নবীন চিকিৎসক ডা. রিদোয়ান আশেক (অনিক) আর নেই। সোমবার দিবগত রাতে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন তিনি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের ৫৪তম ব্যাচের কৃতি শিক্ষার্থী (২০১৫-১৬ সেশন) ছিলেন তিনি।
প্রয়োত ডা. রিদোয়ান আশেক (অনিক)-কে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন ডা. ইমাম হোসাইন মামুন। তিনি লিখেছেন-
গলাটা ধরে আছে অনেকক্ষণ যাবত। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছে বারবার। এ মাঝরাতে একবার উঠছি আবার শুচ্ছি। মনটাকে কিছুতেই বুঝ দিতে পারছি না। মনে হচ্ছে আইসিইউ থেকে কোনো ভাই বলবে- 'আমরা এখনো চেষ্টা চালাচ্ছি। বার বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হচ্ছে। আমরা ট্রাই করছি ইন শা আল্লাহ, দোয়া করেন সবাই।'
কিন্তু না! আইসিইউ থেকে মেসেজ এলো- আমাদের ভাই রিদোয়ান আর আমাদের মাঝে নেই! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
ক্যাম্পাসে রিদোয়ান আমাদের দু'বছরের ছোট। কখনো আমাদের ব্যাচমেট কাউকে বলতে শুনিনি সে কাউকে কষ্ট দিয়ে কোনো কথা বলেছে। দেখা হলে সালাম দিয়ে বাচ্চা ছেলেদের মতো একটা হাসি দিতো।
এইতো কিছুদিন আগে একটা চাকরির সাক্ষাৎকারে গিয়েছিলাম। আমার যেতে একটু লেইট হয়ে গেলো। তাড়াহুড়ার মাঝে গিয়ে ব্যাগটা রেখে ইনফর্ম করতে যাবো আমি এসেছি। আমাকে দূর থেকে দেখেই একটা ছেলে দাঁড়িয়ে গেলো। রিদোয়ান তার স্বভাবসুলভ হাসিমাখা মুখে সালাম দিয়ে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি একটু তাড়াহুড়ায় ব্যাগ রাখছিলাম চেয়ারে। ভাবলাম ব্যাগটা রেখে তার সাথে মোলাকাত করব। এর আগেই সে বললো- ভাই কি আমাদের ভুলে গেলেন?
ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। বললাম- নারে ভাই। সব কিছুর প্রেশারে আউলায়ে গেলাম একটু। তোমাদের ভোলা যায়?
এখনো ক্যাম্পাসের কথা মনে উঠলেই যে ছোট ভাইদের কথা মনে উঠে রেদোয়ান অন্যতম।
২০১৮ সালে একটা বই লিখেছিলাম। রিদোয়ান আমার বইটা আগে আগে কিনে নিয়ে পুরোটা পড়ে একটা রিভিউ লিখলো ফেসবুকে। ওটাই ছিলো আমার বই নিয়ে প্রথম রিভিউ। ওই রিভিউর পর বলতে গেলে হুড়মুড় করে বই বিক্রি হওয়া শুরু হলো। রিদোয়ান নিজ থেকে বইটা কিনে রিভিউ লিখেছিলো। তাকে কিছু বলিওনি আমি। এতটা সরল ও নিঃস্বার্থ মনের ছেলে ছিলো। এই ছেলের লেখার হাত আর চিন্তাশক্তি যে কতটা ভালো ছিলো সেটা হয়তো সে নিজেও জানতো না। প্রকৃতি ও সাহিত্যপ্রেমী ছিলো বলেই হয়তো তার ফেসবুক আইডির নাম রেখেছিলো 'রিদোয়ান আরণ্যক'।
সর্বশেষ ৪৬তম বিসিএস প্রিলি পাশের পর বলেছিলো- 'ভাই দোয়া করবেন, দুজনেই রিটেনের প্রিপারেশন নিচ্ছি।' দুজন বলতে সে এবং তার স্ত্রী।
আর কয়েকদিন পরই তার রিটেন পরীক্ষা। আর আজ সে দুনিয়াতে নেই। দুনিয়ায় হিসেব এতটাই আনপ্রেডিক্টেবল!
এইতো তিন দিন আগেও সে ফিলিস্তিন, রাজনীতি এসব নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার দিচ্ছিলো। আজ আমরা তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছি। তার কথা মনে উঠলেই ডুকরে ডুকরে কাঁদছি।
কিসের এতো মোহ, কিসের এত ডিগ্রি, কিসের এত হতাশা? সব শূন্য। মানুষটা না থাকলে তার সকল অর্জন অনর্থক। দিনশেষে ডিগ্রি, টাকা পয়সা এগুলো কিছুই না। এই রক্ত মাংসের মানুষটার উপস্থিতিই সব। তার স্ত্রী, বাবা, মা, ভাই, বোন কেউ কি তার সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে তার শূন্যতা দূর করতে পারবে? পারবে না।
আল্লাহ, তুমি আমাদের ভাইটাকে মাফ করে দিও। তার ভালো কাজগুলোকে কবুল করে নিও। তার পরিবারের জন্য তুমিই যথেষ্ট। তুমি তার পরিবারটাকে তোমার রহমতের ছায়ায় রেখো।
আরও পড়ুন