Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


নারীর ভয়ংকর রোগ ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার

Main Image

নারীর ভয়ংকর রোগ ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার (ইনসেটে ডা. মো. তৌছিফুর রহমান)


আজ ৮ই মে (বুধবার), বিশ্ব ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার দিবস। সচেতনতা বাড়াতে  এই ক্যান্সার সম্পর্কে আমাদের কিছু কথা জেনে রাখা দরকার।

প্রাদুর্ভাব কেমন?

নারী শরীরে সবচেয়ে ভয়ংকর ক্যান্সারের নাম ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার। নারী জননাজ্ঞের ক্যান্সারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্বব্যাপী ৮ম সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৩০০ নারী ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে মারা যান।

কয়েক ধরনের ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার রয়েছে। কিছু ক্যান্সার যা অল্প বয়সে হয়ে থাকে। আবার কিছু ক্যান্সার রয়েছে যেগুলো মেনোপজের পরে হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ ডিম্বাশয় বা ওভারিয়ান ক্যান্সারই মাসিক বন্ধ হবার পর হয় এবং এগুলোকে এপিথেলিয়াল ওভারিয়ান ক্যান্সার বলে।

সাধারণত ৮৫-৯০ ভাগ ওভারিয়ান ক্যান্সারই এই ধরনের হয়ে থাকে। ৫০-৭৫ বছর বয়সী নারীদের মধ্যেই এটা বেশি হয়ে থাকে।

কারা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন?

১. শিল্পায়ন সমৃদ্ধ অঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি।

২. BRCA1 ও BRCA2 মিউটেশন, HNPCC জীন মিউটেশন।

৩. স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে।

৪. কারও শরীরে জরায়ু বা স্তন ক্যান্সার থেকে থাকলে।

৫. যে নারী সন্তান গর্ভধারণ বা জন্মদান করেননি।

৬. যারা ওভ্যুলেশন ইনডিউসিং মেডিসিন সেবন করেন।

৭. স্থুলতা ও বন্ধ্যাত্ব রয়েছে এমন নারী।

৮. অল্পবয়সে মাসিক শুরু ও বেশি বয়সে মাসিক বন্ধ হলে। প্রথম সন্তান ৩৫ এর অধিক বয়সে জন্ম দিলে।

৯. অতিরিক্ত পরিমান শর্করা, তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার খেলে।

লক্ষণসমূহ কি কি?

প্রাথমিক অবস্থায়ঃ সাধারণত লক্ষণ থাকে না। হঠাৎ করে কিছু লক্ষণ শুরু হতে পারে যা সহজে সারতে চায় না। যেমনঃ

● পেট ফেপে যাওয়া

● পেট ব্যাথা

● খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া

● পেট অল্পতেই ভরে গেছে মনে হওয়া

● ঘন ঘন প্রসাব হওয়া

● প্রসাব ধরে রাখতে না পারা।

অগ্রবর্তী অবস্থায়ঃ

● . পেটে অস্বস্তি, পেট ফেপে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য

● . অনিয়মিত মাসিক, মাসিকের রাস্তা দিয়ে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ

● . পেটে পানি আসা,পেটে চাকা অনুভুত হওয়া

● . শ্বাসকষ্ট হওয়া

● . তীব্র পেট ব্যাথা আকস্মিকভাবে

● . কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়া

● . প্রসাব বন্ধ হয়ে যাওয়া।

কিভাবে সনাক্ত করা যাবে?

উপরোক্ত লক্ষণগুলো থাকলে অতিসত্বর একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। ডাক্তার তখন রোগের ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা ও অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত করবেন ক্যান্সার কিনা?

১. টিউমারের মার্কার CEA, CA19-9, CA125

২. আল্ট্রা সনোগ্রাফী

৩. সিটিস্ক্যান

৪. ল্যাপারোটোমি ও বায়োপসি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি নির্ণয় করা যায়।

৫. ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারের ক্ষেত্রে Whole body Bone Scan, CT Scan, PET CT scan পরীক্ষা করা হয়।

চিকিৎসা পদ্ধতি কি?

● সার্জারী
● কেমোথেরাপী
● টার্গেটেড থেরাপী
● ইমিউনোথেরাপী
● হরমোনথেরাপী অন্যতম।

বর্তমানে এই ক্যান্সারের সকল চিকিৎসা বাংলাদেশেই রয়েছে। এইজন্য দেশের বাইরে যাওয়ার দরকার নেই।

ফলাফলঃ

চিকিৎসার মাধ্যমে পাঁচ বছর ভালো থাকার সম্ভাবনা-সীমিত অবস্থায় - ৯৩%
স্থানীয়ভাবে ছড়ালে – ৭৫%
দূরবর্তী অংশে ছড়ালে - ৩১%

(সূত্রঃ American Cancer Society)

কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

যারা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন নারীদের জন্য প্রতিরোধের উপায় হলোঃ নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।

কিছু পরীক্ষা ডাক্তারের পরামর্শমত নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর করা।
কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে এর প্রতিরোধ করার প্রয়োজন হতে পারে।
এই ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো বার বার ফিরে আসার প্রবণতা। এজন্য চিকিৎসা সম্পন্ন করার পরও নিয়মিত চিকিৎসকের নিকট ফলোআপ করতে হবে।

লিখেছেনঃ

টিউমার ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
ডা. মো. তৌছিফুর রহমান
এমবিবিএস (শসোমেক), সিসিডি (বারডেম), এমডি (অনকোলজি)
সহকারী অধ্যাপক ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ, বগুড়া।
চেম্বারঃ ইবনে সিনা কনসালটেশন সেন্টার, কানজগাড়ী, বগুড়া ও সনো কনসালটেশন সেন্টার, সনো টাওয়ার-২, কুষ্টিয়া।

আরও পড়ুন