Ad
Advertisement
Doctor TV

বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫


রিপোর্টারের নাম : অনামা
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দৈনন্দিন দাঁতের পরিচর্যায় লুকানো বিপজ্জনক প্লাস্টিক

Main Image

ছবিঃ প্রতীকী


দাঁত ও মাড়ির সুস্থতা রক্ষায় নিয়মিত ব্রাশ, ফ্লস এবং ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া নিঃসন্দেহে জরুরি। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে, এই অভ্যাসগুলোর অজান্তেই আমরা বৈশ্বিক মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণে অবদান রাখছি।

টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, ফ্লস এসব প্রতিদিনের পণ্যের মাধ্যমে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা পানির মাধ্যমে নদী-সমুদ্র হয়ে খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করছে। অনেক দেশে টুথপেস্টে মাইক্রোবিডস নিষিদ্ধ হলেও আধুনিক টুথপেস্টে এখনও প্লাস্টিকের সূক্ষ্ম অংশ থাকতে পারে। তেমনি, নাইলন বা টেফলন ফ্লস থেকে ক্ষুদ্র তন্তু ছিটকে পড়ে আর ব্রাশ করার সময় টুথব্রাশের ব্রিসল ভেঙে যায়। প্রতিদিনের এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ মিলেই সময়ের সঙ্গে এক বিশাল দূষণ সমস্যা তৈরি করছে।

 

ফিলিং ও ডিভাইসের ভূমিকা

শুধু ভোক্তা পণ্যই নয়, দাঁতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অনেক আধুনিক উপকরণও প্লাস্টিক নির্ভর। উদাহরণস্বরূপ, রূপার আমালগাম ফিলিং বাদ দিয়ে এখন বেশি ব্যবহৃত হয় রেজিন-ভিত্তিক সাদা প্লাস্টিক ফিলিং। এগুলো দেখতে সুন্দর ও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হলেও পরিবেশের জন্য নতুন সমস্যা তৈরি করছে।

  • প্লাস্টিক কণা নিঃসরণ: ২০২২ সালে ব্রিটিশ ডেন্টাল জার্নাল-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, এসব কম্পোজিট ফিলিং থেকে লালা ও বর্জ্যজলে সূক্ষ্ম রেজিন কণা ও রাসায়নিক নিঃসৃত হয়।
  • দাঁতচিকিৎসা প্রক্রিয়া: ফিলিং ড্রিল করা বা পালিশ করার সময় সূক্ষ্ম প্লাস্টিক ধুলো তৈরি হয়, যা সহজেই পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
  • ডেন্টাল অ্যাপ্লায়েন্স: অ্যাক্রিলিক ডেন্টার, মাউথগার্ড, ক্লিয়ার অ্যালাইনার কিংবা রিটেইনারও নিয়মিত ব্যবহারে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা ঝরায়।

অতএব, যে উপকরণ একসময় দাঁতের চিকিৎসায় বিপ্লব এনেছিল, সেগুলোর অদৃশ্য দূষণ এখন নতুন করে ভাবনার কারণ হয়ে উঠছে।

 

মানবস্বাস্থ্যে সম্ভাব্য প্রভাব

দাঁতের পণ্যের প্লাস্টিক থেকে তৈরি মাইক্রোপ্লাস্টিক শুধু পরিবেশেই নয়, মানবদেহেও প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক রেজিন-ভিত্তিক ফিলিংয়ে রয়েছে বিসফেনল এ (BPA), যা হরমোনের মতো কাজ করে এবং দেহের অন্তঃস্রাবতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

সাম্প্রতিক গবেষণা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে:

  • ২০২৪ সালের এক গবেষণায় ধমনীতে জমে থাকা প্লাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • আরও কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে প্রবেশ করা মাইক্রোপ্লাস্টিক অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং বিষাক্ত রাসায়নিক রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দিতে পারে।

এখনও গবেষণা চলছে, কিন্তু মানুষের রক্ত, ফুসফুস এমনকি গর্ভনালিতেও মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত হওয়া বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুতর করে তুলেছে।

 

টেকসই দাঁত পরিচর্যার পথ

এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজন শিল্প, চিকিৎসক ও ভোক্তাদের যৌথ উদ্যোগ।

  • শিল্প পর্যায়ে উদ্যোগ: অনেক টুথপেস্ট কোম্পানি এখন প্লাস্টিকের বদলে সিলিকা, কাদামাটি বা ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের মতো প্রাকৃতিক ঘষামাজা উপাদান ব্যবহার করছে। ইতিমধ্যেই ১৫টিরও বেশি দেশ ব্যক্তিগত পরিচর্যা পণ্যে মাইক্রোবিডস নিষিদ্ধ করেছে। অন্যদিকে, কিছু ডেন্টাল ক্লিনিক বর্জ্যজল থেকে রেজিন ধুলো আটকাতে বিশেষ ফিল্টার ব্যবহার করছে।
  • ভোক্তার করণীয়: বাঁশের টুথব্রাশ, প্রাকৃতিক তন্তুর ফ্লস, ট্যাবলেট বা পাউডার আকারের টুথপেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। প্লাস্টিক অ্যালাইনারের পরিবর্তে প্রচলিত ধাতব ব্রেস ব্যবহারও পরিবেশবান্ধব বিকল্প। এমনকি ডেন্টার বা অ্যালাইনার সাবধানে পরিষ্কার করাও প্লাস্টিক কণা ঝরা কিছুটা কমাতে পারে।

 

হাসি ও পৃথিবী দুটোই রক্ষার দায়িত্ব

দাঁতের চিকিৎসায় প্লাস্টিক নিঃসন্দেহে অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে চিকিৎসা হয়েছে নিরাপদ, সহজ ও নান্দনিক। তবে এর অদৃশ্য পরিবেশগত খরচ ও সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এখন আর উপেক্ষা করার মতো নয়।

সমুদ্র থেকে রক্তপ্রবাহ পর্যন্ত সর্বত্র যখন মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি ধরা পড়ছে, তখন দাঁতের চিকিৎসা ক্ষেত্রকেও বৈশ্বিক টেকসই আন্দোলনে যুক্ত হতে হবে। সচেতন পছন্দ ও পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমরা যেমন আমাদের হাসি রক্ষা করতে পারি, তেমনি গ্রহকেও বাঁচাতে পারি।

আরও পড়ুন