Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫


পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্যবিধি পণ্য থেকে বঞ্চিত বাংলাদেশের তিন চতুর্থাংশ নারী

Main Image

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ পরিচালিত গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়


বাংলাদেশের তিন চতুর্থাংশ নারী পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্যবিধি পণ্য থেকে বঞ্চিত। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ পরিচালিত গবেষণার ফলাফল ও পর্যালোচনায় এসব তথ্য জানানো হয়। গবেষণায় নিম্ন আয়ের নারী এবং মেয়েদের জন্য উল্লেখযোগ্য অসুবিধাগুলো তুলে ধরা হয়। 

 

দেশের ৩ জেলার নারীদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় জানা গেছে, বাংলাদেশে ৭১ শতাংশ নারী এবং মেয়ে তাদের শেষ তিনটি মাসিকে অন্তত একবার স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেছেন। এদের অনেক বলেছেন, তারা বাইরে যাওয়ার সময় প্যাড ব্যবহার করলেও ঘরে থাকার সময় কাপড় ব্যবহার করেন, কারণ স্যানিটারি প্যাডের উচ্চমূল্যের কারণে এটি অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা স্যানিটারি পণ্যের উচ্চ খরচের কারণে এখনও মাসিকের সময় কাপড় ব্যবহার করেন।

 

গবেষণাটি আরও দেখিয়েছে, বিকল্প মাসিক ব্যবস্থাপনা পণ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। মাত্র ২৭ শতাংশ মহিলা পুনঃব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি প্যাড সম্পর্কে জানেন এবং ১৩ শতাংশ মেনস্ট্রুয়াল কাপ সম্পর্কে জানেন। কিন্তু এই বিকল্প পণ্যের ব্যবহার খুব কম, যেখানে সচেতনতার অভাব, উচ্চ খরচ এবং সীমিত প্রাপ্যতা প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে।

 

এছাড়াও সরকারের সহায়ক নীতিমালার অভাব এবং এই শিল্পে বিনিয়োগের অভাব, এই বিকল্প পণ্যগুলির পণ্যের বাজার বৃদ্ধির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। কাঁচামালের অভাব, আমদানি সীমাবদ্ধতা এবং স্থানীয় উৎপাদনের সীমিত সক্ষমতার কারণে সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন আরও কঠিন হচ্ছে।

 

গবেষণায় দেখা যায়, কুসংস্কার এবং অপর্যাপ্ত অবকাঠামো মহিলাদের জন্য মাসিক পণ্য পাওয়া আরও কঠিন করে তোলে। ৭৭ শতাংশ নারী সামাজিক নিয়মকানুন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং স্কুল ও কর্মস্থলে সঠিক সুবিধার অভাবের কারণে এমএইচএম পণ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। এছাড়াও, স্যানিটারি প্যাডের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে পরিবেশগত উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে। অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির কারণে পরিবেশের ক্ষতি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

 

এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য, গবেষণা রিপোর্টে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। নীতিনির্ধারকদের স্যানিটারি পণ্যের দাম কমানো এবং ভর্তুকি বৃদ্ধি করা উচিত যাতে বিকল্প পণ্য সবার জন্য সাশ্রয়ী হয়। পরিবেশবান্ধব পুনঃব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি পণ্যের প্রসারের জন্য আরও প্রচারণা চালানো দরকার, পাশাপাশি তাদের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষামূলক প্রচারণা চালানো উচিত। স্কুল এবং কর্মস্থলে, মাসিক স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার জন্য নিরাপদ স্থান তৈরি করা অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এছাড়াও, সমাজ-ভিত্তিক প্রোগ্রামে পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যাতে মাসিক সংক্রান্ত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়।

 

অনুষ্ঠানে ‘ওয়াটারএইড বাংলাদেশ’ সরকার, এনজিও, বেসরকারি খাত এবং স্থানীয় কমিউনিটির একত্রিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশে প্রতিটি নারী এবং মেয়ের জন্য নিরাপদ, সাশ্রয়ী, এবং পরিবেশবান্ধব মাসিক পণ্য নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন