Ad
Advertisement
Doctor TV

মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫


মেডিকেল বর্জ্য শোধনে মানা হচ্ছে না বিধি, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

Main Image

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য মতে, সরাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৪৮ টন মেডিকেল বর্জ্য তৈরি হয়।


দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে উৎপন্ন মেডিকেল বর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নেই। মানা হচ্ছে না এ সংক্রান্ত বিধিমালা। এতে জনস্বাস্থ্য বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে বলে সতর্ক করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই উৎপন্ন হয় ৩০ থেকে ৩৫ টন মেডিকেল বর্জ্য। এসব বর্জ্য বিভিন্নভাবে পরিবেশে মিশে গিয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের তথ্যমতে, সারাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৪৮ টন মেডিকেল বর্জ্য তৈরি হয়।

স্বাভাবিক সময়ে ঢাকার দুই সিটিতে প্রতিদিন প্রায় ১৪ থেকে ১৫ টন মেডিকেল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। কিন্তু করোনার কারণে এর পরিমাণ আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রিজম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) তথ্যমতে, হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে আট ধরনের বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এগুলো হলো- সংক্রামক বর্জ্য যা রক্ত এবং অন্যান্য তরল পদার্থ হিসেব পাওয়া যায়। শরীরের টিস্যু এবং কেটে ফেলা বিভিন্ন অঙ্গ। ধারালো বর্জ্য যেমন- ইঞ্জেকশন, সুঁই, সার্জারি কাজে ব্যবহৃত ব্লেড কাঁচি। এছাড়া রয়েছে রাসায়নিক বর্জ্য, ওষুধি বর্জ্য, সাইটোক্সিক বর্জ্য, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এবং অবিপজ্জনক বা সাধারণ বর্জ্য।

এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২০০৮ সালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা পাস হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় এসব বর্জ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

আইনের ৭ এর ২, ৩ ও ৫ উপধারা অনুযায়ী, মেডিকেল বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য চিকিৎসা বর্জ্য মজুদ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে সংক্রামক, অসংক্রামক ও ধারালো বর্জ্য পৃথক ঢাকনাযুক্ত পাত্রে সংরক্ষণ ও বহন করতে হবে। অশোধিত বর্জ্য কোনোভাবেই ৪৮ ঘণ্টার বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না।

বিধি অনুযায়ী, সংক্রামক এবং অসংক্রামক বর্জ্য ঢাকনাযুক্ত আলাদা পাত্রে রাখতে হবে। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, পাত্রের ঢাকনা খোলা এবং পাত্রের বাইরেও যত্রতত্র ময়লা পড়ে আছে। এসব ময়লা থেকে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন জীবাণু।

এসব বর্জ্য রোদে শুকিয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে।  ফলে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, চর্ম রোগ ছাড়াও বিভিন্ন ক্রনিক রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, রেনাল ফেইলরসহ দূরারোগ্য ক্যানসারের মাতো রোগের প্রকোপ দিনে দিনে বাড়ছে। এর বাইরে সংগৃহীত ময়লা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ ও বিনষ্ট না করায় সেগুলো পানিতে মিশে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

কানাডার অন্টারিও রাজ্যের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশি প্রকৌশলী এম কে আহম্মেদ উজ্জ্বল ডক্টর টিভিকে বলেন, বাংলাদেশের বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডিসপোজাল (ধ্বংস) না করার কারণে এবং ময়লা থেকে বাতাসে কার্বন, কার্বনডাইঅক্সাইড, মিথেন গ্যাস, নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর দ্বারা মাটিতে ছড়িয়ে পড়ছে ক্যানসারবাহী উপাদান কার্সিনোজেনিক। মাটি ও পনিতে মিশে যাওয়ায় পানির মাছ, গাছের ফল এবং সবজির মধ্যেও এই উপাদান পাওয়া যাচ্ছে। ফলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।

বিধিমালা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের অবশ্যই বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা এবং জীবাণুমক্ত করার নিজস্ব ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব খরচে এবং সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে বর্জ্যের ডিসপোজাল (ধ্বংস) বা ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন ডক্টর টিভিকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এলাকার মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রিজম নামের প্রতিষ্ঠানের।

তিনি বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী তারা মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ করে এবং এগুলো ধ্বংসের কাজ করে। এসব বর্জ্য আমাদের (সিটি করপোরেশেনের) জায়গা ব্যবহার করে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলেন। তবে এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও আধুনিক এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।’

ঢাকার দুই সিটির মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজম ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার আনিসুর রহমান বলেন, ‘হাজার হাজার লিটার কেমিক্যাল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এত পরিমাণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা ধ্বংস করার সক্ষমতা নেই। কাজেই এসব কেমিক্যাল গুলশান লেক, হাতিরঝিল লেক ছাড়াও তুরাগ বা বুড়িগঙ্গার মতো নদীগুলোতে পড়েছে। এজন্য আমরা শুধু সলিড বর্জ্যগুলোই সংগ্রহ করছি।’

রাজধানীর অদূরে মাতুয়াইলে বর্জ্য শোধনের যে বড় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেখানেও মেডিকেল বর্জ্য নিয়ে তেমন কোনো আলাদা পরিকল্পনা নেই। সেখানে অন্যান্য গৃহস্থালী বর্জ্যের সঙ্গে মেডিকেল বর্জ্য পানিতে মিশে যাওয়ায় ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলো মাছ, ফল ও সবজির মধ্যেও পাওয়া যাচ্ছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগ- আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর ডক্টর টিভিকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপানা নিয়ে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে মেডিকেল বর্জ্য পুড়িয়ে এবং কেমিক্যাল ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের বাধ্যবাধকতার কারণে সবগুলো বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

পানি ও পরিবেশ দূষণের জন্য শিল্পখাত সবচেয়ে দায়ী বলেও মন্তব্য করেন আইইডিসিআরের এই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন