ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দেশে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এর কারণে চলতি বছর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ২০২৫ সালে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। একই সময়ে নতুন করে ১৫৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন বিভাগের বাইরে থেকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বরিশাল বিভাগের ৪ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ২৮ জনে পৌঁছেছে।
ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ও বিভাগের পরিস্থিতি
এছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯ জন, ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ৯ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১২ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১ জন, খুলনা বিভাগে ৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ১ জন রয়েছেন।
এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় ১০৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ১১ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে, ১৩ জুন ২০২৫ পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫,৫৭০ জন, যার মধ্যে ৫৫.৩% পুরুষ এবং ৪৪.৭% নারী।
মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যান
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১,০১,২১৪ জন, এবং ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৭৫ জন। গত বছর ২০২৩-এ ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১,৭০৫ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি হন ৩,২১,১৭৯ জন। এই বিশাল সংখ্যাটি দেশব্যাপী ডেঙ্গু পরিস্থিতির ব্যাপকতা ও সঙ্কটের কথা বলছে।
দেশব্যাপী পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ
ডেঙ্গু ভাইরাসের বিস্তার এবং এতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়তে থাকায় দেশের হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ এবং রোগী সেবা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন যে ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য বেশি সচেতনতা, মশা নিধন কার্যক্রম এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সচেতনতায় ঘাটতি ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
এ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর বিস্তার শহর ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু যথাযথ পদক্ষেপের অভাব এবং কিছু এলাকায় সচেতনতায় ঘাটতি নিয়ে সংশয় রয়েছে। নাগরিকদের মধ্যে মশারি ব্যবহার, বাসাবাড়িতে পচা পানি জমতে না দেওয়া, নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
ভবিষ্যত পদক্ষেপের প্রস্তাবনা
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগামী দিনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে, তীব্রতার সঙ্গে মশা নিধন কার্যক্রম চালানো, হাসপাতালগুলোর জন্য আরও উন্নত সরঞ্জাম ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় আরো তৎপর হতে হবে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনগণকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সাহায্য দিতে হবে।
এছাড়া, আগামী দিনগুলিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও সরকারি নীতিমালা জোরদার করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন