অধ্যাপক ডা. নওশাদ আলী, অধ্যক্ষ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
রাজশাহী মেডিকেলে শিক্ষার পূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নওশাদ আলী। সম্প্রতি ডক্টর টিভি অনলাইনকে দেয়াাএকান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
তাঁর ভাষায়, ‘রাজশাহীর সন্তান ও মেডিকেল কলেজটির সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে বরাবরই এর উন্নতি নিয়ে আমার ভাবনা ছিলো। এরমধ্যে, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অ্যাকাডেমিক পরিবেশ তৈরি। দায়িত্বলাভের শুরু থেকেই এ বিষয়ে চেষ্টা করেছি। আমার সব ফ্যাকাল্টি, শিক্ষক-সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা দারুণভাবে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছেন। বর্তমানে এমবিবিএস পাশের হার অনেক ভাল। প্রতি বছর রামেক থেকে পাসকরা ডাক্তারদের মধ্যে গড়ে ২০/৩০ জন পোস্টগ্র্যাজুয়েশনে চান্স পাচ্ছেন। এটা একটা ভাল অ্যাচিভমেন্ট। এ সবই আমাদের অ্যাকাডেমিক এনভারনমেন্টের প্রভাব।’
কারণ, এক সময় রাজনৈতিক কোন্দল যেভাবে ছিল, সেটা মোকাবেলা করে, পড়ালেখার সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা। আমি নিজে একাডেমিশিয়ান। নিজে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল, ছাত্রদের জন্য যদি সুন্দর একটা পরিবেশ দেয়া যায়, তাহলে এখান থেকে ভাল চিকিৎসক তৈরি করা সম্ভব হবে। যা নিশ্চিতভাবে দেশের কাজে লাগবে। এটা আমার প্রথম ডিউটি ছিল।
আমি শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি। আমার ফ্যাকাল্টিস, আমার কলিগসরা, আমাকে এ ব্যাপারে প্রচণ্ডভাবে হেলপ করেছেন। এখন আমাদের শিক্ষার্থীদের অবস্থান খুবই ভাল। আমাদের মেডিকেল থেকে প্রতি বছর গড়ে ২০/৩০ জন পোস্টগ্র্যাজুয়েশনে চান্স পাচ্ছেন। এটা একটা ভাল অ্যাচিভমেন্ট। এমবিবিএস এ পাশের হারও অনেক ভাল। ফুল অ্যাকাডেমিক এনভারনমেন্ট বিরাজ করছে। এটা আমার বড় অ্যাচিভমেন্ট।
অধ্যাপক ডা. নওশাদ আলী। অধ্যক্ষ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন টানা সাড়ে ৪ বছর। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ২৭ ব্যাচের কৃতি শিক্ষার্থী।
এমবিবিএস কমপ্লিট করার পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ট্রেইনিংও করেছেন রামেক থেকে। জেনারেল সার্জারি এফসিপিএস কমপ্লিট করেও রামেক হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে, পেডিয়াট্রিকস এ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।
অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগলাভের আগে প্রায় সাড়ে ৩ বছর উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মোট কথা, ২০০৮ সাল থেকেই কলেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বিভিন্ন পদে দায়িত্বপালন ।
কলেজ নিয়ে বরাবরই আমার ভাবনা ছিলো। এরমধ্যে, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অ্যাকাডেমিক চ্যালেঞ্জ। অর্থাৎ, পড়ালেখার পরিবেশ নিশ্চিত করা। কারণ, এক সময় রাজনৈতিক কোন্দল যেভাবে ছিল, সেটা মোকাবেলা করে, পড়ালেখার সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা। আমি নিজে একাডেমিশিয়ান। নিজে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল, ছাত্রদের জন্য যদি সুন্দর একটা পরিবেশ দেয়া যায়, তাহলে এখান থেকে ভাল চিকিৎসক তৈরি করা সম্ভব হবে। যা নিশ্চিতভাবে দেশের কাজে লাগবে। এটা আমার প্রথম ডিউটি ছিল।
আমি শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি। আমার ফ্যাকাল্টিস, আমার কলিগসরা, আমাকে এ ব্যাপারে প্রচণ্ডভাবে হেলপ করেছেন। এখন আমাদের শিক্ষার্থীদের অবস্থান খুবই ভাল। আমাদের মেডিকেল থেকে প্রতি বছর গড়ে ২০/৩০ জন পোস্টগ্র্যাজুয়েশনে চান্স পাচ্ছেন। এটা একটা ভাল অ্যাচিভমেন্ট। এমবিবিএস এ পাশের হারও অনেক ভাল। ফুল অ্যাকাডেমিক এনভারনমেন্ট বিরাজ করছে। এটা আমার বড় অ্যাচিভমেন্ট। দ্বিতীয় অ্যাচিভমেন্ট হলো :
সরকারি মেডিকেল কলেজে নতুন কিছু করা খুবই কঠিন একটা বিষয়। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। ইচ্ছা করলেই, কোনকিছু করে ফেলা যায় না। এরমধ্যদিয়েও আমরা বেশকিছু কাজ করে ফেলেছি।
যেমন : শিক্ষকদের নিয়ে শিক্ষক দিবস পালন করা, আরএমসি দিবস উদযাপন করা, কালচার ইভেন্ট করা, আরএমসি দিবসে সাবেক সকল শিক্ষার্থীদের ইনভাইট করা, তাদের নিয়ে প্রোগ্রাম করা,, ইত্যাদি সাড়া জাগানো প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা। কোভিডের মধ্যে দু’বছর বিধিনিষেধের কারণে ওপেন প্রোগ্রাম করতে পারিনি। কোভিড পরবর্তী সময়ে আবার তা চালু করেছি।
রি-ইউনিয়ন টাইপের প্রোগ্রামে সিনিয়র জুনিয়ররা হাজির হন। সিনিয়ররা খোলামেলা পরামর্শ দেন। আমরা সেগুলো সাধ্যমত মানার চেষ্টা করি।
এছাড়া, বর্তমানে সরকারি মেডিকেল কলেজের ৩৭ জন অধ্যক্ষদের মধ্যে অনলাইনে প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময়-কথাবার্তা হয়। আমাদের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি স্যার আমাদের মধ্যস্থতা করে থাকেন। যেটা আমাদের পেশাগত কাজের ক্ষেত্রে পজিটিভ প্রভাব রাখে।
সব সময় চেষ্টা করি, আমরা কিভাবে ডিএমসির মত হবো। এক সময় আমাদের শিক্ষক সঙ্কট ছিল। এখন তা আর নাই। এখন আমরা ভালভাবে বলতে পারি যে, পড়ালেখার দিক থেকে ডিএমসির সাথে আমাদের খুব একটা পার্থক্য নাই।
গত ৩, সাড়ে ৩ বছর ধরে
আগে, কিন্তু মেডিকেল কলেজ নিয়ে কেউ খুব একটা ভাবতো না। বাজেট যা আসতো, হাসপাতালেই খরচ করা হতো। ভিজিট করলেও হাসপাতাল ভিজিট করেই চলে যেত। মেডিকেল কলেজের গুরুত্ব খুব একটা ছিল না। এখন প্রশাসনিকভাবে সবকিছু আলাদা হবার ফলে এখন আর সেটা হয় না। মেডিকেলের শিক্ষকদের আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে। সবকিছু সময়ের সাথে আপডেট করতে হবে। অন্যথায়, শিক্ষকেরা দায়িত্বের প্রতি অতটা গুরুত্ব দেবেন না। এখন আর এসব সমস্যা নাই। আমাদের মেডিকেল কলেজ পরিচালনায় গতি এসেছে। আমাদের শিক্ষকদের নিয়মিত প্রমোশন হচ্ছে, সবাই স্যাটিসফাইড। কারো কোন মনোকষ্ট নেই। ঠিকমত আসছেন, ছাত্র পড়াচ্ছেন, পরীক্ষা নিচ্ছেন। সবকিছুই সুন্দর গোছালো ভাবে চলছে। এমনকি আমাদের মেডিকেল অনুষদের ডিন এতটাই অ্যাকটিভ যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আমাদের অনেকগুলো পরীক্ষা ডিএমসির আগেই সম্পন্ন করতে পেরেছি। আমাদের ডাক্তারেরা আগেই পাশ করে বেরিয়েছে। হাসপাতালে সব সময়ই আমাদের ইন্টার্নরা ছিলেন। কখনও ঘাটতি হয়নি।
এসব মিলিয়ে একটা অ্যাচিভমেন্টের জায়গা তো আছেই।
আরেকটা বিষয়, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লোক। তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারা আমরা ধারণ করি। আপনি জানেন একটা সময় মৌলবাদী আদর্শের লোকেরা এখানে ডমিনেট করতো। অ্যাকাডেমিক পরিবেশ তৈরির স্বার্থে তাদেরকে একটা কমপ্রোমাইজের জায়গায় নিয়ে আসতে পেরেছি। আমাদের ছেলেদেরকে জাতির পিতার আদর্শের কথা বোঝাতে পারছি।
মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ আমরা করেছি। বিভিন্ন স্বাস্থ্য দিবসগুলো আমরা জাঁকজোমকভাবে পালন করার চেষ্টা করছি। কলেজ ম্যাগাজিন করছি। সেখানেও আমাদের শিক্ষকেরা অনেকগুলো বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লিখেছেন।
আমাদের কারিকুলাম কিন্তু ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড। আমি নিজেই কারিকুলাম কমিটির মেম্বার আমাদের প্রায়ই এ বিষয়ে বৈঠকে কথা হয়।
প্রত্যেক দেশেরই ডিজিজ প্যাটার্নে ভ্যারাইটিস বা পার্থক্য আছে। আমাদের দেশে যেমন ডায়রিয়ার অনেক রোগী মারা যায়। ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, কালাজ্বরের অনেক প্রকোপ আছে। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মারা যায়।
ওয়েস্টার্ন বা ইউরোপিয়ান কান্ট্রিগুলোতে কিন্তু এ রোগের তেমন প্রভাব নাই। ডিজিজ প্যাটার্নে চেঞ্জ আছে। তাছাড়া মানুষের সাইকোলজি, ফিজিওলজি, ইকোনোমিক অবস্থা সবমিলিয়েই তো সামাজিক স্ট্রাকচারটা দাঁড়ায়। সোসাইটিতে ভূমিকা রাখতে হলে ইউরোপিয়ান স্টাইলে করলে চলবে না। আমাদের কারিকুলামের মূল কথা হচ্ছে- লার্নিং বাই ডুয়িং। অর্থাৎ শিখতে হবে- সাথে সাথে কাজ করতে হবে। এই জায়গাটায় আমাদের খুবই স্ট্যান্ডার্ড অবস্থা। মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস তৃতীয়বর্ষ থেকেই এটার সুযোগ রয়েছে। সরকারি মেডিকেল গুলোতে শতভাগ প্রতিফলিত হচ্ছে বলেই আমার বিশ্বাস। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা থিওরিটিক্যাল পড়ালেখা বেশি। এ সময় হিউম্যান ডেড বডি নিয়ে ল্যাবরেটরিতে কিছু শেখাই। এরপর তৃতীয়বর্ষ থেকে ক্লিনিক্যাল এটাচমেন্ট অর্থাৎ রোগী কেন্দ্রিক পড়ালেখা শুরু হয়ে যায়। আমি নিজে একটা কথা বলি- মেডিকেল স্টুডেন্টরা যদি হাসপাতালের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঠিকমত ঘুরে বেড়ায়, তাহলে সে অবশ্যই ভাল ডাক্তার হবে। এ সময় তাকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। টিচারদের সংস্পর্শে থাকতে হবে। আমাদের পেশেন্টের কোন ঘাটতি নেই। সুতরাং লার্নিং বাই ডুয়িংয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের কোন ঘাটতি নেই। ডিএমসিতে কম্পারেটিভলি ভাল স্টুডেন্টরা ভর্তি হয়। সেখানকার ফ্যাসিলিটিজও বেশি। তারপরও আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেকেই ভাল করছে। আমাদের এমবিবিএস পরবর্তী ধাপগুলোতে খেয়াল রাখি, এমডি, এমএস, এফসিপিএস, পিএইচডি-তে কতগুলো ছেলে মেয়ে ভর্তির সুযোগ পেল, সেখানে আমাদের কতজন টিকলো।
এসক সময় রাজশাহী মেডিকেল প্রশাসন দেশের ভিন্ন এলাকার ডাক্তারদের হাতে ছিল। প্রতিটা মানুষেরই অঞ্চলভিত্তিক আলাদা টান থাকে। আগের প্রিন্সিপ্যালদের ৯০ ভাগই ছিলেন। ভিন্ন এলাকার। সুতরাং প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের দায়িত্ব থাকলে কিন্তু অতটা দরদ ছিল না। যেটা আমার বা বর্তমান প্রশাসনের আছে। আমাদের বর্তমান শিক্ষকদের ৮০ ভাগই রাজশাহী ও তার আশ-পাশের জেলার। আমি নিজে এই মেডিকেলের ছাত্র ছিলাম। এখানকারই সন্তান। প্রতিষ্ঠানটিকে আমি ওউন/ধারণ করি। মনে-প্রাণে এর উন্নতি চাই। বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে সবসময় কাজ করি। এটা কিন্তু আগের সব প্রশাসনের ছিল না। তারা চাকরি করেছেন- সময় শেষে চলে গেছেন।
এখন আমার টিচারেরা সবাই ডেডিকেটেড হয়ে কাজ করেন। তারা সবাই খুবই সেটিস-ফাইড। শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও ভাল মানের ডাক্তার হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য আমরা সব ধরনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পেরেছি, এটাই আমার স্বার্থকতা। কলিগরাও সহায়তা করছেন। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন।
আরও পড়ুন