট্টগ্রাম বজ্রপাত সংঘটনের দিক থেকে প্রথম তিনটি জেলা। শীতকালে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট আর মৌসুমি-উত্তর ঋতুতে রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়।

কীভাবে রক্ষা পাবেন?

যুক্তরাষ্ট্রে বজ্রপাতে বিপদাপন্ন পরিমাপের একটা জনপ্রিয় পদ্ধতির নাম ৩০-৩০ বা ‘৩০ সেকেন্ড ৩০ মিনিট’।

৩০ সেকেন্ড

বজ্রপাত দেখা ও শোনার সময় থেকে ৩০ সেকেন্ড গুনতে হবে। যদি দুটির মধ্যকার সময় ৩০ সেকেন্ডের কম হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হবে। অথবা আপনি যদি বজ্রঝড়ের শব্দ শুনতে পান, তবে নিরাপদ স্থানের সন্ধান করা সবচেয়ে নিরাপদ। কেননা, বজ্রপাত সাধারণত ঝড়ের সময় বা পরপরই হয়ে থাকে।

৩০ মিনিট

বজ্রঝড়ের শেষ শব্দ শোনার পর থেকে ৩০ মিনিট নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে হবে। নয়তো বজ্রপাতে মৃত্যু বা জখমের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তবে বজ্রপাতের ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা বা সতর্কতা অত্যাবশ্যক।

বজ্রপাতের সময় ঘরে থাকলে করণীয়

১. ফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।
২. প্লাম্বিং যেমন বাথটাব, রান্নাঘরের ধাতব পদার্থ থেকে দূরে থাকুন।
৩. বজ্রঝড়ের সময় জানালা, দরজা বা যেকোনো প্রবেশদ্বার থেকে দূরে থাকতে হবে।
৪. বজ্রপাতের সময় কংক্রিটের বা দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে থাকবেন না।


বজ্রপাতের সময় বাইরে থাকলে করণীয়

১. উঁচু স্থান অবশ্যই এড়াতে হবে।

২. নদীপুকুর, খাল–বিল ইত্যাদির আশপাশে থাকা যাবে না।
৩. ভূমিতে শোয়া বা বিচ্ছিন্ন কোনো বড় গাছের নিচে না দাঁড়ানো।
৪. বৈদ্যুতিক তারের বেড়া, ধাতব পদার্থ বা সংশ্লিষ্ট বস্তু (টাওয়ার) থেকে দূরে থাকা।

৫. পুকুর, নদী–নালা বা হ্রদে মাছ ধরা বা নৌকা ভ্রমণ পরিহার করা।
৬. অনেক মানুষ একসঙ্গে থাকলে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে যেতে হবে।


লেখক

আশরাফ দেওয়ান

শিক্ষক ও গবেষক

কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া

 

আরও পড়ুন