
ছবিঃ সংগৃহীত
নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য নিরসন ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। চলমান এ আন্দোলনের ফলে সারা দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিনের নিয়মিত কার্যক্রমে পরিচালিত ১৫ হাজার টিকা কেন্দ্র বন্ধ থাকায় প্রায় দেড় লাখ মা ও শিশু নিয়মিত টিকাদান সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা তাদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা বন্ধ করতে তারা কখনোই চাননি; তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘদিনের অবহেলা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ তাদেরকে কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য করেছে। তাদের দাবি, ২৭ বছর ধরে বিভিন্ন সময় আন্দোলনে যৌক্তিকতা স্বীকার করলেও প্রস্তাবিত দাবিগুলো বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
‘বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে গত শনিবার শুরু হওয়া এই অবস্থান কর্মসূচিতে জিও জারি না হওয়া পর্যন্ত কাজে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। সোমবার সকাল থেকেও দেশের ৬৪ জেলা থেকে হাজারো স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক ব্যানার–ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন।
স্বাস্থ্য সহকারীদের ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা সংযুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমাধারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান, পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা, সকল স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিদর্শকদের প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, বেতন নির্ধারণে টাইম স্কেল ও উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্সকে সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া
স্বাস্থ্য সহকারীরা অভিযোগ করেন, ১৯৭৭ সাল থেকে বেতন কাঠামো ও পদমর্যাদা উন্নয়নে অন্যান্য বিভাগ—যেমন কৃষি বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ— ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি পেলেও স্বাস্থ্য সহকারীরা বারবার বঞ্চিত হয়েছেন। তারা বলেন, গৃহপালিত প্রাণির চিকিৎসাসেবাদানকারীরা যেখানে টেকনিক্যাল মর্যাদা ও গ্রেড উন্নয়ন পেয়েছেন, সেখানে মা ও শিশুর জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ ইপিআই সেবায় নিয়োজিত তৃণমূল স্বাস্থ্য সহকারীরা এখনো বৈষম্যের শিকার।
নেতারা অভিযোগ করে বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার শিকার। ভিডিও কনফারেন্সসহ বিভিন্ন আলোচনায় আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা সফলভাবে প্রায় পাঁচ কোটি টিকা প্রদান সম্পন্ন করেছি। কিন্তু কর্মকর্তারা তাদের দেওয়া কথা রাখেননি।”
আরও পড়ুন