Advertisement
Doctor TV

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


পাবনা মেডিকেলে শিক্ষার্থীরা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ভালো ফল করছে: অধ্যক্ষ

Main Image

সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ভাল ফলাফল করছেন পাবনা মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা : অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল্লাহ ইবনে আলী (বাচ্চু)


প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও নিজস্ব হাসপাতাল হয়নি, নেই পর্যাপ্ত আবাসন, রয়েছে শিক্ষক সংকট। সীমিত সুবিধাকে পূর্ণ কাজে লাগিয়ে ভালো ফলাফল করছেন পাবনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি ডক্টর টিভি অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল্লাহ ইবনে আলী (বাচ্চু)।

তিনি জানান, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রফেশনাল পরীক্ষায় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করছেন। ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় প্রথম স্থানসহ ঈর্ষনীয় সাফল্য পেয়েছেন তারা।

এ ছাড়া পাবনা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর অনেকেই মেডিকেল শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। কেউ কেউ এমডি, এমএস ও এফসিপিএসহ নানা কৃতিত্বপূর্ণ সফলতা অর্জন করেছেন। সেই সঙ্গে বিসিএসসহ প্রতিযোগিতামূলক চাকরিতেও সফল হয়েছেন। 

২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজটির শুরুতে ফিজিওলজির শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ডা. ওবায়দুল্লাহ ইবনে আলী (বাচ্চু)। সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পছন্দ করেন এই পরিশ্রমী শিক্ষক। পরবর্তীতে বদলি হয়ে যান রাজশাহী মেডিকেলে। দীর্ঘদিন পর পাবনা মেডিকেলে ফিরেন, অধ্যক্ষ হয়ে। 

তিনি জানান, মেডিকেল কলেজটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। প্র্যাকটিক্যাল করার জন্য ল্যাব রয়েছে। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসও হচ্ছে। কিন্তু বড় অন্তরায় রয়ে গেছে, হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে। শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নি করতে প্রায় ৬ কিলোমিটার ভাঙাচোরা রাস্তা পাড়ি দিয়ে যেতে হয় সদর হাসপাতালে, যা খুবই বিড়ম্বনার। সেখানে যথেষ্ট সংখ্যক রোগী আছেন। কিন্তু দূরবর্তী হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় অপচয় হচ্ছে।

অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল্লাহ ইবনে আলীর (বাচ্চু) মতে, দীর্ঘদিন হাসপাতাল নির্মাণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া ছাড়াও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পাবনার মানুষ। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতিনিয়ত ঢাকা বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে তাদের। পাবনা মেডিকেল কলেজে দ্রুত হাসপাতাল করার মাধ্যমে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

আবাসন সুবিধা
মেডিকেলে অধ্যয়নরত ছেলেদের জন্য একাডেমিক ভবন থেকে অদূরে দুইতলা একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে ছাত্রাবাসটির নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ছাত্রাবাস।

মেয়েদের জন্য একাডেমিক ভবনের বিপরীত পাশে তিনতলা ছাত্রীনিবাস রয়েছে। তবে উভয় হোস্টেলেই অতিরিক্ত শিক্ষার্থী থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। গাদাগাদি করে থাকার কারণে মান-সম্মত পড়ালেখার পরিবেশে বিঘ্ন ঘটছে। অবিলম্বে ৩৩০ শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত হোস্টেল সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন অধ্যক্ষ।

ইন্টার্নদের আবাসন
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য রয়েছে পাবনা সদর হাসপাতাল সংলগ্ন ৪টি ভবন। এর মধ্যে ৩টি ভবন তিনতলা ও একটি ভবন একতলা। একতলা ভবনটি মূলত হাসপাতাল পরিচালকের জন্য। তবে বর্তমানে তা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিবাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

অন্যান্য
পাবনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অরাজনৈতিক সংগঠন- সন্ধানী, মেডিসিন ক্লাব ও রোটারাক্ট ক্লাবের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান।

অধ্যক্ষ জানান, বর্তমানে প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষক রয়েছেন। পড়ালেখায় কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। শুরুতে কলেজটিতে প্রতি ব্যাচে ৫০ শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি ছিল। সরকারের আদেশে বর্তমানে ৭০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়নি। ৫০ জনের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়েই চালানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

মেডিকেল কলেজে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর নিয়োগ হয়নি। এখন পর্যন্ত আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে। অচিরেই জনবল ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, পাবনা জেলা শহরের হেমায়েতপুর এলাকার কাশিপুর হাটের অদূরে পাবনা মানসিক হাসপাতালের পাশেই পাবনা মেডিকেল কলেজের অবস্থান। বাংলাদেশ সরকারের নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা অনুযায়ী ২০০৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পাবনা মানসিক হাসপাতালের পেছনে অডিটরিয়াম এবং সংলগ্ন আরেকটি কক্ষে প্রশাসনিকভাবে পাবনা মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়।

একই বছর ১৮ নভেম্বর প্রথম ব্যাচে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে মেডিকেল কলেজটি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি সরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এটি ৫ বছর মেয়াদি এমবিবিএস কোর্স পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া এখানে চিকিৎসাবিদ্যা-সংক্রান্ত নানা গবেষণার সুযোগ রয়েছে। 

২০০৯ সালে মানসিক হাসপাতালের উল্টোপাশে ৩০ একর জমির ওপর নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হয়। ২০১৪ সালে ৬তলা প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়। বর্তমানে ৫০০ শয্যার পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, মাটি পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। যে কারণে ৬ কিলোমিটার দূরবর্তী  ২৫০ শয্যার পাবনা সদর হাসপাতালে গিয়ে ইন্টার্নশিপ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। আশার কথা হলো- ২০১৯ সালে পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ওবায়দল্লাহ ইবনে আলী বলেন, নতুন রাষ্ট্রপতি যেহেতু পাবনার কৃতিসন্তান। এ কারণে আমরা আশা করছি, পাবনা মেডিকেলের সব ধরনের সমস্যা অচিরেই দূর হবে। এখানকার প্রয়োজনীয় উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি আদর্শ মেডিকেল শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থান করে নেবে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

আরও পড়ুন