বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগের পক্ষ থেকে আজ ১৭ এপ্রিল সকাল ১১টায় র্যালি ও সকাল ১১.৩০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়
সারা বিশ্বের মত আজ রোববার (১৭ এপ্রিল) বাংলাদেশেও উদযাপিত হয়েছে বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস। হিমোফিলিয়া সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই প্রতি বছর এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ-সকলের নাগালে আসুক বিশ্বমানের সেবা।
বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগের পক্ষ থেকে আজ ১৭ এপ্রিল সকাল ১১টায় র্যালি ও সকাল ১১.৩০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ সালাহউদ্দিন শাহ’র সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফু্িদ্দন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদ ডীন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম। হেমাটোলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. মুজাহিদা রহমান, রেসিডেন্ট ডা. তানভীর আহমেদ মেহেদী এবং ডা. মোঃ আব্দুল্লা আলমামুন সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেমাটোলজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ সালাহ উদ্দিন শাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রেসিডেন্ট ডা. মিলি দে ও ডা. কাজী ফজলুর রহমান।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে হিমোফিলিয়া সম্পর্কে রোগী, রোগীর স্বজন, সকল পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী এবং সর্বস্তরের জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরির ব্যাপারে গুরুত্বরোপ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ।
হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ সালাহউদ্দিন শাহ বলেন, হিমোফিলিয়ার সকল রোগী যাতে সহজে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক, জরুরী চিকিৎসা এবং সুলভে ফ্যাক্টর, প্লাজমা এবং অন্যান্য চিকিৎসার উপকরণ নিশ্চিত করতে হবে। মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিমের সমন্বয়ে কমপ্রিহেনসিভ হিমোফিলিয়া চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনসহ হিমোফিলিয়া চিকিৎসার সর্বাধুনিক সুবিধাদি সহজলভ্য করার ব্যাপারে সরকারি বেসরকারী সকল পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, হিমোফিলিয়া রোগে শরীরে আঘাত বা কেটে গেলে রক্ত জমাট বাধা প্রলম্বিত হয়। রোগের তীব্রতা বেশি হলে আঘাত ছাড়াই রক্তপাত হতে পারে এবং অস্থিসন্ধি বা গিরায় বা মাংসপেশীতে বারবার রক্ত ক্ষরণ হতে পারে। বারবার রক্তক্ষরণের ফলে ধীরে ধীরে গিরায় ক্ষয় এবং বিকৃতি দেখা দিতে পারে। এছাড়াও স্পর্শকাতর অংশে যেমন মস্তিঙ্ক, খাদ্যনালী, মেরুদন্ড) রক্তক্ষরণ হলে জীবন বিনাশের বা স্থায়ী অক্ষমতার ঝুঁকি তৈরি হয়। হিমোফিলিয়া প্রধানত বংশগত রোগ। সাধারণত পুরুষরাই এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং নারীরা রোগের বাহক হিসেবে কাজ করেন। বিশেষ ক্ষেত্রে নারীরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রে জন্মগত ভাবে না থাকলেও অন্য রোগের কারণে হিমোফিলিয়া রোগ দেখা দিতে পারে।
বিশ্বহিমোফিলিয়া ফেডারেশন এর বার্ষিক সার্ভে ২০২০ এর তথ্য মতে প্রক্ষেপণ করা হয় বিশ্ব প্রতি লক্ষ নবজাতক পুরুষ শিশুদের মধ্যে ২৪.৬ জন হিমোফিলিয়া এ এবং ৫ জন হিমোফিলিয়া বি রোগে আক্রান্ত, যার মধ্যে ৯.৫ জন হিমোফিলিয়া এ এবং ১.৫ জন হিমোফিলিয়া বি তে আক্রান্ত শিশুরা তীব্র মাত্রার রোগে আক্রান্ত।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ২২০০ এর ও বেশি হিমোফিলিয়া রোগী রেজিস্টার্ড হয়েছেন। তবে ধারণা করা হয় প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। হিমোফিলিয়া রোগীদের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য থাকে ফ্যাক্টর প্রদানের মাধ্যমে রক্তপাত দ্রুত বন্ধ করা এবং তীব্র রোগীদের ক্ষেত্রে যাতে রক্তপাত শুরু না হয় সে জন্য নিয়মিত ফ্যাক্টর প্রদানের ব্যবস্থা করা। হিমোফিলিয়া ট্রিটমেন্ট সেন্টার (এইচটিসি) এর মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া। গিরা ক্ষয় বা বিকৃত হয়ে গেলে ফিজিক্যাল থেরাপি বা সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি এ ধরণের রোগে আক্রান্ত রোগীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে। এদেশে রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাক্টর এর সহজলভ্যতা কম এবং বাজার মূল্যের কারণে অনেক দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত রোগীর পক্ষে তা কিনে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না।
আরও পড়ুন