Advertisement
Doctor TV

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫


জুলাইয়ের চিকিৎসকদের গল্প যুদ্ধক্ষেত্রের চিকিৎসকদের গল্পকেও হার মানায়ঃ প্রধান উপদেষ্টা

Main Image

ছবিঃ সংগৃহীত


জুলাই গণআন্দোলনের সময় সাহসিকতা, মানবতা এবং দায়িত্ববোধের অনন্য উদাহরণ স্থাপনকারী চিকিৎসকদের ‘জুলাই অভ্যুত্থানের নায়ক’ বলে অভিহিত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সোমবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে আহত আন্দোলনকারীদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “আপনারা শুধু চিকিৎসক নন, আপনারা জাতির জন্য সাহস, সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এই সংকটময় সময়ে আপনারা যে আত্মত্যাগ ও সেবা দিয়েছেন, তা জাতি কোনো দিন ভুলবে না।”

 

বক্তব্যের শুরুতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে ইউনূস বলেন, “এটি আমাদের জাতির জন্য এক গভীর বেদনার সময়। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং যারা এখনো চিকিৎসাধীন, তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। এই দুর্ঘটনা আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দিল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অবদান কতটা অমূল্য। যখন চারপাশে শুধু ভয়, কান্না আর অনিশ্চয়তা আপনারাই তখন আশার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।”

 

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যুদ্ধকালেও আহতদের চিকিৎসা বন্ধ করা হয় না। অথচ আমরা দেখেছি চব্বিশে জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় ফ্যাসিস্ট সরকার আন্দোলনকারীদের হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। তারা শুধু গুলি চালিয়েই থেমে থাকেনি, আহতদের চিকিৎসা পাওয়াও কঠিন করে তোলে।”

 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাইয়ে আমাদের চিকিৎসকরা যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, তা অনেক ক্ষেত্রেই যুদ্ধক্ষেত্রের চিকিৎসকদেরও ছাপিয়ে গেছে। ছাত্রদের রক্তাক্ত অবস্থায় মেডিকেল কলেজে আসার পরেও তাদের ওপর হামলা হয়েছে। চিকিৎসকদের হুমকি দেওয়া হয়েছে, বাধা দেওয়া হয়েছে। অনেকেই চোখ হারিয়েছেন শুধু সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে।”

 

তিনি আরও বলেন, “আপনাদের কেউ নির্দেশ উপেক্ষা করে পেছনের গেট দিয়ে আহতদের গোপনে চিকিৎসা দিয়েছেন। হাসপাতালজুড়ে যখন গ্রেপ্তার অভিযান, তখনও আপনারা দায়িত্ব ছাড়েননি। এমনকি সিসিটিভি ফুটেজ ও রেজিস্ট্রার খাতা নিয়ে যাওয়ার ভয়াবহ পরিবেশেও আপনারা পিছু হটেননি।”

 

প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, “আপনারা রোগীদের নাম পর্যন্ত নথিভুক্ত করেননি, যাতে তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা না যায়। বিনা পারিশ্রমিকে রাতদিন গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা দিয়েছেন। কেউ গ্যারেজে, কেউ নিজের ঘরে অস্থায়ী ক্লিনিক খুলে চিকিৎসা দিয়েছেন।”

 

তিনি বলেন, “আপনারা জানতেন এটি শুধু পেশাগত দায়িত্ব নয়, এটি মানবতার প্রশ্ন। যখন রক্তের সংকট দেখা দিয়েছিল, তখন আপনারাই গোপনে রক্ত সংগ্রহ করেছেন, ওষুধের জোগান দিয়েছেন। রোগীর পরিচয় আড়াল করতে ব্যবস্থাপত্রে ভিন্ন নাম ও ভিন্ন রোগের কথা লিখেছেন। অনেক প্রাইভেট চিকিৎসক রাতের আঁধারে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে গোপনে সেবা দিয়েছেন।”

 

বক্তব্যের শেষভাগে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এই সাহসিকতা, এই মানবিকতা জাতি কোনো দিন ভুলবে না। আপনাদের পরিবারও ছিল ঝুঁকিতে। তবু আপনারা পেছনে ফেরেননি। জাতির পক্ষ থেকে আমি আপনাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”

আরও পড়ুন