দেশে ৬০ শতাংশ মাতৃমৃত্যু কমেছে
দেশে ৬০ শতাংশ মাতৃমৃত্যু কমেছে
আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর বা সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। নারী স্বাস্থ্যের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আমাদের মাতৃস্বাস্থ্যের কথা মনে পড়ে। আমরা ২০১০ সালে মাতৃমৃত্যু নিয়ে জরিপ করে দেখেছি, তখনই কিন্তু ৪০ শতাংশ মাতৃমৃত্যু কমাতে সক্ষম হয়েছি।
সম্প্রতি একটি জরিপ হয়েছে। সেটি হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এবং আইসিডিডিআর-বি খুব ভালো একটি মাতৃস্বাস্থ্যের ওপর সমীক্ষা করেছে। এতে বাংলাদেশকে উদাহরণ দেওয়ার মতো একটি দেশ উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এ সমীক্ষা চালানো হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ মাতৃমৃত্যু কমেছে। এটি নিঃসন্দেহে অনেক বড় অর্জন। তারপরও সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি লাখে ১৬৮ মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। এজন্য আমরা মনে করি, এখনো এ নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে। সন্তান জন্মদানে একটি মায়েরও মৃত্যু আমরা চাই না।
এ অর্জনে অনেক কিছু জড়িত। শুধু মাতৃসেবা দিয়ে এটি হয়নি। এর সাথে নারী শিক্ষার যে উন্নয়ন হয়েছে, নারীর ক্ষমতায়নও সরাসরি জড়িত। মাতৃস্বাস্থ্যের সূচকগুলোতে আমরা ভালো করার সাথে পৃথিবীতে দেখানোর মতো একটি পরিবেশ আমরা তৈরি করছি।
আমাদের দেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। মাত্র আটটি, আগে ছিল পাঁচটি। এখন কিন্তু শুধু সরকারি পর্যায়ে হাসপাতালের কথা চিন্তা করলে ৩৮টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর প্রায় পাঁচ থেকে ১০ গুণ বেশি প্রাইভেট সেক্টরে হাসপাতাল এবং সেবাদান কেন্দ্র রয়েছে। আমরা এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চিকিৎসা দিতে পারছি।
মাতৃস্বাস্থ্য বলতে গেলে বন্ধ্যাত্বের কথাই যদি আমরা বলি, আমরা এখন কি না পারি? আমাদের সেই টেস্টটিউব বেবি থেকে শুরু করে পৃথিবীর উন্নত দেশে যা যা জিনিস আবিষ্কার ও চিকিৎসা পদ্ধতিতে যুক্ত হয়েছে, সে ধরনের চিকিৎসা কিন্তু আমরাও দিতে পারছি। তারপর আমাদের নারীর স্বাস্থ্য বলতে শুধু মাতৃস্বাস্থ্যই নয়। নারীরও হার্ট আছে, নারীরও চোখ আছে, নারীরও কিডনি আছে, হাড্ডি আছে। এগুলোতেও নজর দিতে হবে। ইতিমধ্যে কার্ডিওলোজিতে আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি। এখন আমাদের বাইরে গিয়ে আর বাইপাস সার্জারি করতে হয় না বা হার্টের অন্যান্য যে জটিল অস্ত্রোপচার, তা দেশেই করা সম্ভব হচ্ছে। কাজেই এটি আমাদের বিরাট অর্জন। চোখের চিকিৎসাও আন্তর্জাতিক মানের করা সম্ভব হয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিক একটা স্ট্যাটিক ক্লিনিক মাত্র ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি করে ক্লিনিক করা এটা কিন্তু খুব সহজ ব্যাপার না। যেটার জন্য একজন মানুষের ১৫-২০ মিনিট হেঁটে গিয়ে সে কিন্তু চিকিৎসাটা নিতে পারে। কাজেই সেখানে আমাদের অনেক কাজ করার আছে।
তবে একটা স্ট্রাকচার দাঁড়িয়ে গেছে এবং উন্নয়নটা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের ইউনিয়ন পর্যায়ে এবং জেলা পর্যায়ে, প্রত্যেকটা পর্যায়েই কিন্তু আমাদের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসা হচ্ছে। যদিও আমরা, সব সময় নেই নেই করি। আমাদের কিশোরী স্বাস্থ্যের দিকে সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে। ওজিএসবি সরকারের সাথে এজন্য কাজ করছে।
এখন তো বয়স্ক পুরুষ-নারী সবারই দীর্ঘায়ু হওয়াতে অনেক অসুস্থতাও বেড়ে গেছে। যেমন ধরেন যে, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার— এগুলো বয়সের সাথে সাথে বেড়ে গেছে। ওবেসিটি এবং চোখের সমস্যা, দাতের সমস্যা, প্রত্যেকটি জিনিসের সমস্যা বয়সের সাথে সাথে বেড়ে গেছে। সেখানে আমরা যতই অর্জন করছি ততই যেনো আমাদের মনে হচ্ছে আরও বেশি অর্জন করা দরকার।
আমাদের এইটুকু নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না। আমাদের আরও এগোতে হবে। একটা জায়গায় আমার কাছে মনে হয়, আমাদের হেরে যাওয়া চলবে না। সেটি হলো, নারীর প্রতি সহিংসতা। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়াবহতা দেখছি। সরকারের সাথে সবাই মিলে কাজ করলে আশা করি এ ক্ষেত্রেও সফলতা আসবে।
এখানে আরেকটি জিনিস আমি একটু বলে নিতে চাই, আমরা কিছু জিনিস দেখছি যে মাদকের প্রভাব আমাদের কিশোর-কিশোরীদের শেষ করে ফেলছে। একটা জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আরেকটা হলো নৈতিকতা কমে গেছে। শুধু প্রতিযোগিতা, টাকার প্রতি মোহ ও লোভের কারণে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে গেলেও এ জায়গাটি নিয়ে গর্ববোধ করতে পারছি না। আমাদের মানবিকতার উন্নয়ন করতে পারলে আসল সাফল্য আসবে। এজন্য প্রত্যেকটা কাজের মধ্যে আমাদের দেশপ্রেম থাকতে হবে।