Advertisement
Doctor TV

সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫


নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস পেলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ চ্যালেঞ্জিং

Main Image


মা ও অপরিণত নবজাতকদের জীবন রক্ষাকারী প্রকল্প সেভিং উইমেন এন্ড প্রিমেচিউর বেবিজ বা সোয়াপ এর সমাপনী ও কন্টিজেন্সি প্ল্যানিং সংক্রান্ত আলোচনা সভায় জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে মা ও নবজাতকদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কাজ করার ফলে নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস পেলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে বর্তমানে নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জন থেকে ১২ জনে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা। যদিও এই প্রকল্পের কার্যক্রমসহ সামগ্রিক প্রচেষ্টায় নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জনে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। 

 

সভায় জানানো হয়, নবজাতকের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো অপরিণত নবজাতকের জন্ম দান। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ লক্ষ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ১৬ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। তাই নবজাতকদের মৃত্যুহ্রাসে অপরিণত নবজাতক জন্ম প্রতিরোধে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার মতামত দেন বিশেষজ্ঞবৃন্দ। সোমবার (১৬ জুন) শহীদ ডা. মিল্টন হলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওন্যাটোলজি বিভাগ ও সেভ দ্যা চিলড্রেন আয়োজিত সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। 
 

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেভিং উইমেন এন্ড প্রিমেচিউর বেবিজ প্রকল্পকে একটি মহৎ ও সফল প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) এর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার গর্ভবতী মা ও ৮৭ হাজার নবজাতককে সেবা দেয়া হয়েছে। দেড় হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো ভায়ু বাবল সিপ্যাপ, ফ্যামিলি সেন্টারড কেয়ার, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার, নিওনেটালি লাইভ ইত্যাদিকে সফলভাবে প্রয়োগ করা, নবজাতকদের জীবন রক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া। আরো একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো এই পদ্ধতিগুলোর ব্যয় অত্যন্ত কম, ক্ষেত্র বিশেষে ব্যয় নাই বললেই চলে। যা স্বাস্থ্যখাতে গবেষণার ক্ষেত্রেও একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। 

 

তিনি আরো বলেন, নবজাতকদের পরিবার কেন্দ্রিক চিকিৎসা (ফ্যামিলি সেন্টারড কেয়ার-এফসিসি) পদ্ধতি তাদের জীবন রক্ষায় বিরাট অবদান রাখছে। এই পদ্ধতিকে বিজ্ঞানস্মত উপায়ে বৃহৎ আকারে কাজে লাগাতে পারলে সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 
 

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান। সভায় প্যানেল ডিসকাশন পর্ব সঞ্চালনা করেন বিএমইউ এর নিওন্যাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি। সোয়াপ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইসমত জাহান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সেভ দ্য চিলড্রেন এর সেক্টর ডাইরেক্টর ডা. গোলাম মোতাব্বীর। সভায় অংশগ্রহণকারী সকলেই সোয়াপ প্রকল্প এর কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং প্রকল্পের অর্জনমসূহকে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ও স্বাস্থ্য শিক্ষায় অর্ন্তভুক্ত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। 
 

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মাঝেও দেশের স্বাস্থ্যখাত এগিয়ে গেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। কোভিড এর মতো মহামারী মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। আশাবাদী থেকে সকলে মিলে চেষ্টা করলে নবজাতকের মৃত্যু হারও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কমিয়ে আনা সম্ভব। 
 

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, অপরিণত নবজাতকের যাতে জন্ম না হয় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে গবেষণায় প্রমাণিত দেশে মাতৃস্বাস্থ্য বরাবরই অবহেলিত। আর একটি বিষয় হলো মায়ের মুখের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করাও জরুরি। মাড়ি থেকে রক্ত পড়াসহ এমন সব সমস্যা রয়েছে যা মায়ের অপুষ্টিতে ভোগা, কম ওজনের নবজাতকের জন্ম দেয়া, অপরিণত নবজাতকের জন্ম দেয়ার জন্য দায়ী এটাও গবেষণায় প্রমাণিত। তাই অপরিণত নবজাতকের জন্ম প্রতিরোধে মায়ের মুখের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করাসহ মায়ের সামগ্রিক সুস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।   
 

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, অপরিণত নবজাতকের জন্ম প্রতিরোধ করা বা এই জন্ম হার অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। সন্তান নেয়ার তিন থেকে ছয় মাস পূর্বে দম্পত্তিরা চিকিৎসক এর পরামর্শ গ্রহণ করলে এক্ষেত্রে সুফল পাওয়া সম্ভব। ফলিক এসিড, কিছু ভিটামিন রয়েছে যা কম দামী ওষুধ সেগুলো চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করলে এবং গর্ভবতীকালীন নিয়মিত ফলোআপে থাকলে অপরিণত নবজাতকের জন্মদানের ঝুঁকির মাত্রা হ্রাস করা সম্ভব।  আর অপরিণত নবজাতকের জীবন রক্ষায় চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে আরো বেশি করে প্রশিক্ষণ, যথাযথ জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।     

আরও পড়ুন