Ad
Advertisement
Doctor TV

বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫


দেশের রোগীদের নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবায় পথপ্রদর্শক হতে হবে বিএমইউকে: অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান

Main Image

ছবিঃ সংগৃহীত


বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিএমইউ শুধু নিজের প্রতিষ্ঠানে নয়, বরং দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে কীভাবে রোগীদের নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়, সে ক্ষেত্রে উদাহরণ স্থাপন করতে হবে। দেশের রোগীদের নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবায় বিএমইউকে পথপ্রদর্শক হতে হবে। তিনি আরও বলেন, রোগীর নিরাপত্তা, নিরাপদ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে নিরাপদ চিকিৎসক ও নার্স তৈরি, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা, রোগ প্রতিরোধের দিকে গুরুত্ব দেওয়া, প্রতিরোধযোগ্য রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে মানুষকে রোগে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করা, চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য গাইডলাইন তৈরি ও তা অনুসরণ করা, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) মেনে চলা, এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ, বিশ্ব রোগী নিরাপত্তা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক বিশেষ আলোচনা সভায় কথা গুলো বলেন  প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর পদ মর্যাদায় নিযুক্ত অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান।

 

তিনি আরো বলেন, মানুষ কেন অনেক স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত বিষয় চর্চা করে না, তার কারণগুলোও খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিএমইউ-এর দায়িত্ব হলো দেশের রোগীদের নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য নীতিমালা তৈরি, পদ্ধতি আবিষ্কার এবং দেশের সমগ্র স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহে রোগীদের নিরাপদ সেবা প্রদানের বিষয়ে দিক নির্দেশক গাইডলাইন তৈরি করা। বিএমইউ দেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী রোগী হাসপাতালে আসার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে সার্বিক নিরাপত্তায় আলোকবর্তিকার ভূমিকা পালন করবে।

 

বিএমইউ-এর মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম ‘শুরু থেকেই রোগীর নিরাপত্তা (Patient Safety From The Start!)’ স্লোগানকে সামনে রেখে বলেন, অনিরাপদ বিষয় থেকে রোগীদের মুক্তি দিতে হবে। দেশের সকল পর্যায়ে রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিএমইউ-এর দায়িত্ব। চিকিৎসাসেবায় নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে নীতিমালা তৈরি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ে বিএমইউকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে রোগীদের জন্য নিরাপদ করতে জনসচেতনতা তৈরি, স্বাস্থ্য জনবলের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, সংক্রমণ প্রতিরোধে দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে রোল মডেল হিসেবে কাজ করা, গুণগত মানের উন্নয়ন, প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা, যথাযথ প্রটোকল অনুসরণ, যথাযথ প্রশিক্ষণের আয়োজন এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে আগামী দিনে সমগ্র দেশে নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে বিএমইউ অঙ্গীকারবদ্ধ।

 

‘প্রতিটি নবজাতক ও প্রতিটি শিশুর জন্য নিরাপদ চিকিৎসা ও সেবা’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে বিএমইউ-এর উদ্যোগে নবজাতক বিভাগসহ শিশু অনুষদভুক্ত সকল বিভাগ ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর নিরাপদ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

 

অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন), ‘ইনফেকশন প্রিভেনশন এন্ড কন্ট্রোল (আইপিসি), বিএমইউ পারপেক্টিভ’ বিষয়ে তথ্যসমৃদ্ধ ও বাস্তবসম্মত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি রোগীর নিরাপত্তায় আইপিসি কতটা জরুরি তা তুলে ধরেন এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের বর্তমান অবস্থা, সীমাবদ্ধতা, চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়সমূহ বিশদভাবে আলোচনা করেন। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলদারও তার বক্তব্যে স্বাস্থ্যসেবার প্রতিটি পর্যায়ে রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি নবজাতক ও শিশুদের নিরাপদ চিকিৎসা ও সেবার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন যাতে সুস্থ ও সুস্বাস্থ্যবান ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিশ্চিত করা যায়।

 

ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, রোগী নিরাপত্তা হলো রোগীর অধিকার। চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রচেষ্টায় এটি নিশ্চিত করা সম্ভব। রোগীর নিরাপত্তা শুধু চিকিৎসক বা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে শুধুমাত্র ডাক্তারই দায়ী—এই ভুল ধারণা দূর করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ) এর সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, রোগী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যারা মা হবেন বা মা হতে যাচ্ছেন তাদের সচেতন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, রোগ প্রতিরোধ, ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করা, নিরাপদ সার্জারি করা এবং চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবার প্রতিটি পর্যায়ে সঠিক মান নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, রোগীর নিরাপত্তাকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।

 

শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোঃ আতিয়ার রহমান এবং নিওন্যাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুল মান্নান নবজাতক ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে কোনোভাবেই ক্ষতি না করে নিরাপদ চিকিৎসা নিশ্চিত করার ওপর বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

 

অনুষ্ঠানে বিএমইউ-এর অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি সহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা উল্লেখ করেন, এই দিবসের উদ্দেশ্য হলো মানুষের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা, বৈশ্বিক বোঝাপড়া উন্নত করা এবং রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত করা। প্রতিটি নবজাতক ও শিশুর জন্য নিরাপদ সেবা প্রদানের গুরুত্ব আরও বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বাংলাদেশে রোগী নিরাপত্তা কার্যক্রম অগ্রগতি লাভের পথে থাকলেও কিছু বড় চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। দেশে রোগী নিরাপত্তা সম্পর্কিত আলাদা আইন বা নীতিমালা নেই। হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত মান যাচাই বা পর্যবেক্ষণ করা হয় না। অনেক স্বাস্থ্যকর্মীর প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। ভুল হলে তা স্বীকার বা রিপোর্ট করতে অনীহা বিদ্যমান, যা একটি সংস্কৃতিগত সমস্যা। রোগী ও পরিবারের সচেতনতা, তথ্য জানার সুযোগ এবং অংশগ্রহণ অনেক ক্ষেত্রে সীমিত। বাজেট ও পর্যাপ্ত জনবল তুলনামূলকভাবে কম। বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে পর্যাপ্ত সমন্বয় নেই। এছাড়া, চিকিৎসা, ওষুধ বা অপারেশনের সময় কোনো ভুল বা ক্ষতিকর ঘটনা ঘটলে রোগীর পরিবারকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়, যা তাদের জন্য অনেক কষ্টের। এর প্রভাব সমাজের অর্থনীতিতেও পড়ছে। তাই রোগী নিরাপত্তা কেবল স্বাস্থ্যসেবা নয়, বরং অর্থনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উক্ত আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের রোগীদের নিরাপদ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে দিকনির্দেশক এবং পথপ্রদর্শক হিসেবে তার দায়িত্বের গুরুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
 

আরও পড়ুন