দিনে কতবার খাবেন, কতটুকু খাবেন?
দিনে কতবার খাবেন, কতটুকু খাবেন?
সুস্থ এবং ভালো থাকতে আমাদের লাইফস্টাইলকে নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করি। লাইফস্টাইল মডিফিকেশনের প্রধান এবং প্রথম শর্তই হচ্ছে আমাদের খাওয়া-দাওয়া স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সময়মতো গ্রহণ করা। কিন্তু আমরা সে ক্ষেত্রে অনেকেই মোটামুটি ভুল করি।
দেখা যায়, আমরা অনেকেই সময়মতো খাবার খাই না। আবার যখন খাবার খাই তখন দেখা যায়, আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের সুফল চিন্তা করে খাবার খাই না। অনেক বেশি পরিমাণ খাবার খেয়ে থাকি। এটাই কিন্তু আমাদের ভালো থাকার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ সকালের নাস্তা করে না। যদি খাইও সেটা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাই না। অনেকে দেখা যায়, চা-বিস্কিট খেয়ে তাদের ব্রেকফাস্ট সেরে ফেলছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা দিনের শুরুতেই ভুল করে ফেলি।
এভাবে দিনের শুরুতে যদি আমরা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই, তাহলে সারাদিনে আমাদের গ্যাসের সমস্যা বা এসিডিটি দেখা দেয়। এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আমাদের সারা দিনটি চালিয়ে যেতে থাকি। সুতরাং আমাদের সকালের নাস্তা অবশ্যই স্বাস্থ্যকর হতে হবে। সেখানে ব্যালেন্সড ডায়েট থাকে।
আমাদের কাছে অনেক রোগী আসেন, তারা বলে থাকেন, তাদের লোয়ার আবডোমেন ভারী হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে জানতে পারি এর কারণ হচ্ছে তারা অনেক দেরি করে তাদের রাতের খাবার খেয়েছেন। অথবা তারা অনেক বেশি পরিমাণে রিচ খাবার গ্রহণ করছে। খাওয়ার পরপরই তারা ঘুমাতে চলে যান।
এক্ষেত্রে আমরা অনেক বড় ভুল করে ফেলি, আমরা খাওয়ার পরপরই ঘুমাতে চলে যাই। আমরা এ কাজটি করবো না। আমরা একটি নিয়ম মেনে খাবো। আমাদের রাতে হালকা খাবার খেতে হবে। কারণ আমাদের বিভিন্ন ধরনের ডিজঅর্ডার, কিছু সাইড ডিজিজ থাকে। তাই আমরা যদি স্বাস্থ্যকর উপায়ে খাবার না খাই, আমাদের ডিজঅর্ডারগুলোকে আমরা আরও বেশি বাড়িয়ে ফেলি। তাই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমরা দিনে রুটিনমাফিক আমাদের খাবারগুলোকে হেলদি ওয়েতে সুষম খাবার গ্রহণ করছি কিনা।
আমরা পুষ্টিবিদরা সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকি, আমাদের সারাদিনের খাবারটিকে তিনটি মেজর মিল এবং তিনটি শর্ট স্ন্যাক্সে খাওয়ার জন্য। অর্থাৎ সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবারের পাশাপাশি তিনটি শর্ট স্নাক্স। অর্থাৎ মধ্যকালীন সময় কিছু খাওয়া, বিকেলে কিছু খাওয়া এবং রাতে ঘুমানোর আগে কিছু খাওয়া।
আমাদের ব্রেকফাস্ট অবশ্যই হতে হবে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে। এবং সেখানে অবশ্যই কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন এবং মিনারেলস যুক্ত খাবার থাকতে হবে। সেখানে প্রোটিন থাকতে হবে এবং সব ধরনের খাবার যখন একসাথে যুক্ত থাকবে সেটাকে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার বলা যায়।
ব্রেকফাস্ট তথা সকালের নাস্তার একটা মিনিং আছে অর্থাৎ আমাদের ফাস্টিং তথা উপবাসকে আমরা ব্রেক করছি বা ভাঙছি। সুতরাং এটা আমাদের সারাদিনের এনার্জি বুস্টআপের একটি অন্যতম উপায়। সুতরাং আমাদের সকালের নাস্তা যেন স্বাস্থ্যকর এবং সুষম হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। অবশ্যই সেটা সকালে চা-বিস্কিট অথবা কফি-বিস্কিট হবে না।
এরপর মিড মর্নিং এ আমাদের স্বাস্থ্যকর কোনো স্নেক্স খেতে হবে। এক্ষেত্রে আপনারা কিছু নাটস খেতে পারেন, এটি হচ্ছে হেলদি ফ্যাট। কিছু ফল খেতে পারেন। এই স্ন্যাক্স সবার জন্য অবশ্যই জরুরি। বেশি জরুরি যারা ডায়াবেটিক রোগী। কারণ উনাদের দেখা যায়, সকালে নাস্তা খাওয়ার পর দুপুরের খাবার খান ২টা থেকে আড়াইটার দিকে। এক্ষেত্রে অনেক সময় তাদের হাইপোগ্লাইসেমিক ফিলিংস হতে পারে। অর্থাৎ সুগার লেভেল হঠাৎ করে কমে যেতে পারে। এজন্য তাদের এই স্নাক্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দুপুর ১টা থেকে ২র মধ্যে আমরা দুপুরের খাবার শেষ পরামর্শ দেই। দুপুরের খাবার অবশ্যই মাঝারি মাপের হতে হবে। অনেকে মনে করেন দুপুরে যদি হালকা খাই, তাহলে হয়তো আমি ভালো থাকবো। কিন্তু বিষয়টি একেবারেই ভুল। আপনারা দুপুরের খাবার অবশ্যই মাঝারি মাপের গ্রহণ করবেন এবং সেখানে যেন অবশ্যই প্রতিটি নিউট্রিশন থাকে। সেটা বাইরের কোনো খাবার হবে না, সেটা কোনো রিচ খাবার হবে না, দুপুরের খাবার অবশ্যই সহজপাচ্য খাবার হবে। আমরা যদি মাঝারি মাপের খাবার খাই দুপুরে, সেখান থেকে আমরা নিজেদেরকে অনেকক্ষণ সময় পর্যন্ত কর্মক্ষম রাখতে পারবো। আমরা অনেক বেশি শক্তি পাবো।
এই করোনা মহামারীতে অনেক রোগী আমাদের বলেন, তারা বিকেলে কিছু খাচ্ছেন না। কারণ তাদের দুপুরের খাবার খেতে খেতে দুপুর আড়াইটা, ৩টা বা ৪টা বেজে যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাদের সময় মেনে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করবো।
বিকেলের নাস্তায়ও আমাদের হেলদি খাবার খেতে হবে। কোনো ভারী খাবার, কোন জাঙ্কফুড যাতে না হয় এবং কোনো ভাজাপোড়া খাবার যাতে না হয় খেয়াল রাখতে। বিকেলের নাস্তায় হতে পারে হেলদি কোনো ফ্রুটস, গ্রিন-টি বা রেড-টি’র সঙ্গে বিস্কুট।