Advertisement
Doctor TV

সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫


সরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু সংখ্যা বেশি : আইসিডিডিআরবির গবেষণা

Main Image


বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। আর প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ওই বছরের ১৮ মার্চ। তবে কোভিড-১৯ মহামারিকালে সরকার যে মৃত্যুর হিসাব দিয়েছে, বাস্তবে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি, এমনটাই উঠে এসেছে গবেষণায়।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত, অর্থাৎ গত সাড়ে পাঁচ বছরে দেশে করোনায় ২৯,৫০২ জন মারা গেছেন বলে রেকর্ডে আছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বারবার দাবি করেছে, সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় দেশে করোনায় মৃত্যু কম হয়েছে।

 

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় করোনাকালে মৃত্যু নিয়ে পৃথক দুটি গবেষণা করেছেন। একটি ছিল গ্রামীণ এলাকা, অন্যটি শহর এলাকা।

 

গবেষকরা বলছেন, সরকারি হিসাব মূলত হাসপাতালভিত্তিক, ফলে যাঁরা হাসপাতালে যাননি, বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছেন বা কোনো চিকিৎসাই পাননি তাঁদের মৃত্যু সরকারি পরিসংখ্যানে যুক্ত হয়নি। অনেকেই রোগ গোপন রেখেছিলেন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মরদেহ দাফন হয়েছে লোকচক্ষুর আড়ালে।

 

আইসিডিডিআরবির গবেষকদের মতে, মহামারির শুরুর দিকে পর্যাপ্ত পরীক্ষার সুবিধা না থাকায় বহু মৃত্যু নির্ধারিতভাবে ‘কোভিডজনিত’ হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা, হাসপাতালমুখী না হওয়া, চিকিৎসা না পাওয়ার ভয় ইত্যাদি কারণেও বহু মৃত্যু ঘটেছে যা পরোক্ষভাবে করোনার সঙ্গে সম্পর্কিত।

 

২০২৪ সালে জার্নাল অব গ্লোবাল হেলথে প্রকাশিত সীতাকুণ্ড এলাকার গবেষণা এবং চলতি বছর প্রকাশিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গবেষণা—উভয়টিই দেখিয়েছে, সরকারি হিসাবের চেয়ে বাস্তব মৃত্যুহার অনেক বেশি ছিল।

 

এর আগে ২০২২ সালের ১০ মার্চ, আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট-এ প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়—২০২০ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশে অতিরিক্ত মৃত্যু ঘটেছে প্রায় ৪ লাখ ১৩ হাজার জনের। যদিও এই সংখ্যাগুলো সরাসরি করোনায় মৃত্যুর হিসাব নয়, তবে মহামারিজনিত সরবরাহ সংকট, স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়া এবং অন্য রোগের চিকিৎসা ব্যাহত হওয়ার কারণে এই অতিরিক্ত মৃত্যু ঘটেছে বলে গবেষকরা মনে করেন।

 

জনস্বাস্থ্যবিদ ও রোগতত্ত্ববিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, "বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেদের গবেষণায় বলেছে, মৃত্যুর যে সংখ্যা বলা হয় সারা বিশ্বে কোভিডে মৃত্যু হয়েছে তার চেয়ে তিন গুণ বেশি। আইসিডিডিআরবির গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ, এবং তারা সত্যের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছে। পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব সরকার দেয় না, তাই সংখ্যা কম থাকে, কম দেখায়।"
 

আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা দাবি করছেন, সরকার যে সংখ্যা দিচ্ছে তা সঠিক নয়। মহামারি শুরুর সময় রোগ পরীক্ষার এবং চিকিৎসার সুযোগ কম ছিল। কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত অনেকের মৃত্যু বাড়িতে হয়েছে, অনেকের রোগ শনাক্ত হয়নি, অনেক ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়নি। অনেকে রোগ লুকিয়ে রেখেছিলেন, মৃত্যুর ঘটনাও জানাজানি হতে দেননি। অনেক ক্ষেত্রে লোকচক্ষুর অগোচরে মরদেহ কবর দেওয়া হয়েছে। সরকারি হিসাবে আছে শুধু হাসপাতালে মৃত্যুর তথ্য। যাঁরা হাসপাতালে আসেননি, যাঁরা করোনার সব ধরনের উপসর্গ নিয়ে ভুগেছেন, তাঁদের মৃত্যু সরকারি পরিসংখ্যানে নেই।

 

আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আনীকা তাসনিম হোসেন বলেন, “আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব বের করার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখেছি মহামারির আনুষঙ্গিক কারণে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেননি, মানুষ হাসপাতালে যেতে ভয় পেয়েছেন, ঠিক সময়ে চিকিৎসা নেননি। এসব কারণে মৃত্যু বেড়েছে।”


 

আরও পড়ুন