ওষুধেই ৮০ ভাগ পিসিওএস রোগী ভালো হন
ফাইল ছবি
পিসিওএস (পলি সিস্টিক ওভারি সিনড্রোম) নারীদের একটি জটিল রোগ। সঠিক সময়ে রোগ নির্নয় না করা ও চিকিৎসা না নিলে এর প্রভাবে বন্ধ্যাত্ব, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগসহ বেশ কিছু জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। পিসিওএস সনাক্ত ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে ডক্টর টিভির সঙ্গে কথা বলেছেন পলি সিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ক্লাবের সভাপতি ও দেশের প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. শারমিন আক্তার।
ডক্টর টিভি: ম্যাডাম, কেমন আছেন?
ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: আল্লাহর রহমতে ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ।
ডক্টর টিভি: পিসিওএস রোগটি সনাক্ত করার পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু বলুন।
ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: পিসিওএস সনাক্ত করতে আমরা পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম, হরমোন টেস্ট, সিরাম টেস্টোস্টেরন, এফএসএইচ এবং ওজিটিটি, সিরাম লিপিড প্রফাইল পদ্ধতি অনুসরণ করি।
ডক্টর টিভি: রোগ নির্নয় হবার পর যদি সঠিক সময় চিকিৎসা না নেয়, তবে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হকে পারে?
ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: অবশ্যই। রোগ নির্নয়ের পরেই যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। নইলে বন্ধ্যাত্ব, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, মানসিক চাপ, মেজাজের পরিবর্তন, নাক ডাকা, দিনের বেলা ঝিমানো এ ধরণের রোগ হতে পারে। এমনকি কখনও কখনও জরায়ুর ভিতরের গায়ে (এন্ডোমেট্রিয়াম) ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে। বেশি ওজনের নারীদের এসবের ঝুঁকি বেশি।
ডক্টর টিভি: হরমোন টেস্টের মাধ্যমে কিভাবে পিসিওিএস সনাক্ত হয়?
ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: হরমোন টেস্ট করতে দিলে দেখা যাবে, ছেলেদের হরমোনটা অনেক বেশি পরিমাণে মেয়েদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে। বেশি হওয়াতে তার মাসিকে সমস্যা হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে এটা ধরা পরে।
ডক্টর টিভি: চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো বলুন?
ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: নারীদের জরায়ুর দুই পাশে দুইটা ওভারী থাকে। যেখান থেকে ডিম ফুটে। সেখানে ছোট ছোট নেকলেস পের্টান থাকে। নেকলেস পের্টানে সিস্ট হলে ডিমগুলো ফুটতে পারেনা। সেগুলোও সেখানে সিস্ট হয়ে থাকে। ছোট ছোট সিস্ট। এগুলো সত্যিকারের সিস্ট না। আল্ট্রাসনোগ্রামে এটা ধরা পরে। এক্ষেত্রে কোনো অপারেশন লাগেনা। এমনিতেই ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা দিলে ভালো হয়ে যায়। আর হলো, রোগীকে আমরা ডায়োলসিস করি।
ডক্টর টিভি: পিসিওএসের কারণে কিভাবে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে?
ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: নারীদের ফলিকলের মধ্যে ভাল সংখ্যায় ডিম থাকে। কিন্তু পিসিওএস আক্রান্ত হলে সেগুলো বেরোতে (ওভুলেশন) পারেনা। ফলস্বরূপ, শুক্রাণু ও ডিম মিলিত হতে পারে না। এসবের কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
ডক্টর টিভি: পিসিওএস এর প্রভাবে মাসিক বন্ধ বা বাচ্চা না হলে তার চিকিৎসা কি?
ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: ভয় পাওয়ার কিছু নাই। কোনো না কোনো সময় বাচ্চা হবেই। এদের অনেক ডিম্বাণু থাকে। ডিম্বাণুটা বাচ্চা হওয়ার অন্যতম রসদ, মেয়েদের জন্য। সবার শরীরেই কিন্তু পুরুষ ও নারী হরমোন থাকে। পুরুষ হরমোনটা মেয়েদের মাঝে অল্প পরিমাণে থাকে। কিন্তু পিসিওএস হলে নারীদের পুরুষ হরমোন বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়াম করলে, ব্লাড গ্লুকুজট ও ইনসুলিন পরিমান কমিয়ে দেয়। এইভাবে পুরুষ হরমোনটা কমে গেলেই গর্ভধারণটা সহজ হয়ে যায। খুশির খবর হলো, সঠিক চিকিৎসায় অধিকাংশ (অন্তত ৮০ শতাংশ) নারীই গর্ভধারণে সক্ষম হন।
ডক্টর টিভি: পিসিওএস রোগীদের অস্ত্রোপচার কখন দরকার হয়?
ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: ওষুধ ও অন্যান্য পদ্ধতিতে যখন উপকার হয়না, তখন অস্ত্রোপচার করা জরুরি হয়ে পড়ে।
ডক্টর টিভি: অস্ত্রোপচার কী কিশোরী বা অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রেও জরুরি?
ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: না। কিশোরীদের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়না। ওষুধ না খেয়ে ব্যায়াম ও খাবারে পরিবর্তন এনে ৫০ ভাগ ঠিক হয়ে যায়। তবে বিয়ের পরে মা হওয়ায় সমস্যা দেখা দিলে, ওষুধ খেতে হয়। বাচ্চা আসতে অসুবিধা হলে অস্ত্রোপচারের দরকার হয়। এছাড়া, বাচ্চা হওয়ার পরেও সমস্যা ফিরে আসতে পারে। সেক্ষত্রে কিৃছু নিয়ম মানার মাধ্যমে রোগটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ডক্টর টিভি: পিসিওএস রোগীদের মাসিকের সমস্যা দুর করার চিকিৎসা কি?
ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি। অনেক সময় কিন্তু মায়েরা অবাক হন। বলেন,, আমার মেয়ের তো বিয়ে হয়নি, তাহলে কেনো জন্ম নিয়ন্ত্রণ ওষুধ দিচ্ছেন? আমরা বলি, জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি যে শুধু মাত্র জন্মনিয়ন্ত্রণের ই কাজে আসে তা কিন্তু নয়। এটি আরও অনেক রোগের ক্ষেত্রে কাজে আসে। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বড়ি তিন মাস দিলে পরে বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই এই মাসিকের সমস্যাটা ঠিক হয়ে যায়। আর এটাতে না হলে আমরা আরও কিছু হরমোন দেই। এছাড়া, লেপসকপি করে ছোট ছোট সিসগুলো থেকে পানিটা বের করে দেই। এতে তার মাসিকটা নিয়মিত হয়৷ বিবাহিত হলে তার গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়।
ডক্টর টিভি: আপনাকে ধন্যবাদ ম্যাডাম।
ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু: আপনাকে ও ডক্টর টিভির সকল দর্শক-শ্রোতাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।