করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত একজন ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কেউ প্রণোদনার অর্থ পাননি।
ডক্টর টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটা জানিয়েছেন অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ-ওজিএসবি’র সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম।
তিনি বলেন, আসলে আমি নিজে একজন চিকিৎসক। কখনো কিন্তু ওইভাবে সুরক্ষার কথা মাথায় আসেনি। পড়াশোনা করার সময়ও আসেনি, আবার যখন পেশাগত কাজ শুরু করলাম তখনো মনে হয়নি। আমিতো কাজ করেই যাচ্ছি এ জন্য আবার কারো কাছে নিজের সুরক্ষা চাইতে হবে, একথা আমার কখনো মনে হয়নি।
অধ্যাপক রওশন আরা বলেন, কিন্তু কিছু কিছু ঘটনার পরে নানাভাবে সুরক্ষার বিষয়টি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এখন করোনাকালীন সময়টা নিয়ে যদি বলি- তাহলে আমাদের যারা ডাক্তার, নার্স কাজ করছেন, তার বিনিময়ে আমাদের সমাজ, পরিবার কতটুকু সুরক্ষা দিতে পারছি? এর পরে চিন্তা করছি দেশ বা রাষ্ট্র কতটুকু সুরক্ষা দিতে পারছে?
তিনি বলেন, প্রথমে চিকিৎসকদের প্রণোদনা দেওয়ার একটা কথা উঠেছিল। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল চিকিৎসকদের ভালো জায়গায় রাখা হবে, সুরক্ষা দেওয়া হবে, প্রণোদনাও দেওয়া হবে। প্রথমে চিকিৎসকদের আবাসিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু আর সে ব্যবস্থাটা নাই।
ওজিএসবি’র সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘প্রণোদনার যে লিস্ট পেয়ে ছিলাম তাতে আমি জানি মাত্র একজন ডাক্তার (যিনি মারা গেছেন) মঈন উদ্দিন প্রণোদনা পেয়েছেন। আর কেউ প্রণোদনা পাননি। আমাদের কাছে বারবার লিস্ট চাওয়া হয়েছে আমরা দিয়েছি।‘
তিনি বলেন, এখন যারা কাজ করছেন, তাদের কথা কেউ ভাবছেন না। এসময় তারা আইসিউতে, করোনা ইউনিটে কাজ করে বাড়ি ফিরছেন এবং এতে বাড়ির লোকেরাও অরক্ষিত হয়ে যায়। তারা কীভাবে যাচ্ছেন, আবার পরদিন এসে কীভাবে কাজ করবেন- এসব বিষয়ে কেউ কোনো কিছুই ভাবছে না। কিন্তু এটা খুবই উচিত ছিল যে তাদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা, সঙ্গে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা।
অধ্যাপক রওশন আরা বলেন, আমরা যে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, সেখানে শুধু আমাদের চিকিৎসকদের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করলে হবে না, সঙ্গে সঙ্গে টিমটার সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে একজন প্রশ্ন করেন- আপনারা কেন এখনো হেলথ ইন্সুরেন্সের জন্য ফাইট করছেন না? আমি বললাম- আমরা সুবর্ণজয়ন্তী পালন করে ফেলেছি; কিন্তু আমাদের এখনো একটা স্বাস্থ্যনীতি তৈরি হয়নি। যেটা তৈরি হওয়ার কথা এখনো সেটা তৈরি করতে পারিনি, আর আমাদের হেলথ ইন্সুরেন্স করার বিষয়ে কী ভাববো!
ওজিএসবি’র সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি শুধু চিকিৎসকের কথা বলছি না, এই যে স্বাস্থ্যকর্মী পুরো টিম যারা করোনার সময় চিকিৎসা সার্ভিস দেবে, তাদেরও কিন্তু একটা সুরক্ষার ব্যবস্থা করে তারপর তাদের কাছ থেকে কী ধরনের সার্ভিস আসা করা যায় সেটা নিয়ে ভাবা উচিত। আমরা কিন্তু প্রতিনিয়ত করোনায় চিকিৎসকদের হারাচ্ছি। সবাই একটা ভয়ের ভেতরে আছে।
আরও পড়ুন