Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫


বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ মহামারি আকার ধারণ করেছে

Main Image


শুক্রবার পর্যন্ত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বরগুনায় ১,৫৫২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৬৭ জন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এ পর্যন্ত দেশে যত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার প্রায় ২৪ শতাংশ বরগুনার।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে বরগুনা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ওমর আল আরাবি। এর আগেও ডেঙ্গুতে মারা যান প্রয়াত সংসদ সদস্য জাফরুল হাসান ফরহাদের কন্যা আজমেরী মোনালিসা জেরিন।

 

স্থানীয় চিকিৎসক, স্বাস্থ্য প্রশাসক ও নাগরিকদের ভাষ্যমতে, বরগুনায় ডেঙ্গুর এমন বিস্তার ঘটার মূল কারণ হলো:

  • ব্যাপক জলাবদ্ধতা: অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যায়, পানি জমে থাকে দিনের পর দিন।
  • অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা: দীর্ঘদিন ধরে ড্রেন পরিষ্কার না করায় সেগুলো পরিণত হয়েছে মশার প্রজননস্থলে।
  • মশা নিয়ন্ত্রণে দুর্বল পদক্ষেপ: ফগিং ও কীটনাশক ছিটানো নিয়মিত হলেও পরিমাণে অপ্রতুল এবং কার্যকারিতাও প্রশ্নবিদ্ধ।
  • নাগরিক অসচেতনতা: বাসাবাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে অলিগলি—সবখানে ময়লা, পচা পানি এবং ঝোপঝাড়। অনেকেই মশারি ব্যবহার করেন না।
     

বরগুনা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোঃ রেজয়ানুর আলম জানান, "৫০টি বেড বরাদ্দ থাকলেও বর্তমানে পাঁচ শতাধিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এমনকি এমার্জেন্সিতেও রোগী ভরপুর। আমরা সক্ষমতার বাইরে গিয়েও চেষ্টা করছি।"

প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তুলনামূলকভাবে সুস্থ রোগীদের বাড়ি পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। হাসপাতালজুড়ে জায়গার অভাব এতটাই যে ‘তিল ধারণের জায়গা নেই’—বলেন এই চিকিৎসক।

বরগুনা পৌরসভার প্রশাসক অনিমেষ বিশ্বাস জানান, তারা নিয়মিত ওষুধ ছিটাচ্ছেন এবং ফগার মেশিনের মাধ্যমে পুরো শহরে মশা নিধন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। নাগরিকদের সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ অন্যান্য প্রচারমূলক কর্মসূচিও চালানো হচ্ছে।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, এই কার্যক্রম অনেকটাই লোক দেখানো এবং দেরিতে শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে শহরের ঘরে ঘরে, এমনকি গ্রামাঞ্চলেও।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, বরগুনার ডেঙ্গু পরিস্থিতির মধ্যে যদি আবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, তাহলে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। জেলার বেশিরভাগ হাসপাতালে এখনো করোনা পরীক্ষার কিট পৌঁছেনি, শুধু সচেতনতা কার্যক্রম চলছে।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় শুধু চিকিৎসা নয়, প্রয়োজন সামগ্রিক নগর ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন, মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ এবং নাগরিকদের সম্পৃক্ততা। বরগুনার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের অন্যান্য জেলা ও পৌরসভাগুলোর এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।


 

আরও পড়ুন